ছি ছি এত্তা জঞ্জাল- অবস্থা আগের মতোই by খালিদ সাইফুল্লাহ

২০১৬ সালকে ডিএসসিসি মেয়র পরিচ্ছন্নতা বছর
ঘোষণা করলেও এখনো নগরীর যত্রতত্র ময়লা পড়ে
থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি গতকাল পুরান ঢাকার
দয়াগঞ্জ ব্রিজের নিচ থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত
বর্তমান বছরকে পরিচ্ছন্নতা বছর ঘোষণা করলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের আহ্বানে তেমন সাড়া মিলছে না। বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করলেও এলাকার পরিবেশের কোনো হেরফের হয়নি। রাস্তায় রাখা ডাস্টবিনগুলো থেকে এখনো উপচে পড়ছে ময়লা-আবর্জনা। দিনের বেলাতেই চলাচল করছে ময়লাভর্তি গাড়ি। যত্রতত্র ময়লা ফেলার অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন নেই। এমনকি সন্ধ্যা ৭টার পর ময়লা ফেলতে মেয়রের অনুরোধের প্রতিও কোনো পাত্তা দিচ্ছেন না নগরবাসী।
গত ২৩ ডিসেম্বর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘পরিচ্ছন্নতা বছর-২০১৬’ ঘোষণা করেন মেয়র সাঈদ খোকন। সেদিন মেয়র রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে সাত দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর প্রথম দফায় ছিল আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রচলন। তিনি বলেন, প্রধান সড়ক থেকে আবর্জনার কনটেইনার স্থানান্তর এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মোট ৫৭ সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ ও প্রতিদিন সকাল ৭টার মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকার্যক্রম সম্পন্ন করা। তিনি দ্বিতীয় দফায় পরিচ্ছন্নকার্যক্রম গতিশীল করতে জন সম্পৃক্ততা বাড়ানোর কথা বলেন। এ ল্েয অনলাইন মিডিয়াসহ সব গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর কথা বলেন। তৃতীয় দফায় প্রধান জনসমাগম স্থলে ছোট আকারে ৫০টি আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে। চতুর্থ দফায় নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে ঢাকা শহরকে দৃষ্টিন্দন করা হবে এবং পয়লা জানুয়ারি থেকে সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া ব্যানার-ফেস্টুন লাগাতে পারবে না। পঞ্চম দফায় আধুনিক পরিবেশবান্ধব সড়ক বাতি সংযোজন এবং ষষ্ঠ দফায় রয়েছে দখলমুক্ত সড়ক নিশ্চিত করা। শেষ দফায় ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক অভিযোগ গ্রহণের জন্য ২৪/৭ হটলাইন খোলা হবে। পরিচ্ছন্নতার জন্য পুরস্কার এবং তিরস্কারের ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
ওই ঘোষণার পর এক মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে ডিএসসিসি ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় প্রতিদিনই পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্বোধন করেছেন মেয়র। এতে সরকারের মন্ত্রী, বিশিষ্ট নাগরিক, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অংশ নিচ্ছেন। এসব কর্মসূচি থেকে মেয়র নগরবাসীর প্রতি বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন ময়লা ফেলার বিষয়ে সচেতন হতে। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে রাত ১০টার মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে। তিনি প্রত্যেক নাগরিককে মেয়রের ভূমিকা নেয়ারও আহ্বান জানান। কিন্তু নগরী ঘুরে দেখা গেছে, মেয়রের আহ্বানে কোনো সাড়া নেই নগরবাসীর। দিনের বেলাতেই বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে তা ডাস্টবিনে ফেলছে এলাকাভিত্তিক ময়লা সংগ্রহকারীরা। বিভিন্ন সড়কে রাখা ডাস্টবিনে সারা দিনই এসব ময়লা ফেলছে তারা। সকাল ৭টার মধ্যে এসব ডাস্টবিন থেকে সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লা নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দিনের বেলাতেও ময়লা পরিবহন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে ময়লা ফেলার মেয়রের নির্দেশের বিষয়টি জনগণ বুঝতে পারছেন না। এমনকি বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহকারীরাও বুঝতে পারছেন না তারা কিভাবে রাতে ময়লা সংগ্রহ করবেন। এ ছাড়া চলতি পথে যেখানে-সেখানে ময়লা না ফেলার বিষয়ে জনগণের মধ্যে কোনো সচেতনতা গড়ে উঠছে না। আগের মতোই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছেন মানুষ।
পল্টন এলাকার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, বাসাবাড়ি থেকে এখন দিনে ময়লা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু মেয়র সন্ধ্যা ৭টার পর ময়লা ফেলতে বলছেন। অথচ ময়লা সংগ্রহকারীরা ঠিকই দিনেই ময়লা নিয়ে তা রাস্তার ডাস্টবিনে ফেলছেন। সিটি করপোরেশনের নিজের কাজেই ঠিক নেই তারা কিভাবে জনগণকে মানাবে।
গোপিবাগ এলাকার গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, রাতে কিভাবে ময়লা সংগ্রহ করবে বুঝতে পারছি না। রাতে একটা নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে।
বাসাবো এলাকার ময়লা সংগ্রহকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর ময়লা সংগ্রহ করা বিষয়ে আমাদের কিছু বলা হয়নি। আমরা এখনো দিনের বেলাতেই সংগ্রহ করছি এবং দিনেই ডাস্টবিনে রেখে আসছি। রাতে ময়লা আনতে যেকোনো বাড়ি যাওয়ায় সমস্যা আছে। তিনি বলেন, মেয়রের এ নির্দেশ মনে হয় বড় সড়কের জন্য।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন রকিব উদ্দিন ভুঁইয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, পরিচ্ছন্নতা বছর সফল করতে মেয়রের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করছি আস্তে আস্তে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়বে। সন্ধ্যার পর ময়লা সংগ্রহ করায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসিরও পক্ষ থেকে ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে মেয়র সাঈদ খোকন নয়া দিগন্তকে বলেন, ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদের সচেতনতা সৃষ্টি করতে কাজ করছি আমরা। পরিচ্ছন্নতা বছর উপলক্ষে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অভিযান চালানো হচ্ছে। ৫৭ ওয়ার্ডে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন তৈরির কাজ চলছে। সন্ধ্যা সাতটার পরে গৃহস্থলীর বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সন্ধ্যা ৭টার পরে নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য রাখলে তা করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সরিয়ে নেবেন। একটি নিদিষ্ট সময়ে কেউ যদি নিদিষ্ট স্থানে ময়লা না ফেলেন তাহলে জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে।
সাঈদ খোকন আরো বলেন, পরিচ্ছন্ন নগরী পেতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। এজন্য আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘লাভ ফর ঢাকা’ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আস্তে আস্তে মানুষ সচেতন হবে। কাজটা শুরু হয়েছে, আমাদের একটু সময় দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.