হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু আজ আরাফাত দিবস

আজ পবিত্র আরাফাত দিবস। সব হজযাত্রী এসে মিশছেন ইসলামের এই ঐহিত্যবাহী ময়দানে। তারা সমস্বরে উচ্চারণ করছেন- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা, লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাকা।’ অর্থাৎ- হাজির হে আল্লাহ হাজির, আপনার মহান দরবারে হাজির। আপনার কোন শরিক নেই। সব প্রশংসা, নিয়ামত এবং সব রাজত্ব আপনারই। প্রায় ২০ লাখ হজযাত্রীর এ উচ্চারণে প্রকম্পিত হচ্ছে চারদিক। এই সেই ময়দান যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধরে হজযাত্রীরা এখানে ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়ে দেবেন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই মিলে এক জাতি। সবাই এক আল্লাহর অতিথি। আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়া ও সেখানকার ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করাকেই হজের প্রধান অংশ বলা হয়। তাই এ দিনকে হজের দিন বলা হয়। আজ দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হজযাত্রীরা অবস্থান করবেন এখানে। এর মধ্যে মসজিদে নামিরা থেকে খুৎবা দেয়া হবে। হজযাত্রীরা ইমামের পিছনে একসঙ্গে জোহর ও আছরের নামাজ আদায় করবেন। এর আগে গতকাল জোহরের নামাজের আগেই মিনায় পৌঁছেন লাখ লাখ হজযাত্রী। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় পবিত্র হজের ৫ দিনের আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত মিনাতেই অবস্থান করেন হজযাত্রীরা। সেখানে আজকের ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় শেষে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা ছুটেছেন আরাফাতের ময়দানে। মিনা থেকে আরাফাতের ময়দান ১০ কিলোমিটার বা ৬ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে। আজ মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করেই কেউ পায়ে হেঁটে, হুইল চেয়ারে, বাসে করে, যে যেভাবে পারেন সেভাবেই ছুটছেন আরাফাতের ময়দানে। দু’টুকরো সাদা কাপড়ে ঢাকা হজযাত্রীতে যেন আরাফাতের ময়দান ও এর আশপাশ সফেদ রূপ ধারণ করেছে। আজ এখানে মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই হজযাত্রীরা রওনা দেবেন মুজদালিফার দিকে। ওদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি খবরে বলেছে, গতকাল মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন সারা বিশ্ব থেকে সমবেত হওয়া লাখো হজযাত্রী। এর আগে তারা সমবেত হয়েছিলেন পবিত্র মক্কা নগরীতে। এবার হজ করছেন প্রায় ২০ লাখ হজযাত্রী। হজ করার সুবিধা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মিশরের ৩৫ বছর বয়সী ওয়ালা আলী। তিনি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন, এটা আল্লাহর তরফ থেকে এক নেয়ামত। তিনিই আমাদেরকে বেছে নিয়েছেন যাতে আমরা এখানে আসতে পারি। বলতে বলতে আবেগে তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পড়ে। তিনি বলেন, হজ করার সুযোগ পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। গতকাল মঙ্গলবার মিনায় তাঁবুতে অবস্থানকালে ধর্মীয় বক্তাদের মূল্যবান বক্তব্য শোনেন নারী-পুরুষ হজযাত্রী পাশাপাশি বসে।
ওদিকে গত ১১ই সেপ্টেম্বর মসজিদুল হারামে ক্রেন ভেঙে পড়ায় আহত ৫৬ হজযাত্রীকে হজ করার বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছে সৌদি আরব সরকার। ওই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১০৯ জন হজযাত্রী মারা যান। আহত হন অনেকে। এর মধ্যে ৫৬ হজযাত্রীকে বিশেষ মেডিক্যাল বিষয়ক পরিবহনে করে জাবাল আল রাহমা হাসপাতাল ও আরাফাত জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে, যাতে তারা আরাফাতের ময়দানে হাজির হওয়া থেকে বঞ্চিত না হন। মক্কার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভাগের পরিচালক ড. মুস্তাফা বালজুন এ কথা জানিয়ে বলেন, আহত ১৫ হজযাত্রীকে বাদশা আবদুল আজিজ হাসপাতাল থেকে, ৩১ জনকে বাদশা ফয়সল হাসপাতাল থেকে ও ১০ জনকে আল নূর স্পেশালিস্ট হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন হাসপাতালে। ওদিকে মসজিদুল হারামে ক্রেন ভেঙে পড়ার পর মালয়েশিয়ার দুজন হজযাত্রীর কোন হদিস মিলছে না। তাদের নিকটজনদের ডিএনএ নমুনা এরই মধ্যে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া হয়েছে যাতে তারা মিনায় মোয়াইসেম মর্গে থাকা লাশের মধ্য থেকে তাদের শনাক্ত করা যায়। নিখোঁজ ওই হজযাত্রীদের নিকটজন গত শুক্রবার জেদ্দা যান। তাদেরকে মর্গ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় ডিএনএ সংগ্রহ করতে। নিখোঁজ দুই হজযাত্রী হলেন সাদ (৫২), আবদুল হাবিব লাহমান (৬৮)।

No comments

Powered by Blogger.