সরকার ও বিএনপির পক্ষে দুটি ঘোষণা আসা প্রয়োজন: ফরাসউদ্দিন by শুভংকর কর্মকার

দ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড
ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে ‘দ্রুত অগ্রগতির
সোপানে বাংলাদেশ: সিলেটের ভূমিকা’
শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য দেন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। ছবি: প্রথম আলো
অনেক ঘটনা ও প্রাণক্ষয়ের পর রাজনীতিতে সুবাতাস বইছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। একই সঙ্গে সেটিকে অব্যাহত রাখতে হলে সরকার ও বিএনপির পক্ষ থেকে দুটি ঘোষণা আসা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, দুটি ঘোষণা রাজনীতির জন্য প্রয়োজন। এক. ২০১৯ সালে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। দুই. সরকারকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হবে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজানো হবে। তাহলে রাজনীতিতে যে সুবাতাস বইছে, সেটি শক্তিশালী হবে।’ একপর্যায়ে দেশের রাজনীতিতে এক ধরনের অস্বস্তি চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে ‘দ্রুত অগ্রগতির সোপানে বাংলাদেশ: সিলেটের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। চেম্বার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো।
চেম্বারের সভাপতি সালাহ্‌ উদ্দিন আলী আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে অতিথি আলোচক ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যাংকার, আইনজীবী, বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে দেশের অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা, জাতীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
সিলেটে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা উঠে আসে
প্রথম আলোর সম্পাদক ম​তিউর রহমানের
বক্তৃতায়। ছবি: প্রথম আলো
সিলেটের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, সিলেটে বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও এখনো সেটি কাজে লাগানো যায়নি। পর্যটনের অনেকগুলো আকর্ষণীয় জায়গা থাকলেও সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা খুবই নাজুক। এ ছাড়া প্রবাসীরা বিভিন্ন জটিলতার কারণে এখানে শিল্পকারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ করেন না। তাঁরা ব্যাংকের উচ্চসুদের হারকে বিনিয়োগের বড় প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন।
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, হবিগঞ্জের বাহুবলে সরকার একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে। সেখানে বস্ত্রকল স্থাপনে সরকার যদি শূন্য থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যাংক সুদে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি এবং ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুযোগ দেয়, তবে সিলেটের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন। তিনি আরও বলেন, পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেলেও পশ্চাৎমুখী সংযোগ শিল্পে পিছিয়ে আছে। কারখানার মালিকদের অনেক কাপড় আমদানি করতে হয়। তাই বস্ত্রকল স্থাপন করা গেলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তবে যেহেতু বস্ত্রকল স্থাপনে অনেক মূলধনের প্রয়োজন, তাই সরকারকেই ওই সুবিধাগুলো দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ড. ফরাসউদ্দিনকে
ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সিলেট
চেম্বারের সভাপতি সালাহ্‌ উদ্দিন
আলী আহমদ। ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, সিলেটের অবস্থান এমন এক জায়গায়, যার পাশেই ভারতের সাতটি রাজ্য। ফলে বাজার কিন্তু তৈরিই আছে। তাই এখানে কলকারখানা স্থাপন করা গেলে এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। তিনি আরও বলেন, সিলেট প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। পাথর, সিলিকা বালু, বাঁশ-বেত, হাওরের মাছ, চা-বাগান, নদী-পাহাড়, জলপ্রপাত—এই সম্পদ কাজে লাগানো গেলে সিলেটের পাশাপাশি দেশও এগিয়ে যাবে।
রাজনীতির বিষয়ে ফরাসউদ্দিনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে মতিউর রহমান বলেন, ‘রাজনীতিতে যে অস্বস্তি আছে, সেটি কাটিয়ে উঠতে সরকার ও বিরোধী দলকে দায়িত্ব নিতে হবে।’ অর্থমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ কম হয়। দুর্নীতি হয়তো বন্ধ হবে না। তবে চেষ্টা ও উদ্যোগ নিলে কমানো সম্ভব।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক
সুলতানা কামালের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট
তুলে দেন সিলেট চেম্বারের সহসভাপতি
মাসুদ আহমদ চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো
সুলতানা কামাল বলেন, দেশ শিল্পায়নের যে ধারায় পৌঁছেছে, সেটি প্রশংসনীয়। তৈরি পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ অনেক সুনাম অর্জন করেছে। তবে পশ্চাৎমুখী সংযোগশিল্পে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সে জন্য অনেকে বলে, আমরা দরজির কাজ করি। তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসা ও বাণিজ্যে অনেক বেশি গুরুত্ব দিই। সে জন্য অনেক বেশি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ। দেশ যদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং সব মানুষ যদি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে কিংবা সুযোগ দেওয়া হয়, তবে ১৯৭১ সালের মতোই একটি চমক সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক কাজের সময় মানুষের কল্যাণ হবে কি না, সেটি ভাবতে হবে। একই সঙ্গে নারীর অংশগ্রহণের পাশাপাশি নারী অধিকার বিষয়ে সচেতন থাকার কথা বলেন এই মানবাধিকার-কর্মী।

No comments

Powered by Blogger.