একটু ঘুমাতে চাই

১৯৯৫ সালে তানিয়োশি ইয়োশিমির (ডানে) সাক্ষাৎকার
নিয়েছিলেন আশীষ রায়। ছবি: বোসফাইলস ডট ইনফো
‘আমি একটু ঘুমাতে চাই’—তাইপেই শহরে তৎকালীন জাপানি সামরিক হাসপাতালে শুয়ে বিড়বিড় করে বলছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। বলেই চিরনিদ্রায় চোখ বুজেছিলেন। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট রাত ১১টার দিকের ঘটনা এটি। তৎকালীন জাপানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ড. তানিয়োশি ইয়োশিমির একটি সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে লন্ডনভিত্তিক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আশীষ রায় এমনটাই দাবি করেছেন। তানিয়োশি ইয়োশিমির দাবি, বিমান দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্যতম নায়ক সুভাষ বসুকে তাঁর অধীনেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের। আশীষ রায় গত শনিবার একটি ওয়েবসাইটে নেতাজির বিষয়ে বেশ কিছু নতুন তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করেছেন। আশীষ এতে বলেছেন, তিনি ১৯৯৫ সালে তানিয়োশি ইয়োশিমির একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সেখানে ইয়োশিমি বলেছিলেন, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ও দগ্ধ কয়েকজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তিনি বলেন, ‘নোনোমিয়ো নামের একজন লেফটেন্যান্ট আমাকে বলেন, “ইনি মি. চন্দ্র বোস, খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।” নোনোমিয়ো আমাকে বলেন, আমি যেন যেকোনো মূল্যে তাঁর জীবন বাঁচাই।’ ইয়োশিমি বলেন, একসময় সুভাষ বসুর অবস্থা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বুঝে তিনি তাঁকে বললেন, ‘আমি আপনার জন্য কী করতে পারি?’ এ সময় নেতাজি বিড়বিড় করে বলেন, ‘মনে হচ্ছে মাথার মধ্যে সব রক্ত ছুটে যাচ্ছে। আমি একটু ঘুমাতে চাই।’
ইয়োশিমি বলেন, তখন তিনি নেতাজির দেহে একটি ইনজেকশন দেন। এর পরপরই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে ইয়োশিমি বলেছিলেন, নেতাজির প্রায় পুরো শরীরই দগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। চেহারা বিকৃত হওয়ায় তাঁর চেহারা বোঝা যাচ্ছিল না। নেতাজি ইংরেজিতে কথা বলছিলেন বলে নাকামুরা নামের একজন দোভাষীকে ডেকে আনা হয়। ইয়োশিমি জানান, তাঁকে নাকামুরা বলেছিলেন, সুভাষ বসুর দোভাষী হিসেবে আগেও বহুবার তাঁর কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। ফলে দুর্ঘটনায় বিকৃত চেহারার ব্যক্তিটি যে সুভাষ বসুই, তা বুঝতে তাঁর অসুবিধা হয়নি। সুভাষ বসু ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট জাপান যাওয়ার পথে বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান বলে বিভিন্ন পক্ষের জোরালো দাবি রয়েছে। তবে অনেকেই এই দাবির বিষয়ে সংশয় পোষণ করেন। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত অক্ষশক্তির অংশ জাপানের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছিলেন সুভাষ বসু। ২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১১৯তম জন্মদিন। সেদিন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ-সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ করা শুরু করবে। নেতাজির ‘অন্তর্ধান রহস্য’ কাটাতে তা সাহায্য করতে পারে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের কাছে থাকা কিছু ফাইল প্রকাশ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.