আবদুল আলী বাগালের কীর্তিনামা by নূরুল ইসলাম মনি

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার রশিদপুর ও ফয়জাবাদ চা বাগানের কোলঘেঁষে নিভৃত এক গ্রাম সুন্দ্রাটিকি। বাহুবল সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের এ গ্রামের অধিকাংশ লোকই শ্রমজীবী। কাজ করেন চা বাগান ও লেবু বাগানে। অন্যান্য টুকটাক কাজও করেন কেউ কেউ। অবস্থাপন্ন কিছু পরিবারও রয়েছে এ গ্রামে। আলাদা কোনো বিশেষত্ব না থাকায় আশপাশের দশ গ্রাম ছাড়া সুন্দ্রাটিকির তেমন পরিচিতি ছিল না। তবে নৃশংস এক ঘটনায় দেশজুড়ে পরিচিত হয়ে উঠেছে নিভৃত এ গ্রামটি। গ্রামের একটি বিল থেকে চার শিশুর মাটিচাপা লাশ উদ্ধারের পর রাতারাতি গ্রামটি পরিচিত হয়ে উঠে দেশজুড়ে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে গ্রামটি। আলোচনায় আছেন গ্রামটির বাসিন্দা আবদুল আলী বাগাল ও তার পরিবার।
কে এই আবদুল আলী বাগাল: সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে আবদুল আলী। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে অনেক বছর আগে তিনি ফয়জাবাদ চা বাগানে  পাহারাদারের কাজ নেন। স্থানীয়ভাবে যার পরিচিতি ‘বাগাল’। দীর্ঘদিন বাগালের কাজ করায় তার নামের সঙ্গেই জুড়ে যায় বাগাল শব্দটি। এ পেশায় যুক্ত থাকার সুবাদে ইতিমধ্যে তিনি কৌশলে চা বাগানের বেশ কিছু ভূমি দখল করে ফল বাগানও প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়াও চা বাগানের গাছ পাচারে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে।
বড় বড় কীর্তিগাথাও জড়িয়ে আছে আবদুল আলীর নামের সঙ্গে। প্রায় ২৫ বছর আগে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে খুন হয়েছিলেন আবদুল জলিল নামে এক ব্যক্তি। তখন অভিযোগের আঙুল উঠেছিল আবদুল আলীর দিকেও। এর ৫ বছর পর আরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে। রশিদপুর চা বাগানের নাচঘরের পাশ থেকে উদ্ধার হয় ভাদেশ্বর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মতাচ্ছির মিয়ার ভাই মোশাহিদ মিয়ার লাশ। এ ঘটনায়ও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে আবদুল আলীর বিরুদ্ধে। অবশ্য দুটি খুনের ঘটনাতেই আপসরফার মাধ্যমে বেঁচে যান আবদুল আলী বাগাল ও সুন্দ্রাটিকির বাসিন্দারা। এ দুটো মামলা থেকে বেঁচে গেলেও জেলের গেট দিয়ে ঠিকই তাকে মাথা নিচু করে ঢুকতে হয়েছিল। প্রায় ২২ বছর পূর্বে ফয়জাবাদ হিলসে শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দা জনৈক শিপার মিয়ার একটি ফল বাগান জোরপূর্বক দখল করতে চেয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাকে কিছু দিন হাজতবাসও করতে হয়েছে।
আবদুল আলী বাগালের প্রথম স্ত্রী হালিমা বাগান দখলের ঘটনায় তার স্বামীর কিছুদিন কারাবাসের কথা স্বীকার করলেও ঘটনাটিকে সাজানোই বলেন। হালিমা বেগমের ভাষ্য, তার স্বামী আপাদমস্তক ভালো মানুষ। ‘হক কথা’ বলেন, তাই তাকে অনেকে পছন্দ করেন না।
আবদুল আলী বিয়ে করেছেন দুটো। ৭ ছেলেমেয়ের পিতা তিনি। প্রথম স্ত্রী হালিমা বেগমের ঘরেই সব সন্তানের জন্ম। দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা বেগম নিঃসন্তান। সন্তানদের মধ্যে ৫ জনই ছেলে। এরা হলো বিলাল মিয়া, জয়নাল মিয়া, ফেরদৌস মিয়া, জুয়েল মিয়া ও রুবেল মিয়া। দুই মেয়ের নাম খেলা বানু ও নাসিমা বেগম।
কম যান না আবদুল আলী বাগালের ছেলেরাও। গেল দুর্গাপূজায় বিসর্জনের আগের দিন আবদুল আলীর বাগালের এক ছেলে কিছু বখাটেসহ রশিদপুর চা বাগানে পূজানুষ্ঠানে যায়। সেখানে তাদের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন এক নারী চা শ্রমিক। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিসর্জনের পরদিন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর চালানো হয় চা শ্রমিকদের বাড়িঘরে।
৩১শে অক্টোবর স্কুলের ছাত্রীদের যৌন হয়রানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফয়জাবাদ হাইস্কুলে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার নেতৃত্বে ছিল আবদুল আলী বাগালের ছেলে ওই স্কুলের ছাত্র রুবেল মিয়া, যে চার শিশু হত্যার দায় স্বীকার করে এখন কারাগারে। রুবেল ও তার বন্ধুরা মিলে প্রায়ই ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো। এমন অভিযোগে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের শাসন করলে রুবেল ও তার সঙ্গীরা স্কুলে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়।
সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিছ আলী অভিযোগ, বছরখানেক আগে তার বাড়িতে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিল আবদুল আলীর ছেলে বিলাল মিয়া ও তার ভাতিজারা। এ ঘটনায় ইদ্রিস আলী তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।
সহযোগী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান
সুন্দ্রাটিকি গ্রামে আবদুল আলী একটি পঞ্চায়েতের প্রধান হিসেবে পরিচিত। তিনি এ পরিচয় কৌশলে বাগিয়ে নেন। তিনি এক সময় ছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েত আবদুর রউফের সহযোগী। আবদুর রউফ মারা গেলে গ্রামের রীতি অনুযায়ী ঐ পঞ্চায়েতের প্রধান হন তার ছেলে আবদুল মঈন সুমন। কিন্তু চতুর, বাকপটু ও কৌশলী আবদুল আলী বাগাল কৌশলে সুমনকে সরিয়ে এ দায়িত্ব দখল করে নেন। এ নিয়ে এখনও ওই পঞ্চায়েতের মধ্যে দ্বন্দ্ব টিকে আছে। প্রায় ৪ হাজার জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত সুন্দ্রাটিকি গ্রামে আরও ৭টি পঞ্চায়েত রয়েছে। এসব পঞ্চায়েতের নেতৃস্থানীয়রা হলেন, সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুল খালিক তালুকদার, মধু মিয়া, নূর আলী ওরফে নূরাই মিয়া, আবদুল মঈন সুমন, ফরিদ মিয়া, সেলিম আহমেদ, টেনু মিয়া, আবদুল হাই, উস্তার মিয়া, আকল মিয়া।
বিরোধ ভালোবাসেন আবদুল আলী
নানা বিষয়ে সুন্দ্রটিকি গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরুব্বিরা ঐকমত্যে পৌঁছলেও আবদুল আলী বাগাল একাই থেকে যান ভিন্ন মত ও পথে। ফলে গ্রামের নানা বিরোধ পঞ্চায়েতে শেষ হয়েও হয় না। অনেকে বিষয়ই ফের জিইয়ে উঠে। সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েতের হেফাজতে কয়েক একর সরকারি পতিত ভূমি রয়েছে। যা গোচারণ ভূমি, খেলার মাঠ ও কবরস্থান হিসেবে যুগের পর যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, উক্ত ভূমি তারা সরকারের নিয়ম মেনে লিজ নিয়েছেন। সম্প্রতি উক্ত ভূমি থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ ভূমি ১৩ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। উক্ত টাকা দিয়ে গত বছরের শেষের দিকে স্থানীয় খেলার মাঠে শিরনির আয়োজন করা হয়। ৯টি গরু ও ১০টি খাসি জবাই করে উক্ত শিরনিতে সুন্দ্রাটিকি গ্রামবাসী ছাড়াও আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন ভূঁরিভোজ করেন। এতে প্রায় ৪ হাজার লোককে আপ্যায়ন করা হয়েছিল বলে গ্রামবাসীর দাবি। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়। এ টাকার হিসাব-নিকাশ নিয়ে অন্য মুরুব্বিদের মাথা ব্যথা না থাকলেও আবদুল আলী বাগালের সন্দেহ-অবিশ্বাস ছিল। এ নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনি দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এসব বিষয় নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্য মুরুব্বিদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে আবদুল আলী বাগালের।
সর্বশেষ সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মৃত মারফত উল্লার ছেলেদের সঙ্গে রইছ উল্লার ছেলেদের সীমানা নিয়ে বিরোধ বাধে। নিজের পঞ্চায়েতের আওতায় না হওয়ার পরও এ বিরোধে নিজেকে জড়িয়ে নেন আবদুল আলী। অনেকের সন্দেহ, এই বিরোধের জের ধরেই ৪ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
উত্তাল বাহুবল, আরও একজন গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ ও বাহুবল প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চার শিশু হত্যার ঘটনায় সালেহ আহমেদ (২৭) নামে আরও এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে এলাকাবাসী। মিছিল-সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাহুবল। সূত্র জানায়, গতকাল সকাল ১০টায় স্থানীয়রা সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করে বাহুবল থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বাহুবল থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সালেহ আহমেদকে আটক করা হয়েছে। এর আগে তার ভাই বশির আহমেদকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদিকে ৪ শিশুর লাশ পাওয়ার দিন বুধবার রাতে গ্রেপ্তারকৃত আবদুল আলী বাগাল ও তার ছেলে জুয়েল মিয়াকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি সৈয়দ মোক্তাদির হোসেন জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ডিবির ওসি সৈয়দ মোক্তাদির হোসেন জানান, আবদুল আলী ও জুয়েল মিয়া পেশাদার অপরাধী। তারা কোনো তথ্য দিচ্ছে না এবং কারও নামও বলছে না। তিনি আরও জানান, সোমবার আদালতে রুবেল, বশির ও আরজুর রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আলোচিত এ ঘটনার অন্যতম নায়ক ও সিএনজি-অটোরিকশাচালক বাচ্চু মিয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বাচ্চুর পরিবার দাবি করছে, র‌্যাব তাকে নিয়ে গেছে। কিন্তু শ্রীমঙ্গলের র‌্যাব-৯-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনির হোসেন জানান, সময় হলে সবকিছুু তিনি জানাবেন। এদিকে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে নিহতদের পরিবারের লোকজন অনাহার, অনিদ্রা আর গোসল ছাড়াই দিনাতিপাত করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী প্রতিদিনই তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। তার উদ্যোগে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে একটি মেডিকেল টিম সেখানে কাজ করছে। গতকালও তিনি মেডিকেল টিম নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। নিহত ৪ শিশুর হত্যার ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে নিহতদের পরিবারে। হারানো মানিককে ফিরে না পেলেও যারা তাদের হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। শনিবার সকালে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে গেলে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে চেষ্টা করছেন লোকজন। নিহত শুভর মা পারুল বেগম বলেন, ছেলে হারাইয়াছি। সে ত আর আসবে না। এখন হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। ইসমাইলের মা আমিনা বেগম, মহিলা এমপি কেয়া চৌধুরীকে দেখে নিয়ে আসেন ইসমাইলের বই-খাতা। খাতা বের করে দেখান ইসমাইল মারা যাওয়ার আগে তার শেষ লেখাটি। খাতার একটি পাতায় ইসমাইল লেখে ‘মন’ শব্দটি। আর সুন্দর ও নির্ভুল করে লেখে তার নাম। এমপি কেয়া চৌধুরী নিহতদের এ স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি আলমারি দেয়ার ঘোষণা দেন। আমিনা বেগম আরও বলেন, ইসমাইল ভালো ছাত্র ছিল। লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগ ছিল তার। কী দোষ ছিল তার? এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন, বাহুবলের সন্তান হিসেবে তিনি লজ্জিত। দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি প্রতিদিন এলাকায় ছুটে আসছেন। বিশেষ করে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ডাক্তার এবং নার্সরা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে যেভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে সাংবাদিকদের সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শুক্রবার রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ খোন্দকারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিকালে গ্রেপ্তারকৃত আসামি রুবেল মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে। স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামে বাগাল পঞ্চায়েত এবং তালুকদার পঞ্চায়েতের বিরোধকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এক মাস আগে বাগাল ও তালুকদার পঞ্চায়েতের মধ্যে উভয় পঞ্চায়েতের সীমানায় থাকা একটি বড়ইগাছ কাটা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। পরে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করা হলেও সিএনজিচালক বাচ্চু মিয়া ও গ্রেপ্তারকৃত আরজু প্রচণ্ডভাবে সামাজিক হেয়প্রতিপন্ন হয়। এরপর থেকেই তারা পরিকল্পনা করে বাগাল পঞ্চায়েতের শিশুদের হত্যা করবে। ১২ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকালে পূর্বভাদেশ্বর গ্রামে ৪ শিশু ফুটবল খেলা দেখতে যায়। বৃষ্টির জন্য খেলা না হওয়ায় যখন শিশুরা মাঠে ঘুরাফেরা করছিল, তখন পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা বাচ্চু মিয়া তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে সিএনজি-অটোরিকশাতে উঠতে বলে। ৪ শিশু সিএনজি-অটোরিকশায় উঠলে তাদের চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে বাচ্চু মিয়ার গ্যারেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরজু, রুবেলসহ ৬ জন মিলে তাদের গলাটিপে শ্বাসরুদ্ধে হত্যা করে। হত্যার পর লাশগুলো গ্যারেজেই লুকিয়ে রাখা হয়। পরে গভীর রাতে যে স্থান থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয় সেখানেই গর্তে পুঁতে রাখা হয়।
উত্তাল বাহুবল: ৪ শিশু হত্যার ঘটনায় উত্তাল বাহুবল উপজেলা। গতকাল উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নিহতদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। শনিবার সকাল ১১টায় বাহুবল-মিরপুর সড়কে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে মিরপুর উন্নয়ন সংস্থা। একই সময় উপজেলার মিরপুর সানশাইন প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুলের শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেছে। স্কুলের শত শত শিক্ষার্থী ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ ছাড়া মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাহুবল ডিগ্রি কলেজ, ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও বাহুবলের তৌহিদী জনতা।
স্কুলে আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা
কেয়া চৌধুরীর নানা উদ্যোগ: বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে দুষ্কৃতকারীদের হাতে নিহত ৪ শিশুর পরিবারের সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক পুনর্বাসনে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছেন। প্রতিদিন তিনি ওই গ্রামে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের মানসিক সাহস জোগাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি, ইতিমধ্যে ওই পরিবারগুলোকে একটি করে সেলাই মেশিন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার প্রচেষ্টায় শুক্রবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি উপস্থিত হয়ে প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার করে অর্থ অনুদান দিয়েছেন। কেয়া চৌধুরী জানান, ওই পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সহায়তার জন্য যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.