ক্যাপ্টেন রফিক ও মেজর জিয়া জ্বলে উঠতে পেরেছিলেন বলেই

লাঞ্চের পর আমি নিয়াজ স্টেডিয়ামে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। মেজর জিয়া এসে আমাকে ঘুম থেকে জাগালেন। তখন আনুমানিক বিকাল চারটা। জিয়া আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, কোন খবর আছে কি না? জানালাম, এখনো উল্লেখযোগ্য তেমন কোন খবর নেই। দু-এক দিনের মধ্যে খবর সংগ্রহের জন্য আমাকে বা অন্য কাউকে হয়তো ঢাকায় পাঠানো হবে। তখন সঠিক খবর জানা যাবে।
মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ‘১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ শীর্ষক গ্রন্থে এসব কথা লিখেছেন। প্রয়াত এ বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও লিখেছেন, তারপর জিয়াকে আমি বললাম, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুপযোগী করলে কেমন হয়। ইদ্রিসের দেওয়া চ্যানেলের ছবিগুলো তাকে দেখালাম। বললাম, জাহাজ প্রবেশ চ্যানেলের কোনো নাজুক জায়গায় আড়াআড়িভাবে ডুবিয়ে দিয়ে বন্দরের প্রবেশপথ বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া আন্ডারগ্রাউন্ড ক্রেনের সংযোগকারী কেবলের (যার মাধ্যমে ক্রেন চলাচল করে) জংশন পয়েন্ট বিচ্ছিন্ন করা হলে বা গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দিলে বন্দরের জেটিগুলোও অকেজো হয়ে যাবে। এতে পাকিস্তানিরা আর বন্দর ব্যবহার করতে পারবে না।
জিয়া তার স্বভাবসুলভ ভারী গলায় বললেন, ‘আরে রাখো এসব প্ল্যানিং। এটা কি সামরিক অভিযান? উই নিড ইট অ্যাট দ্য রিকোয়ার্ড টাইম। বাকি সব কার্যক্রম সংবেদনশীল ডেটোনেটরের বিস্ফোরণের ফলে আপনা-আপনি ঘটতে থাকবে। আগে থেকে এসব প্ল্যানিং করতে গেলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ষোলো আনা।’ পাকিস্তান সামরিক একাডেমির একসময়ের প্রখ্যাত একজন প্রশিক্ষক জিয়া। তার মুখে এসব কথা আমার মনঃপূত হয়নি। বরং তাৎক্ষণিভাবে জিয়ার ভাবমূর্তি আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে অবশ্য দেখা গেল, সময়মতো গর্জে উঠতে না পারলে এসব প্ল্যানিং ভেস্তে যায় বা কোন কাজে আসে না। ইবিআরসির ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। ক্যাপ্টেন রফিক ও মেজর জিয়া তাৎক্ষণিকভাবে জ্বলে উঠতে পেরেছিলেন বলেই মিলিটারি ক্র্যাক ডাউনের প্রথম প্রহরেই অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিরোধের আগুন ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। অবশ্য রফিক ক্র্যাক ডাউন শুরুর আগেই জ্বলে উঠেছিলেন।
যাহোক এরপর মেজর জিয়া চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম সম্ভব হলে তিনি যেন এম আর সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বললেন, রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আমার মতো জুনিয়র অফিসারদের যোগাযোগ রাখাই অধিকতর যৌক্তিক। সিনিয়র কেউ আগে থেকে যোগাযোগ স্থাপনে তৎপর হলে পাকিস্তানিরা সজাগ হয়ে সবাইকে বদলি করে দিতে পারে। একথা বলে তিনি চলে গেলেন।

No comments

Powered by Blogger.