ওবামা কেন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে?

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়া (ব্রিটেন+এক্সিট = ব্রেক্সিট) ঠেকাতে এবার প্রকাশ্যে দালালি শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুক্রবার লন্ডন সফরকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ওকালতি করেছেন। টেলিগ্রাফ পত্রিকায় উপ-সম্পাদকীয় লিখে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছেন, ইউরোপে থাকা ব্রিটেনের নিজের স্বার্থে কতটা জরুরি। ওবামার এসব কার্যকলাপ যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ‘নাক গলানো’ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। সমালোচকরা বলছেন, ব্রিটেন ইউরোপে থাকবে কি থাকবে না, সেটা সম্পূর্ণ ব্রিটিশদের ব্যাপার। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ভোট শেখানোর জন্য ওবামাকে নিয়োগ করা হয়নি। কিন্তু ওবামা কেন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন? বিশ্লেষকরা বলছেন, ইইউ ত্যাগ করলে ব্রিটেনের নিজের যতটা না ক্ষতি, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাজ্য ও ইইউকে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তার নিজের স্বার্থে ‘ব্যবহার’ করে আসছে- তা এখন হুমকির মুখে পড়বে। দি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপের মধ্যে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা বাজেট সবচেয়ে বেশি।
এই দেশের আছে বিদেশে মোতায়েনযোগ্য বিশাল সেনাবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তির কারণে এই সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপের সংঘাত রোধ, মধ্যপ্রাচ্য লুটপাট কিংবা এশিয়ায় দখলদারির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সবসময় নিজের সেনাবাহিনী প্রেরণ করা লাগে না। ন্যাটোর মাধ্যমে অনেক কাজই হাসিল করতে পারে দেশটি। মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়াকে দমিয়ে রাখার যন্ত্রও এই ন্যাটো। ইউক্রেনসহ এশিয়ায় রাশিয়ার প্রভাব ঠেকাতে মস্কোর ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপ করা হয়, তার মূল শক্তি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এদের সম্মিলিত চাপাচাপিতে আটকে যায় রাশিয়ার উদ্ধত পদচারণা। আমেরিকার অবরোধে নয়, বরং ইইউ নিষেধাজ্ঞার কারণেই পরমাণু চুক্তিতে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় ইরান। ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে কথিত লড়াইয়ে আমেরিকার বড় সঙ্গী এই ব্রিটেন। সিএনএন জানিয়েছে, পৃথিবীর পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাজ্য।
বিশ্বের শীর্ষ ২৫০ কোম্পানির ৪০ শতাংশের হেডকোয়ার্টার লন্ডনে। লন্ডন থেকেই ইইউর বাকি ২৭ দেশে বিনা ঝামেলায় বাণিজ্য করা যায়। একটা ব্রিটিশ পাসপোর্ট থাকলেই বাকি দেশগুলোতে ভ্রমণ বা পণ্য পরিবহনে বাধা নেই। ইউরোপে মার্কিন কোম্পানিগুলোর যত পণ্য বিক্রি হয়, তার ৩০ শতাংশই ব্রিটেনে। এখন ইউরোপ থেকে ব্রিটেন বের হয়ে গেলে এই বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক পার্টনার যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দিক দিয়ে এ অবস্থান সপ্তম। ২০১৫ সালে ব্রিটেনে ৫৬০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে ব্রিটেনের মোট রফতানির ১০ শতাংশ চালান হয় যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছর পরিমাণ ছিল ৫৮০০ কোটি ডলার। ওয়াশিংটনের বৈদেশিক মুদ্রার বড় উৎস লন্ডন। ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ বিনিয়োগের পরিমাণ ৫২ হাজার কোটি ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী বিনিয়োগের ১৮ শতাংশ। এতে অন্তত ১০ লাখ মার্কিনীর কর্মসংস্থান হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৪ সালে ব্রিটেনে মার্কিন কোম্পানিগুলোর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

No comments

Powered by Blogger.