খাওয়া শেষে যেসব কাজ কখনোই করবেন না

আমরা জানি, অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আপনি যদি নির্দিষ্ট কয়েকটি কাজ করেন, তাহলেও আপনি অসুস্থ হতে পারেন। খাওয়ার পর এ ৮টি কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। আশা করা যায়, এতে আপনি সুস্থ ও সুন্দর জীবনের অধিকারী হবেন।
খাওয়া শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খাওয়ার পরপরই ফল খাওয়ার অভ্যাস অনেকের আছে। কিন্তু এটি ভালো অভ্যাস নয়। খাবার আমাদের পেটে যাওয়ার পর একটা নির্দিষ্ট সময় পর হজম হয়। এখন আপনি যদি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার ফলমূলও খান, তবে পাকস্থলির ওপর না-হক চাপ পড়বে। তাতে আগে খাওয়া খাবারও ঠিকমতো হজম হবে না এবং পরে খাওয়া ফলের প্রতি সুবিচার করা হবে না। আপনি যদি এ কাজ দীর্ঘকাল ধরে চালিয়ে যান, তবে পেট ব্যথা, উদরাময় ও কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হতে পারেন।
খাওয়ার পরপরই চা পান করা থেকে বিরত থাকুন।
এ অভ্যাসও অনেকের আছে। কিন্তু এটা ভালো অভ্যাস নয়। চা অনেকেরই প্রিয়। বাংলাদেশের চা খেতেও অনেক ভালো। কিন্তু খাওয়ার পরপরই চা খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, চা খেলে তা আপনার পাচকরসকে পাতলা করে দেবে এবং তার কার্যকারিতা কমিয়ে দেবে। এ ছাড়া, চা-এর মধ্যে প্রচুর অ্যাসিডিক উপাদান থাকে, যা প্রোটিন জাতীয় খাবার হজমে বাধা সৃষ্টি করে। খাওয়ার পরপরই যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস তাদের রক্তস্বল্পতা রোগে আক্রান্ত হবার ভয় আছে। অতএব খাওয়ার পরপরই নয়, বরং বেশ খানিকটা সময় পর চা খান।
খাওয়ার পরপরই ধূমপান করবেন না। ধূমপান প্রসঙ্গে আমরা তো 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে অনেকবার আলোচনা করেছি। হ্যাঁ, ধূমপান শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যার ক্ষতি করে না। তারপরও যারা ধূমপান করেন, তাদের জন্য বলি, খাওয়ার পরপরই ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। কারণ, খাওয়ার পরপরই ধূমপান করা অন্য সময়ে ধূমপান করার চেয়ে ১০ গুণ বেশি ক্ষতির কারণ হবে। কারণ খাওয়ার পর আমাদের পরিপাকপ্রণালীতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এ সময় আপনি ধুমপান করলে, তামাকে বিষাক্ত উপাদানগুলো আরও শরীরের আরও বেশি ক্ষতি করবে। এসময় ধূমপান আমাদের লিভার, ফুসফুস, মস্তিষ্ক, হার্ট ইত্যাদির মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
খাওয়ার পরপর গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। এটি একটি খারাপ অভ্যাস। অনেকেই খাওয়ার পরপরই গোসল করে নেন। কিন্তু এটা ঠিক না। খাওয়ার পরপরই গোসল করলে শরীরে রক্তপ্রবাহের পরিমাণ বেড়ে যায় আর পরিপাকপ্রণালীর রক্তপ্রবাহের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমে যায়। এতে আপনার হজমক্ষমতা কমে যাবে। এ অভ্যাস ত্যাগ না-করলে আপনি অজীর্ণ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
খাওয়ার পরপরই কোমরের বেল্ট খুলবেন না। আমি জানি এতে আরাম বোধ হয়। বিশেষ করে একটু বেশি খেয়ে ফেললে তখন খাওয়ার পর বেল্ট খুলে ফেললে ভালোই লাগে। কিন্তু এটা ঠিক নয়। খাওয়ার পর পেট ফুলে যে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, তা বেল্টের ওপর দিয়েই যেতে দিন। পেটের চামড়াকে রেহাই দিন। তা না হলে আপনি Gastroptosis রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
খাওয়ার পরপরই হাঁটাহাটি শুরু করা উচিত নয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে খাওয়ার পর হাটা ভালো। কিন্তু এ হাঁটার কাজ শুরু করতে হবে খাওয়ার খানিকটা পর, সাথে সাথে নয়। খাওয়ার ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর হাঁটাহাটি করুন, কোনো সমস্যা নেই। সাথে সাথে হাটা শুরু করলে আপনার হজম-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে, যে পুষ্টিকর খাবার আপনি খেয়েছেন, তার সুফল আপনি পুরোপুরি পাবেন না। অনেক সময় এতে বরং ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য এ অভ্যাস বেশি খারাপ। তারা হৃদরোগ বা রক্তনালীর সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
খাওয়ার পরপরই গান গাওয়া ঠিক নয়। অনেকে পার্টিতে গান গাইতে পছন্দ করেন। কিন্তু এটা যেন খাওয়ার পরপরই না হয়। হয় খাওয়ার আগে গান গেয়ে শুনিয়ে দিন বন্ধুদের, নতুবা খাওয়ার খানিকটা সময় পর গান গাইতে মঞ্চে উঠুন। কারণ, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গান গাইতে শুরু করলে, আপনার পেটের ওপর না-হক চাপ পড়বে। বেশিদিন এ অভ্যাস থাকলে আপনি অজীর্ণ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অতএব সাবধান।
খাওয়ার পরপরই গাড়ি চালানো শুরু করবেন না। আমরা শুনেছি, অনেকেই খাওয়ার পরপরই গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। আসলে খাবার হজম করার জন্য শরীরের পরিপাকতন্ত্রে পর্যাপ্ত রক্তের সরবরাহ থাকা চাই। এতে মস্তিষ্কে সাময়িকভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় অন্য যে কোনো কাজ করাই স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। বিশেষ করে গাড়ি চালাতে আমাদের বেশ শারীরিক ও মানসিক শক্তি ব্যয় করতে হয়। গাড়ি চালানো সময় আমাদের মস্কিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন থাকা জরুরি। কিন্তু খাবার গ্রহণের পর তা পাওয়া যায় না। অতএব খাবার গ্রহণের পরপরই গাড়ি চালাবেন না।

No comments

Powered by Blogger.