সন্ত্রাসী হামলায় কাঁপলো জাকার্তা নিহত ৭, আইএসের দায় স্বীকার

জাকার্তায় গুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনার পর একটি
গাড়ির আড়ালে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ও গুলিবিনিময়ের পর
জাকার্তার সড়কে পড়ে আছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এএফপি
এবার সন্ত্রাসী হামলায় কাঁপলো ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা। গতকাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে ৫ হামলাকারীসহ মোট ৭ জন নিহত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সহযোগী একটি গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি ও আল-জাজিরা। জাকার্তার পুলিশ প্রধান টিটো কার্নাভিয়ান বলেন, হামলার পেছনে নিশ্চিতভাবে আইসিসের হাত রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ান বংশোদ্ভূত আইসিসের এক যোদ্ধা বাহরুন নাইম দীর্ঘদিন ধরে এমন একটি হামলার পরিকল্পনা করছে। গতকালের এ হামলার পেছনে তার ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি। জাকার্তার প্রাণকেন্দ্রে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরত্বে মোট ৬টি বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণস্থলের নিকটেই রয়েছে জাতিসংঘের কার্যালয়। তিনটি বিস্ফোরণ হয়েছে সিকনি, সিলপি ও কুনিঙ্গানে। এ স্থানগুলোতে তুরস্ক, পাকিস্তানের দূতাবাস অবস্থিত। হামলা শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে। তিন ঘণ্টা অভিযানের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। ইন্দোনেশিয়া পুলিশের মুখপাত্র অ্যান্টন চার্লিয়ান বলেন, হামলাকারীরা প্যারিস হামলার অনুকরণ করতে চেয়েছিল। আইএস সংশ্লিষ্ট স্থানীয় একটি গোষ্ঠী এ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে ঠিক কোন গোষ্ঠীর দিকে তার ইঙ্গিত ছিল তা স্পষ্ট করেননি। তিনি আরও বলেন, নভেম্বর মাসে তারা আইএসের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিলেন যে ইন্দোনেশিয়ায় হামলার পরিকল্পনা রয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীটির। ৫ হামলাকারীর দুজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে ও অপর তিন জন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন বলে জানান চার্লিয়ান। জঙ্গিদের হামলায় নিহত দুজনের একজন কানাডিয়ান নাগরিক, অপরজন ইন্দোনেশিয়ান। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদের এমন ঘটনায় পরাজিত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। টিভিতে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এমন হামলার স্পষ্টত লক্ষ্য হলো আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করা এবং মানুষের মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে দেয়া। পুলিশের মুখপাত্র চার্লিয়ান জানান, সবমিলিয়ে কমপক্ষে ৬টি বিস্ফোরণ হয়েছে। পুলিশ পরে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি অবিস্ফোরিত বোমা ও দুটি পিস্তল উদ্ধার করে। পুলিশের ধারণা হামলার প্রধান টার্গেট ছিল বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ অপর সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করতে অভিযান চালাচ্ছিল। সিরিজ এই সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে দুই বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় জঙ্গি হামলার
সময় পুলিশের সতর্ক অবস্থান l ছবি: রয়টার্স
সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তা জোরদার:
এদিকে, ইন্দোনেশিয়ায় সিরিজ বোমা হামলার পর প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর নিরাপত্তা জোরদার করেছে। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট লি হসেইন লুং বলেছেন, হামলার পেছনে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে ইন্দোনেশিয়াকে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা দিতে প্রস্তুত সিঙ্গাপুর।
ইন্দোনেশিয়ায় যত জঙ্গি হামলা
ইন্দোনেশিয়ায় এটাই প্রথম কোনো জঙ্গি হামলা নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছে দেশটি। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বড় ধরনের ছয়টি জঙ্গি হামলা হয়েছে দেশটিতে। হামলার ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য—
জুলাই, ২০০৯
জাকার্তার ম্যারিয়ট অ্যান্ড রিটজ কার্লটন হোটেলে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। দুজন হামলাকারীর হামলায় সাতজন নিহত এবং অনেকেই আহত হয়।
অক্টোবর, ২০০৫
বালিতে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে হামলাকারীসহ ২৩ জন নিহত হয়।
সেপ্টেম্বর, ২০০৪
জাকার্তায় অস্ট্রেলিয়ান অ্যাম্বেসির বাইরে একটি বোমা হামলায় অন্তত নয়জন নিহত হয়।
আগস্ট, ২০০৩
জাকার্তার ম্যারিয়ট হোটেলে বোমা হামলায় ১২ জন নিহত হয়।
অক্টোবর, ২০০২
বালিতে বোমা হামলাতে ২০২ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ৮৮ জনই ছিল অস্ট্রেলিয়ান।
ডিসেম্বর, ২০০০
দেশজুড়ে চার্চে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে যাতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
ইন্দোনেশিয়া নিয়ে কিছু তথ্য
বিশ্বের অন্যতম প্রধান উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য দিয়েছে বিবিসি বাংলা। এই তথ্যগুলো থেকে দেশটি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
১. এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে এক হাজারেরও বেশি দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করে দেশটিতে। সারা দেশে ৩০০ টিরও বেশি স্থানীয় ভাষা রয়েছে।
২. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়ার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে দেশটিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে দুর্বল অবকাঠামো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ রয়েছে।
৩. বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। জনসংখ্যা ২৫ কোটিরও বেশি।
৪. ভূমিকম্পপ্রবণ এবং আগ্নেয়গিরি থাকা দেশগুলোর একটি ইন্দোনেশিয়া। সর্বশেষ সুনামিতে ইন্দোনেশিয়াতেই দুই লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত বা নিখোঁজ হয়েছে।
৫. কয়েক বছর ধরে দেশটিতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি বাড়ছে। এর অনেকগুলোই আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত বলে বলা হয়ে থাকে।
৬. দেশটির অনেকগুলো প্রদেশেই স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন চলছে। -প্রথম আলো

No comments

Powered by Blogger.