বন্ধু তুমি শত্রুও তুমি
বন্ধু তুমি শত্রুও তুমি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে এ চিরন্তন প্রবাদটি নির্মম হয়ে দেখা দিয়েছে। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদেরের বন্ধুত্ব চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। সালাহউদ্দিন যখন আবাহনীর ফুটবলার, কাদের তখন আবাহনীর ম্যানেজার। খেলা ছাড়ার পরেও দু’জনের সম্পর্ক ছিল অটুট। কাদের আবাহনী ছেড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া গড়লে সালাউদ্দিনও কোচ হিসেবে যোগ দেন। সালাউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাকে ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন করিয়ে ফুটবল থেকে ১০ বছর বিচ্ছিন্ন থাকেন। কাদেরও ফুটবল থেকে দূরে ছিলেন অনেক দিন। ২০০৮ সালে সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি হলে ২০১০ সালে শেখ জামালকে প্রিমিয়ারে খেলার সুযোগ করে দেন বাফুফের সভাপতি।
কাদের-সালাউদ্দিনের বন্ধুত্বের রসায়ন বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু বাফুফের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন দু’জন দুই মেরুতে। কাদের নিজে সরাসরি বাফুফে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও সালাউদ্দিনবিরোধী ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেলের মূল হর্তাকর্তা। স্বতন্ত্র সভাপতি পদপ্রার্থী ও আবাহনীর পরিচালক গোলাম রব্বানী হেলালের সঙ্গে সালাউদ্দিনের সম্পর্ক ১৯৭৪ সাল থেকে। এখন সেই হেলাল সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু তাই নয় ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটন এমপির সঙ্গে হেলালের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। বাফুফের নির্বাচনে তারাই এখন নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী। সাবেক তারকা ফুটবলার নওশের উজ্জামান, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, বাদল রায়, খুরশিদ আলম বাবুল, আবদুল গাফফার, শেখ মো. আসলাম, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, কায়সার হামিদ, সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির, সত্যজিৎ দাস রুপু, ইকবাল হোসেন, বিজন বড়ুয়া, অমিত খান শুভ্র, সাইফুর রহমান মনিরা পড়েছেন একই বিড়ম্বনায়। শুধু তাই নয়, আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, নজিব আহমেদ, কাজী নাবিল আহমেদ, শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, ফজলুর রহমান বাবুল, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি,
আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স, কামরুন নাহার ডানারাও নেই স্বস্তিতে। আবাহনীর চুন্নু ও মোহামেডানের বাদল রায় ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ ঘরানার এই দুই ফুটবলার এখন সহ-সভাপতি পদে নিজেরাই প্রতিদ্বন্দ্বী। আওয়ামী লীগের দুই এমপি ঢাকা আবাহনীর পরিচালক কাজী নাবিল আহমেদ ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব শামসুল হক চৌধুরী এবং যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ব্রাদার্সের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সহ-সভাপতি পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বিসিবির পরিচালক নজিব আহমেদ, মোহামেডানের সাবেক খেলোয়াড় ও আওয়ামী লীগ নেতা খুরশিদ আলম বাবুল, আরামবাগের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মুমিনুল হক সাঈদ। ক্রীড়াঙ্গণে আওয়ামীপন্থী সংগঠকদের সংগঠন সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার। এ সংগঠনের অন্যতম রূপকার হারুনুর রশিদ, ফজলুর রহমান বাবুল,
শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, সত্যজিৎ দাস রুপুদের প্রতিপক্ষ প্যানেলে যোগ দিয়েছেন তাদের ঘরানারই আবদুল গাফফার, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, ইমতিয়াজ আহমেদ জনিরা। মোহামেডানের কামরুন নাহার ডানা, কায়সার হামিদ, সাব্বির, প্রিন্সরাও আজ বাঁচাও ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত। বাফুফের নির্বাচন মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আরও অনেককেই। বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়ালকে প্যানেলে রাখেনি সম্মিলিত পরিষদ। অথচ গত চার বছর কাজী নাবিলের নেতৃত্বে জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন তাবিথ। সেই তাবিথই এখন নাবিলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। ঢাকা মহানগরী লীগ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ মারুফ হাসান সফল হলেও সম্মিলিত পরিষদ তাকে রাখেনি। বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান সহ-সভাপতি পদে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে বাফুফের নির্বাচন ক্রীড়াঙ্গনে নানা মেরুকরণের জন্ম দিয়েছে।

No comments