স্যান্ডার্স ও ট্রাম্পের চমক লাগানো জয়

পণ্ডিতদের সব ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণ করে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স যুক্তরাষ্ট্রের জনবহুল মিশিগান অঙ্গরাজ্যে বাছাইপর্বের নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। সেখানে ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে মিসিসিপিতে আফ্রিকান-আমেরিকান অর্থাৎ কৃষ্ণাঙ্গদের একচেটিয়া ভোটে বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। এই দুই রাজ্যের প্রাইমারি নির্বাচনের পর দুই ডেমোক্র্যাট মনোনয়নপ্রার্থী স্যান্ডার্স ও হিলারির মোট ডেলিগেট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫৪৬ ও ৭৬০। এর বাইরে রয়েছে দলীয় নেতাদের ভোট। ‘সুপার ডেলিগেট’ নামে পরিচিত এসব নেতার ৪৫৮ জন হিলারিকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে স্যান্ডার্সের পক্ষে রয়েছে মাত্র ২২ জন সুপার ডেলিগেট।
হিলারি কয়েক দিন ধরে মিশিগানে ব্যাপক প্রচার অভিযানে অংশ নেন। পরিচিত নমনীয় ভাষা ছেড়ে তিনি স্যান্ডার্সের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। হিলারি যুক্তি দেখান, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বড় রকমের অর্থ সাহায্য দিয়ে অঙ্গরাজ্যটির ঐতিহ্য সেখানকার মোটরশিল্পকে প্রায় মৃত অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে তুলেছেন। হিলারি সে কাজে ওবামাকে সমর্থন করলেও স্যান্ডার্স তার বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তারপরও ডেমোক্রেটিক ভোটারদের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিনের রাজনীতিক হিলারিকে প্রত্যাখ্যান করে স্যান্ডার্সের ‘রাজনৈতিক বিপ্লবের’ প্রতিই সমর্থন দিল। মঙ্গলবারের অন্য বড় চমক ছিল মিশিগান, মিসিসিপি ও হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান দলের অগ্রগামী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চোখধাঁধানো বিজয়। মিশিগান ও মিসিসিপির জয়ের পর ট্রাম্পের বাক্সে মোট ডেলিগেটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪৬। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর টেড ক্রুজের জন্য একমাত্র সান্ত্বনা ছিল তুলনামূলকভাবে ছোট রাজ্য আইডাহোতে বড় ব্যবধানে বিজয়। সেখানে ক্রুজ ও ট্রাম্প যথাক্রমে পেয়েছেন ৪৫ দশমিক ৪ ও ২৮ শতাংশ ভোট। তবে মোট ডেলিগেটের হিসাবে ট্রাম্প অনেক এগিয়ে। ক্রুজের ডেলিগেট সংখ্যা ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় এক শ কম, মাত্র ৩৪৭। রিপাবলিকান দলের অন্য দুই প্রার্থী, মার্কো রুবিও ও গভর্নর কেইসিক এই চার রাজ্যেই পরাস্ত হয়েছেন।
ভোটের আনুপাতিক হিসাবে বিভক্ত হওয়ায় তাদের বাক্সে সংগৃহীত মোট ডেলিগেটের সংখ্যা যথাক্রমে ১৫১ ও ৫৪। এক সপ্তাহ ধরে সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিট রমনির নেতৃত্বে রিপাবলিকান নেতৃত্বের প্রবল বিরোধী প্রচারণা সত্ত্বেও বিতর্কিত ধনকুবের ট্রাম্পের এই সহজ বিজয় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। রিপাবলিকান নেতৃত্বের একাংশ এখন প্রকাশ্যে বলছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই প্রচারণা উল্টো ফল দিয়েছে। ইউএসএটুডে পত্রিকায় প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকান ভোটারদের ৩১ শতাংশ জানিয়েছে, রমনির কড়া সমালোচনার ফলে তারা বরং ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিতে বেশি আগ্রহী হয়েছে। মিশিগানের ফলাফল প্রকাশের পর ফ্লোরিডায় নিজের নির্বাচনী প্রচারণা দপ্তরে এক ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেন, একমাত্র তিনিই পারেন রিপাবলিকান দলকে একত্র করতে। এদিকে এনবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর নেওয়া এক নতুন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্প ও ক্রুজ সমানে সমান লড়ে যাচ্ছেন। এই জরিপ অনুসারে, রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে ৩০ শতাংশের সমর্থন পেয়ে শীর্ষে রয়েছেন ট্রাম্প। ২৭ শতাংশ সমর্থন নিয়ে ২ নম্বরে রয়েছেন সিনেটর টেড ক্রুজ।

No comments

Powered by Blogger.