লতিফ-মহিউদ্দিন দ্বন্দ্ব চরমে by মহিউদ্দীন জুয়েল

চট্টগ্রামে মুখোমুখি আওয়ামী লীগের এমপি এম এ লতিফ ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। এম এ লতিফের শাস্তি দাবি করে সমাবেশ  ডেকেছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এই নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বন্দর নগরীর আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে সবার সামনে। একজন আরেকজনকে নিয়ে করছেন বিষোদগার। কটূক্তি। নানা ধরনের মন্তব্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বছরের শুরুতেই তোপের মুখে পড়েছেন চট্টগ্রামের ১১ আসনের এমপি এমএ লতিফ। গত ৩০শে জানুয়ারি শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে তিনি বেশকিছু ফেস্টুন টাঙিয়েছিলেন নগরীতে। সেখানে নিজের শরীরে বঙ্গবন্ধুর মাথার অংশ বসানোর ঘটনায় ফেঁসে যান লতিফ। এরপর তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য হাজির করেন ওই ছবির ডিজাইনার ও নকশাকারককে। তারা জানিয়েছিলেন তাড়াহুড়ো করে এই কাজটি করেছেন। এখানে এমপি’র কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী এই ঘটনায় দলীয় এমপি লতিফের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, দলীয় হাইকমান্ডের কাছে এই বিষয়ে নালিশ করা হয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে লতিফের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে গত এক সপ্তাহের মধ্যে। এমপি লতিফ এই ঘটনায় শুরুতে বলেছেন, একটি চক্র যারা দলের ভেতর লুকিয়ে রয়েছেন তারা তার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এমন কুৎসা রটাচ্ছেন। এসব লোকজন শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছাতে না পেরে তার পেছনে লেগেছে। ষড়যন্ত্র করছে। এসব কথায় তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ইঙ্গিত করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এমপি লতিফ ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বন্দ্ব দিন দিন আরও প্রকট হয়ে উঠছে। শোনা যাচ্ছে মহিউদ্দিনের সমর্থনে লতিফের বিরুদ্ধে আরও বেশকিছু মামলা দায়ের করা হবে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে লতিফের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমাবেশ করার ঘোষণায় এই দ্বন্দ্ব আবারও প্রকট হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির অপরাধে এমপি লতিফের বিচারের দাবিতে আগামী শনিবার নগরের লালদীঘি মাঠে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তিনি। সেখানে ‘নাগরিক মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি নিয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ছাড়াও তার সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেনও থাকবেন। কর্মসূচিতে সবাইকে থাকার আহ্বান জানান মহিউদ্দিন  চৌধুরী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি যে বিকৃত করেছে তাকে যুদ্ধাপরাধীদের মতো সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা কুখ্যাত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাদের নির্মূল করতে হবে। মহিউদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, কেবল আমি নই। আমার সঙ্গে এই ঘটনার বিচার দাবিতে থাকবেন ডেপুটি অ্যাটর্নি  জেনারেল কামাল উদ্দিন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুনীল সরকার, খোরশেদ আলম সুজনসহ আরও অনেকে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। অন্যদিকে জানতে চাইলে এমপি এমএ লতিফ বলেন, কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। এই ঘটনা নেত্রীর সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা আমি মেনে নেবো। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, এমপি লতিফ ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বন্দ্ব নতুন নয়। নানা সময়ে নানা আলোচনায় তারা একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে মূল বিষয়টি শুরু হয় চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে। যার প্রভাব পড়ে রাজনীতিতে। বন্দরের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে দুই নেতা ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। সেই সময় এমপি লতিফ মহিউদ্দিন চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বহদ্দারহাটের মোড় থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী বন্দরের চার নম্বর গেটে আন্দোলন করতে এসেছেন। তিনি একজন হঠকারী আন্দোলনকারী। উনার যখন স্বার্থ তখন তিনি আন্দোলন করেন। লতিফের এমন বক্তব্যে পরবর্তীতে এক অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দলের ভেতর কিছু কুখ্যাত ব্যক্তি ঢুকে গেছে। এদেরকে আপনারা প্রশ্রয় দেবেন না। তারা কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। রাতারাতি কিভাবে যেনো এমপিও হয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.