আমার সারা জীবন কেটেছে উদ্ভাবনী কাজে

এ সপ্তাহে আপনি প্যারিসে ‘ক্লিন এনার্জি জোট’ ঘোষণা করেছেন। আপনি কতটা আশাবাদী এবারের কপ-২১ সম্মেলনে টেকসই আইনি বাধ্যবাধকতার জলবায়ু চুক্তি হবে?
প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনের বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ নই। আমার সমগ্র জীবন কেটেছে উদ্ভাবনী কাজে। কম্পিউটার সফটওয়্যার থেকে আইটি খাত, কিংবা স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী গবেষণায় মানুষকে একত্র করেছি। মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। যেমন স্বাস্থ্য খাতে নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিনিয়োগ। জ্বালানি খাতের ব্যাপারেও আমি উচ্ছ্বসিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতের মতো ২০টি দেশ জ্বালানি ও গবেষণা ও উন্নয়নে তাদের বাজেট দ্বিগুণ করতে রাজি হয়েছে। আমরা যদি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি (ক্লিন এনার্জি) আজকের হাইড্রোকার্বন ও কয়লার মতো সাশ্রয়ী করতে পারি, সেটাই সফলতা। এ জন্য বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন দরকার।
আপনার গেটস ফাউন্ডেশন সবসময় বড় বড় আইডিয়া ও প্রযুক্তিতে অর্থায়ন করে আসছে। ১০ বছর হয়ে গেল, অনেক গবেষণার এখনও ফল পাওয়া যায়নি। আপনি কি অধৈর্য হন না?
১৯৯০-২০১৫ এ সময়ে আমরা মৃত্যুহার অর্ধেক কমিয়ে আনতে পেরেছি। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন, নিউমোকোকাল ভ্যাকসিন ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে। আবিষ্কার সবসময় আশ্চর্যজনক জিনিস উপহার দিচ্ছে। তবে আমরা এখনও এইচআইভি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারিনি। কিন্তু আমি এ খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখছি।
আমি সবসময় আশাবাদী দ্রুততর সময়ে ফল পাওয়া যাবে। আর আইটি পণ্যের চেয়ে স্বাস্থ্য পণ্য উদ্ভাবন অবশ্যই জটিল।
ভারত সরকারের বিতর্কিত ইনজেকশনভিত্তিক গর্ভনিরোধক কর্মসূচিতে গেটস ফাউন্ডেশন কেন সমর্থন দিচ্ছে?
ইনজেকশনভিত্তিক গর্ভনিরোধক কর্মসূচি খারাপ কিছু নয়। শুধু ভারত নয়, বিভিন্ন দেশের ধনী নারীরাও ইনজেকশন গ্রহণ করে। অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় ভারতে সবচেয়ে বেশি বন্ধ্যত্বকরণ প্রয়োজন। যে কোনো প্রক্রিয়া চালু করার ব্যাপারে মানসিকতার পরিবর্তন কঠিন।
ভারতের স্বাস্থ্য খাতে কি বাজেটের ঘাটতি রয়েছে?
আমি যখনই ভারতে আসি, বলে থাকি- ভোটারদের চাপ নিয়ে কাজ করবেন না। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, এ দেশের স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির সংস্থান দরকার।
১০ বছর পর ভারতের স্বাস্থ্য খাতকে কোথায় দেখতে চান?
ভারতের জনগণ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রচুর টাকা ব্যয় করে ফেলে। এখানে বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে থাকে। লোকজন যাতে সহজেই রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পেতে পারে সে ব্যাপারে পুনঃচিন্তা দরকার। এ জন্য বিনিয়োগের খাত নির্বাচন করতে হবে।
সমালোচকরা বলে থাকেন, আপনি ‘মানবহিতৈষী পুঁজিবাদ’ চালু করেছেন? অর্থাৎ জনকল্যাণের নামে চিকিৎসা ও প্রযুক্তি পণ্য দিয়ে আপনি লাভবান হচ্ছেন। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
ব্যক্তিস্বার্থে কোনো কিছু করা অবৈধ নয়। কিন্তু আমরা এ পদ্ধতিতে (জনকল্যাণের নামে) স্বার্থ হাসিল করি না।
আমরা-তো স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে টাকা বিনিয়োগ করছি। এভাবে কতটা আয় করা যায়? শিশুদের পুষ্টিসহায়তা দিতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করা হচ্ছে। এখান থেকে টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ আপনাকে নায়ক মনে করেন। ফেসবুকে তার নিজের শেয়ারের ৯৯ শতাংশ জনকল্যাণে ব্যয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। আপনি এটা কীভাবে দেখছেন?
এটা খুব চমৎকার। মার্ক আমার চেয়ে ছোট বয়সে কাজ শুরু করেছে। আমি যেসব ভুল করেছি, মার্ক সেগুলো এড়িয়ে চলতে পারছে। সে আমার ছোট হলেও কিছু ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করি। সে খুব স্মার্ট ও মহৎ ব্যক্তি।

No comments

Powered by Blogger.