নূর হোসেনের সহযোগিতায় র‌্যাব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে by বিল্লাল হোসেন রবিন

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের আরেকটি মামলায়  সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এ মামলার আসামি নূর হোসেনসহ কারাগারে আটক ২৩ আসামি গতকাল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। সাক্ষ্য প্রদান ও জেরা চলাকালে বিবাদীপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে আদালতের পিপির দুই দফা বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় পিপিকে উদ্দেশ্য করে ওই আইনজীবী বলেন, আপনি যেভাবে বাদীর পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন এবং বাদীকে বলে দিচ্ছেন, আপনার কাঠগড়ায় দাঁড়নো উচিত। সেখানে দাঁড়িয়েই কথা বলেন। দ্বিতীয়বারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে আদালত পিপিকে বলেন, আপনি চুপ থাকেন। সাক্ষ্যপ্রদানের শেষ অংশে বিউটি আদালতকে বলেন, আমি এই নির্মম হত্যার বিচার চাই। যারা আমার বাচ্চাদের এতিম করেছে, আমাকে বিধবা বানিয়েছে, আদালত আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সাক্ষ্যপ্রদান শেষে একে একে ৩২ আসামির পক্ষের আইনজীবীরা বিউটিকে জেরা করেন। এর মধ্যে ১২ জন পলাতক আসামি রয়েছে। তবে অসমাপ্ত অবস্থায় জেরা শেষ হলে পরবর্তী তারিখ ১০ই মার্চ নির্ধারণ করেন আদালত।
বাদী সাক্ষ্যগ্রহণে আদালতকে যা বলেন: সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিচারক এজলাসে বসেন। ১০টা ৫০ মিনিটে মামলা বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেন। তিনি আদালতকে বলেন, আমার নাম সেলিনা ইসলাম বিউটি। আমার স্বামীর নাম প্রয়াত নজরুল ইসলাম। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ এবং ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন। দরপত্রের মাধ্যমে নাসিক থেকে ২নং ওয়ার্ডের মিজিমিজি এলাকায় রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কাজ পায় তানভীর নামে এক ঠিকাদার। ২০১৪ সালের ১লা জানুয়ারি নাসিক মেয়র মিজমিজি এলাকায় আসেন এবং কীভাবে রাস্তা ও ড্রেনেজ নির্মাণ হবে তার রূপরেখা নির্ধারণ করে দেন। মেয়র নজরুল ইসলামকে ওই কাজের তদারকি করার নির্দেশ দিয়ে যান। রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের স্বার্থে এলাকার কিছু বাড়িঘর ও দোকানপাট নির্মাণাধীন রাস্তার আওতাধীন হওয়ায় এলাকার লোকজন নিজ দায়িত্বে তা সরিয়ে নেয়। একই এলাকার মৃত ইছহাকের ছেলে মোবারককে মানবিক কারণে নজরুল ইসলাম ১০ হাজার টাকা দেন তার দোকান সরিয়ে নেয়ার জন্য। পরবর্তীতে সে তার দোকানের সাটার সরিয়ে না নিয়ে তার খালাতো ভাই কুখ্যাত সন্ত্রাসী নূর হোসেনকে খবর দেয়। ১লা ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টার সময় নূর হোসেন তার সহযোগী সেক্রেটারি ইয়াছিন মিয়া, আনোয়ার হোসেন, আমিনুল হক রাজু, হাসমত আলী হাসু, শাহজালাল বাদল ও তার অন্য সহযোগীদের নিয়ে ১০-১২টি হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে ৭০-৮০ জন লোক এলাকায় আসে। তাদের হাতে পিস্তল, হকিস্টিক, রামদা, লাঠি, বোমা ছিল। চৌধুরীপাড়া এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে। ২০-২৫টি দোকান ভাঙচুর করে, ১০-১২ জনকে পিটিয়ে আঘাত করে টাকা পয়সা লুট করে চলে যায়। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি নূর হোসেনের সহযোগিতায় তার খালাতো ভাই মোবারকের ছেলে আলী হোসেন আমার স্বামী নজরুল ইসলামসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-১(২)২০১৪। ২রা ফেব্রুয়ারি নূর হোসেন তার সহযোগী ইয়াছিন মিয়া, আনোয়ার হোসেন আশিক, আমিনুল হক রাজু ও শাহজালাল বাদলসহ অন্য সহযোগীরা ক্ষতিগ্রস্তদের কিছু টাকা পয়সা দিয়ে যায় এবং কৌশল অবলম্বন করে, যাতে তারা তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে। এবং প্রকাশ্যে চৌধুরীপাড়া নামক স্থানে হুমকি দিয়ে যায় আজ থেকে নজরুল ও তার পরিবার বাড়ির বাইরে বের হতে পারবে না। যদি বের হয় তবে তাদের গুলি চালিয়ে হত্যা করা হবে। যা করার আমি নূর হোসেন করবো। সেই আতঙ্কে আমার স্বামী নজরুল ইসলাম এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে সেই মিথ্যা মামলায় নজরুল ইসলাম হাইকোর্ট থেকে অস্থায়ী জামিন নেন। এবং স্থায়ী জামিনের জন্য ৮-৪-২০১৪ নারায়ণগঞ্জ আদালতে কাগজপত্র জমা দেয়। ২৭শে এপ্রিল স্থায়ী জামিনের জন্য সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে যান, এবং তার কেইস পার্টনারদের নিয়ে আদালতের কাজ শেষ করে। বেলা ১টা ৩৫ মিনিটের সময় তার কেইস পার্টনার তাজুল, লিটন, স্বপন ও ড্রাইভার জাহাঙ্গীরকে নিয়ে স্বপনের প্রাইভেটকারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। অন্য কেইস পার্টনাররা যে যার মতো সিএনজিযোগে বাসায় চলে যায়। আমার স্বামী নজরুল ইসলামকে বহনকারী প্রাইভেটকারটি আনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিটের সময় ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে পৌঁছালে সেখানে ১৫-২০ জন দুষ্কৃতকারী নিজেদের র‌্যাব পরিচয় দিয়ে আমার স্বামী নজরুল ইসলাম ও তার কেইস পার্টনারদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টেনেহিঁচড়ে দুটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আমার স্বামী নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে (০১৭৪৬-২৯৭৪৮০) আমার সর্বশেষ কথা হয়েছিল বেলা ১টা ৩০ মিনিটে। ১০-১৫ মিনিট পর আমার স্বামী ও অন্যদের মোবাইল বন্ধ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমার দেবর আবদুস সালাম ও আত্মীয়-স্বনজদের জানাই। খোঁজাখুঁজি করার জন্য আমরা বাড়ি থেকে বের হই। কোনো সন্ধান না পেয়ে ওইদিনই নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ও র‌্যাব-১১-কে অবগত করি। তারপর ২৮শে এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করি। যেহেতু নূর হোসেন প্রকাশ্যে আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, সেহেতু নূর হোসেন, ইয়াছিন মিয়া, আমিনুল হক রাজু, ইকবাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন আশিক, শাহজালাল বাদল, হাসমত আলী হাসু ও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করি। পরবর্তীতে ৩০শে এপ্রিল বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে জানতে পারি শীতলক্ষ্যা নদীর শেষ মোহনায় বন্দর থানার শান্তিরচরে আমার স্বামীসহ ৭ জনের লাশ ভেসে উঠেছে। পরবর্তীতে আমি ও আত্মীয়স্বজনরা সেখানে গিয়ে আমার স্বামীর চেহারা ও পোশাক দেখে তাকে শনাক্ত করি। একই সঙ্গে তার কেস পার্টনারদেরও শনাক্ত করি। এছাড়া বাকি ২ জন ছিল একই সঙ্গে অপহরণ হওয়া অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম। এ নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের মানুষ আন্দোলন শুরু করে। ৩০ তারিখে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ৩১ তারিখে জানাজা শেষে তাদের লাশ দাফন করি। তখন আমরা জানতে পারি নূর হোসেনের সহযোগিতায় র‌্যাব সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পরবর্তীতে কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় উচ্চ আদালতে এ ব্যাপারে একটি রিট হলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে র‌্যাব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। লাশের শরীরে যে ইট, প্লাস্টিক, দড়ি ছিল তা র‌্যাবের। তদন্তের মধ্যে বেরিয়ে আসে নূর হোসেনের সহযোগিতায় তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও রানার নেতৃত্বে খুন ও গুম করা হয়। আর নূর হোসেনের সহযোগী চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, বাশার, রহম আলী, শাজাহান, মিজানূর রহমান দিপু, সানা উল্লাহ সানা লাশ গুম ও হত্যায় সহায়তা করে। এই নির্মম হত্যার আমি যেমন বিচার চাই, তেমনি সারাদেশও চায়। এ সময় আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটির পক্ষ নিয়ে কথা বলেন এবং তথ্য ভুল হলে সুধরে দেন। বলেও দেন। এতে বিবাদী নূর হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খোকন সাহা পিপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের পিপিকে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে বলুক। পিপি বলেন, আপনারা তো দেখছেন কী হচ্ছে। এখানে বলে দেয়ার কী আছে। তখন বাদী বিউটি বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা খুনির জন্য কেন সুপারিশ করছেন?  তিনি বলেন, আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। যারা আমার বাচ্চাদের এতিম করেছে, আমাকে বিধবা বানিয়েছে, আদালতের কাছে আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ন্যায় বিচার চাই। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতে যে ২৩ আসামি উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন নূর হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (অব.) এমএম রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরজিও-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া ও বিল্লাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়ব, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্ণেন্দু বালা, ল্যান্স কর্পোরাল রহুল আমীন, এএসআই বজলুর রহমান, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নূরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সহযোগী মোস্তফা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানূর রহমান দিপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।
৩২ আসামির পক্ষে বাদীকে জেরা: বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটির সাক্ষ্য প্রদান শেষে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে জেরা শুরু হয়। প্রথমে র‌্যাব-১১-এর মেজর (বরখাস্ত) আরিফ হোসেনের পক্ষে তার আইনজীবী আব্দুর রশিদ ভুইয়া বাদী বিউটিকে জেরা করেন। তিনি প্রশ্ন করেন, এজাহারটা কী আপনি লিখেছেন? বিউটি বলেন, আমি লিখিয়েছি। থানার রাইটার দিয়ে। আমি বলেছি তিনি লিখেছেন। এজাহারে কাউকে সন্দেহ করেছেন, আবার কয়েকজনকে অজ্ঞাত রেখেছেন কেন? বিউটি বলেন, যেহেতু নূর হোসেন প্রকাশ্যে আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে তাই এজাহারে তার নাম দিয়েছি। এ সময় বিউটি আসামি নূর হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খোকন সাহার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিউটি বলেন, খোকন সাহা আপনি খুনির পক্ষে যাচ্ছেন কেন? আপনি তো আমার বাসায় গিয়ে বলেছিলেন আপনি আমার পক্ষে থাকবেন, হত্যার বিচার হবে, নানা কথা বলেছেন। তখন খোকন সাহা বলেন, এটা কোর্ট, ল্যাংগুয়েজ ঠিক করেন। আবেগের জায়গা নয়। যা প্রশ্ন করা হচ্ছে তার উত্তর দেন। অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ ভুইয়া বিউটিকে আবার প্রশ্ন করেন, ২০০০ সালের ১০ই মার্চ ধানমন্ডি থানার অ্যাডভোকেট বাবর আলী হত্যা মামলায় আপনার স্বামী নজরুল ইসলামের ফাঁসির আদেশ হয়েছিল, আপনি জানেন? বিউটি বলেন, ওই মামলা সম্পর্কে আমি জানি না। তবে পরে উচ্চ আদালত থেকে সে খালাস পেয়েছিল। আইনজীবী বলেন, আপনার ভাই শফিকুল ইসলাম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২০০৯ সালের ৮ই মার্চ জিডি করেছিল, আপনি জানেন? আপনার বাবা শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান নজরুলকে গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি করে মানববন্ধন করেছিল, আপনি জানেন? জানি না। বিভিন্ন থানায় নজরুলের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা ও ৬টি জিডি ছিল। জবাবে বিউটি বলেন, ওইগুলো রাজনৈতিক মামলা। ২০১৪ সালের ২৭শে এপ্রিল ঘটনার সময় আপনি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন? ঘটনা দেখেছেন? তখন বিউটি বলেন, যদি দেখতাম তাহলে কী খুন হতো? আইনজীবী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ১৬১ ধারায় এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় আপনি জবানবন্দি দিয়ে আমার আসামির নাম বলেননি, আরিফ হোসেন নির্দোষ, তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে। জবাবে বিউটি বলেন, এটা মিথ্যা কথা। এরপর আসামি আবু তৈয়ব ও হাবিলদার এমদাদুল হকের পক্ষে জেরায় অ্যাডভোকেট মিজানূর রহমান জানতে চান, ঘটনার সময় আপনি কোথায় ছিলেন এবং আপনার স্বামীর সঙ্গে সর্বশেষ আপনার কখন কথা হয়? জবাবে বিউটি বলেন, আমি বাসায় ছিলাম।  দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে কথা হয়। আইনজীবী জানতে চান আপনি কীভাবে জানতে পারলেন আপনার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে? জবাবে বিউটি বলেন, পাবলিকের কাছ থেকে। তাদের নাম বলেন, জবাবে বিউটি বলেন শহীদুল ইসলাম ও তার মেয়ে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামি মিজানূর রহমান দিপুর পক্ষে জেরা করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। তিনি  বলেন, আপনি যাদের সন্দেহ করেছেন সেখানে আমার মক্কেল মিজানূর রহমান দিপুর নাম ছিল না। জবাবে বিউটি বলেন, তদন্তে তার নাম এসেছে। দিপুর সঙ্গে আপনার স্বামীর কোন গোলমাল বা ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না, আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া কোনো মামলা মোকাদ্দমার বাদী ছিল? এ সময় নিশ্চুপ থাকেন বিউটি। আপনার স্বামী বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, দেবিদ্বার, ধানমন্ডি থানায় অনেক মামলা ছিল, আপনার ভাই নিরাপত্তা চেয়ে আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে জিডি করেন, আপনার বাবাও আপনার স্বামীকে গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি করে মানববন্ধন করেছিলেন, আপনি জানেন? জবাবে বিউটি বলেন আমার জানা নেই। আইনজীবী বলেন, দিপু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না, আপনি মিথ্যা সাক্ষী দিচ্ছেন। জবাবে বিউটি বলেন, মিথ্যা কথা। আসামি রুহুল আমীন ও ল্যান্স নায়েক নাছিরের পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী সুনীল মৃধা। তিনি জানতে চান, আমার আসামিদের আপনার স্বামী আগে পরে চিনতো? জবাবে বিউটি বলেন, না। এজাহারে তাদের নাম দিয়েছেন? জবাবে বিউটি বলেন, না। আইনজীবী বলেন, রুহুল আমীন ও নাছির উদ্দিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। জবাবে বিউটি বলেন, তদন্তে এসেছে। আইনজীবী বলেন, তদন্ত কর্তকর্তা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়িয়েছেন। জবাবে বিউটি বলেন, মিথ্যা কথা। নূর হোসেনের সহযোগী আলী আহাম্মদ, রহম আলী, মোর্তুজা জামান চার্চিল, আবুল বাশারের পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী আশরাফুজ্জামান। জেরার একপর্যায়ে আবারো পিপিকে উদ্দেশ্য করে প্রতিবাদ জানান অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। তখন বিচারক পিপিকে চুপ থাকতে বলেন। আইনজীবী জানতে চান আপনি এজাহারে আমার মক্কেলদের নাম দেননি। পুলিশ তাদের নাম চার্জশিটে ঢুকিয়েছে। জবাবে বিউটি বলেন, সত্য নয়, তদন্তে এসেছে। আসামি এস আই পুর্ণেন্দ্র বালার পক্ষে জেরা করেন অ্যাডভোকেট হরেন্দ্র পাল মণ্ডল। তিনি জানতে চান, আপনি আমার আসামিদের চেনেন? এজাহারে তাদের নাম দিয়েছেন? জবাবে বিউটি বলেন, না। আসামি আরজিও আরিফ হোসেনের পক্ষে জেরা করেন অ্যাডভোকেট রঞ্জিত রায়। আপনি আরিফ হোসেনকে চেনেন? জবাবে বিউটি বলেন, না। আরিফ মামলার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। জবাবে বিউটি বলেন, মিথ্যা কথা। আসামি এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিব, এএসআই ফজলুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী সুলতানুজ্জামান জানতে চান এই তিনজনকে আগে কখনো দেখেননি, চিনেননি। জবাবে বিউটি বলেন, সত্য। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। জবাবে বিউটি বলেন, এটা মিথ্যা। আসামি আল আমিন, তাজুল ইসলাম, এনামুল, বেলাল হোসেন ও সিহাব উদ্দিনের পক্ষে অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক জেরায় বলেন, এজ ফ্লো অন। পলাতক আসামি মোখলেছুর রহমান, আব্দুল আলী, মহিউদ্দিন মুন্সি ও হাজতি হীরা মিয়ার পক্ষে জেরা করেন অ্যাডভোকেট সেলিনা ইয়াছমিন। তিনি বলেন, আপনি পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছেন। জবাবে বিউটি বলেন, সত্য নয়। আসামি সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, শাজাহান, জামাল উদ্দিন ও বাহাদুল হাসানের পক্ষে আইনজীবী উম্মে হাবিবা জানতে চান, আপনার এজাহারে এই ৪ জনের নাম নেই। আপনার স্বামীর বিরুদ্ধে যে কয়টা মামলা ছিল সবগুলোর বাদী ভিন্ন। এই ৪ জন বাদী ছিল না। জবাবে বিউটি বলেন, সত্য। আসামি সানাউল্লাহ সানা, সেলিম, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নূরুজ্জামানের পক্ষে জেরা করেন অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা। তিনি জানতে চান এজাহারে তাদের নাম ছিল? জবাবে বিউটি বলেন, না। এদিকে র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, এমএম রানা ও নূর হোসেনের পক্ষে  আইনজীবীরা জেরা করেননি। ফলে আদালত এই তিনজনের পক্ষে জেরার পরবর্তী তারিখ ১০ই মার্চ ধার্য করেন।

No comments

Powered by Blogger.