সিরিয়ায় আরও পুরাকীর্তি ধ্বংস আইএসের

 ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ পালমিরা গত
মে মাসে দখল করে নেয় আইএস। ছবি: রয়টার্স
সিরিয়ার প্রাচীন শহর পালমিরার আরেকটি পুরাকীর্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা। দেশটির কর্মকর্তা ও স্থানীয় সূত্র এমন দাবি করেছে। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পালমিরার আন্দোলনকর্মী মোহাম্মদ হাসান আল-হোমসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘পালমিরার বিজয় তোরণ বলে পরিচিত ওই প্রাচীন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা আইএস ধ্বংস করেছে।’
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ধ্বংসের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে সূত্র।
খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিরিয়ার পুরাতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক মামুন আবদুল করিম।
ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত পালমিরা গত মে মাসে দখল করে নেয় আইএস। এরপর বিশ্বজুড়ে শঙ্কা তৈরি হয়, জঙ্গিরা ঐতিহ্যপূর্ণ এই নগরটি ধ্বংস করে ফেলবে। আইএসের জঙ্গিরা ইতিমধ্যে পালমিরার দুটি মন্দির ধ্বংস করেছে।
শহর দেখভালের সঙ্গে যুক্ত থাকা ৮২ বছর বয়সী প্রত্নতত্ত্ববিদ খালেদ আল-আসাদকে গলা কেটে হত্যা করে আইএস। তাঁর মরদেহ প্রাচীন একটি স্তম্ভের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
রোমান স্থাপত্যের নিদর্শনবাহী পালমিরাকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থানগুলোর অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়।
দুই হাজার বছরের বেশি সময় ধরে অনন্য সব স্থাপত্য আর রাস্তাঘাট নিয়ে টিকে আছে পালমিরা।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ২১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে পালমিরা অবস্থিত। শহরটি মূলত একটি মরূদ্যান। সিরিয়ায় পালমিরার পরিচিতি ‘তাদমুর’ নামে। এর অর্থ হচ্ছে ‘খেজুরের শহর’।
আরেক প্রাচীন মন্দির গুঁড়িয়ে দিল আইএস
সিরিয়ার প্রাচীন শহর পালমিরার বেল মন্দিরটির কিছু অংশ গুঁড়িয়ে দিয়েছে শহর দখলকারী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্যরা। ওই অঞ্চলে করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস গত রোববার এ কথা জানায়। স্যাটেলাইট ইমেজ মন্দিরটি ধংসের ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের।
এ মাসে দুই হাজার বছরের পুরোনো পালমিরার দুটি মন্দির ধ্বংস করল আইএস। গত ২৫ আগস্ট শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাল শামিন মন্দির ধ্বংস করে তারা। পালমিরা ইউনেস্কার বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
বাল শামিন মন্দিরের কতটুকু ধ্বংস করা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে স্থানীয় অধিবাসীরা বলেছেন, তাঁরা বিকট এক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। পালমিরার এক অধিবাসী বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, ‘একেবারে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ইট আর স্তম্ভগুলো মাটিতে মিশে গেছে। এমন বিস্ফোরণ হয়েছে যে এর শব্দ বধিরও শুনতে পাবে।’
তাঁর কথা, মন্দিরটির কেবল দেয়ালটাই এখন টিকে আছে। সূর্যদেবতা ইয়ারহিবল এবং চন্দ্র দেবতা আগলিবলের মন্দির এটি। ইউনেস্কো মন্দির ধ্বংসের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এভাবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস যুদ্ধাপরাধের শামিল।
এ বছরের মে মাসে পালমিরা দখল করে আইএস। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তারা প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যপূর্ণ এই নগরটি ধ্বংস করে ফেলবে। শহর দখলের পর এর কিছু কিছু স্থাপনা ধ্বংস করে ফেলার খবর পাওয়া যাচ্ছিল। তবে বাল শামিন ধ্বংসের পর সেই ছবি আইএসের পক্ষ থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ মাসের শুরুর দিকে পালমিরা শহর দেখভালের সঙ্গে যুক্ত থাকা ৮২ বছর বয়সী প্রত্নতত্ত্ববিদ খালেদ আল-আসাদকে গলা কেটে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা। হত্যার পর আসাদের মরদেহ প্রাচীন একটি স্তম্ভের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
ঐতিহ্যের শহর: দুই হাজার বছরের বেশি সময় ধরে অনন্য সব মন্দির আর রাস্তাঘাট নিয়ে টিকে আছে পালমিরা। শহরটিতে আছে অপূর্ব সব মূর্তি, হাজার খানেক স্তম্ভ আর আছে পাঁচ শতাধিক সমাধিসৌধ। পালমিরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ২১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। শহরটি মূলত একটি মরূদ্যান। সিরিয়ায় পালমিরার পরিচিতি ‘তাদমুর’ নামে। এর অর্থ হচ্ছে ‘খেজুরের শহর’। পালমিরা ছিল মূলত দূর পথযাত্রীদের বিশ্রাম নেওয়ার স্থান। খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে পরবর্তী ৪০০ বছর পালমিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়, মূলত মসলা, সুগন্ধি রেশম এবং হাতির দাঁতের শিল্পের ব্যবসার জন্য।

No comments

Powered by Blogger.