জিকার ভয়ে ২০১৮ পর্যন্ত গর্ভবতী হওয়া বারণ!

মহিলাদের গর্ভবতী হতে নিষেধ করে দিচ্ছে লাতিন আমেরিকার একের পর এক দেশ। জিকা ভাইরাসের প্রকোপে যেভাবে হাজার হাজার মাইক্রোসেফ্যালি আক্রান্ত নবজাতকের জন্ম নিচ্ছে, তার প্রেক্ষিতেই এই বার্তা ওই সব দেশের সরকারের। মহিলাদের সন্তান ধারণ না করতে সরকারের দেওয়া এই বার্তার তীব্র সমালোচনা করেছে লাতিন আমেরিকার নারী সংগঠনগুলি। জিকা ভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে ব্রাজিল, কলম্বিয়া, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, জামাইকায়। ব্রাজিলে গত কয়েক মাসে ৪০০০ শিশু জন্ম নিয়েছে মাইক্রোসেফ্যালিতে আক্রান্ত হয়ে। অর্থাৎ তাদের মাথা শরীরের তুলনায় অস্বাভাবিক রকমের ছোট হচ্ছে। মস্তিষ্কের গঠন অসম্পূর্ণ থাকায় এমন শারীরিক বিকৃতি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভবতী মহিলারা জিকায় আক্রান্ত হলে তাঁদের গর্ভস্থ সন্তানের উপর এর প্রভাব পড়ছে। জিকা গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক নষ্ট করে দিচ্ছে। তার ফলই হল মাইক্রোসেফ্যালি আক্রান্ত হয়ে নবজাতকের জন্ম। জিকার প্রকোপ ক্রমশ বাড়তে থাকায়, লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সরকার মহিলাদের আপাতত সন্তান ধারণ না করার আর্জি জানাতে শুরু করেছে। ব্রাজিলের লাগোয়া কলম্বিয়ায় প্রায় ১৩ হাজার নবজাতক জিকার শিকার। এল সালভাদোরের মতো ছোট দেশেও ৫০০০ নবজাতক জিকার প্রকোপে শারীরিক বৈকল্য নিয়ে জন্মেছে। কলম্বিয়ার সরকার সে দেশের মহিলাদের আর্জি জানিয়েছে, আগামী বেশ কয়েক মাস গর্ভধারণ না করতে। এল সালভাদোরের স্বাস্থ্য মন্ত্রকও একই পথে হেঁটেছে। স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও, সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রায় নির্দেশ জারি করে বলেছে, দেশের মহিলারা যেন ২০১৮ সাল পর্যন্ত সন্তানের জন্ম না দেন। সরকারের তরফে এই বার্তা মেলার পর, বিভিন্ন লাতিন আমেরিকান দেশে গর্ভপাতের প্রবণতা বেড়েছে। গর্ভনিরোধক ওষুধের বিক্রি বেড়ে যাওয়া এবং গর্ভপাতের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় মহিলাদের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই কলম্বিয়া ও এল সালভাদোরের বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন এবং নারী সংগঠন সরকারের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে। জিকা ভাইরাস এমন নিঃশব্দে সংক্রামিত হচ্ছে যে তার প্রকোপ থামানো না গেলে আগামী প্রজন্মের বিরাট অংশ শারীরিক বৈকল্য বা অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম নিতে পারে। একটা গোটা প্রজন্ম এমন ভয়ঙ্কর রোগের শিকার হলে, দেশের ভবিষ্যৎও সঙ্কটে পড়বে। সে কথা মাথায় রেখেই, জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সন্তানের জন্ম দিতে মহিলাদের বারন করছে লাতিন আমেরিকান দেশগুলির সরকার। জিকা সংক্রমণ ক্রমশ মহামারীর আকার নেওয়ার দিকে এগোতে থাকায়, উদ্বিগ্ন বার্বাডোজ, বলিভিয়া, গুয়াতেমালা এবং পুয়ের্তো রিকো-র সরকারও। ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশনের সাহায্য চেয়েছে এই দেশগুলি। জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করা যাচ্ছে না বলে, বেশ কয়েকটি দেশ নমুনা পরীক্ষার জন্য আমেরিকার দ্বারস্থ হচ্ছে।– সংবাদমাধ্যম

No comments

Powered by Blogger.