বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ- সরকারের অনুমোদন লাগবে ফি নির্ধারণে by মোশতাক আহমেদ

একদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি রাখা এবং টিউশন ফি ঠিক করে দেওয়ার উদ্যোগ চলছে, অন্যদিকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারা ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে চতুর্থবারের মতো সময় দেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, সরকার টিউশন ফি নির্ধারণে পূর্বানুমোদন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদে (বোর্ড অব ট্রাস্টিজ) সরকারের প্রতিনিধি রাখাসহ নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ আবার সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একটি উপকমিটি এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান বলেন, আইনে যেসব অসংগতি আছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা চলছে।
২০১০ সালে আইনটি তৈরির সময় মন্ত্রণালয় টিউশন ফি নির্ধারণে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করে এবং মন্ত্রিসভা বিষয়টি অনুমোদন দেয়। কিন্তু উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে সংসদীয় কমিটি এ বিষয়টি মূল আইন থেকে বাদ দেয়। এখন তা আবার সংযোজনের প্রস্তাব উঠেছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী বর্তমানে সিন্ডিকেটে সরকারের প্রতিনিধি আছেন। এখন ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি দেওয়া হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র পরিচিতি আর থাকবে না। তিনি বলেন, টিউশন ফি নির্ধারণ করে দেওয়াটা ঠিক হবে না। তবে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে নীতিমালা হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। তারা এ জন্য কমিটি করেছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
দেশে এখন নতুন ৩৭টিসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯১টি। নতুনগুলো প্রতিষ্ঠার সাত বছর হয়নি। আর শর্ত ভঙ্গের কারণে বন্ধ করে দেওয়া পুন্ড্র ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি আদালতের রায়ের ভিত্তিতে সম্প্রতি আবারও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়া কয়েক দিন আগে সরকার আরও ছয়টি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
অভিযোগ আছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী না পাওয়ার আশঙ্কায় ঢাকা শহরের বাইরে যাচ্ছে না। তা ছাড়া, সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং মান বজায় রাখতে না পারায় বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সহসভাপতি আবুল কাসেম হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শর্ত না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক অবৈধ শাখা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’ তিনি বলেন, সরকারের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দেখভাল করা, নিয়ন্ত্রণ করা নয়।
আরও সময় পেল: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ৪৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চতুর্থ দফায় আরও এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে, যা শুরু এ-সংক্রান্ত চিঠি সই হওয়ার দিন ১৪ জানুয়ারি থেকে। এই সময়ের মধ্যে যেতে না পারলে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়াসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ায় সেগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র বলেছে, নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ১১টি, আংশিক ধরলে তা ১৭। ২০১০ সালে নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমে ২০১২ সালের মধ্যে, দ্বিতীয়বার ২০১৩ সালের মধ্যে এবং তৃতীয়বার দুই বছর বাড়িয়ে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
তবে একাধিক উদ্যোক্তা বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার কোনো সহায়তা দেয় না। তাদের আয় ও ব্যয়ের পর মুনাফা থাকলে তা দিয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসের জমি কেনা ও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সংগতি নেই।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে। বেশ কয়েকটি যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। তবে যেগুলো শর্ত মানবে না, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.