সিংড়ায় ৫ পরিবার ১৬ দিন ধরে একঘরে: শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যহত

একঘরে হয়ে থাকা লোকজন
নাটোরের সিংড়া উপজেলার জয়নগর গ্রামের আইয়ূব আলীসহ পাঁচ কৃষক পরিবারকে ১৬ দিন ধরে একঘরে করে রেখেছে স্থানীয় মাতব্বরেরা। এতে ওই ভুক্তভোগী পরিবারের তিন মেয়ে শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে কতিপয় বখাটের হুংকারে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ৩ মেয়ে শিক্ষার্থীসহ ৫ নিরীহ কৃষক পরিবার। অবিলম্বে প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হস্তক্ষেপ দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা। এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলার জয়নগর গ্রামের আইয়ুব আলী দিং ৫ ভাইয়ের সাথে ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম ভুলুর জমি-জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। গত ১১ আগষ্ট বিরোধ নিরসনের জন্য গ্রামপ্রধান খবির উদ্দিন সরদারের বাড়ির পাশে একটি শালিসী বৈঠকও বসে। কিন্তু জনৈক ব্যক্তি আব্দুল হান্নানসহ কয়েকজন গ্রাম্য মাতব্বরের কিছু উৎভট, অবাস্তব কথায় শালিসী বৈঠক দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে বিকেলেই জনৈক যুবক আব্দুল হান্নান ও আব্দুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, আনছার আলীসহ কতিপয় মাতব্বরের নির্দেশে ওই ৫ কৃষক পরিবারের জন্য সরকারি রাস্তায় চলাচল ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাড়ি বাড়ি জানিয়ে দেন জনৈক আশরাফ আলী। গত বুধবার সরোজমিনে গিয়ে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি খবির উদ্দিন সরদার ও এলাকাবাসী শফিউল আলম, সিহাব উদ্দিন, হুসেন আলীসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই পরিবারের সদস্যদের সরকারি রাস্তায় চলাচল ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অকপটে সবাই স্বীকার করেন। তবে ওই পরিবারের সদস্যদের কিছু দোষও রয়েছে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন। আর সেখানে জড়ো হওয়ার অনেকে বলেন, তাদের বাড়িতে যাওয়া ও কথা বলা নিষেধ। কারণ তাদের সমাজ থেকে একঘরে করা হয়েছে। এসময় ছালেহা বেওয়া (৬০) বলেন, 'আজ ১৬ দিন ধরে সিদ্ধ ভাত ও বাড়ির শাক কচু খেয়ে রয়েছি। গ্রাম্য কতিপয় মাতবরকে উৎকোচ না দেয়ায় আমার পরিবারকে একঘরে করি দিছে। ছেলেরে হাসপাতালে দেখতি যেতে দেয় নাই। ছেলেদের জুম্মার নামাজও পড়ির দেয় না।'
এই শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে
এবিষয়ে ভূক্তভোগী পরিবারে দশম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী আলো খাতুন, নবম শ্রেণীর বিজলী খাতুন ও শিশু শিক্ষার্থী সোমা খাতুনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদেরকে সরকারি রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। কথা না শুনলে চরম ক্ষতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনৈক আশরাফ আলী। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় কেজি স্কুলের শিক্ষিকা মৌসুমী খাতুন জানান, তার স্কুলের শিক্ষার্থী সোমা খাতুন তিনটি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেনি। আর দু’সপ্তাহ ধরে সে স্কুলেও আসে না। স্কুলে না আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি গ্রামীণ বিষয়ে কিছু বলবেন বলে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল হান্নান একঘরে করে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শালিসে তাকেই পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আর আশরাফ আলীর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন জানান, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে তিনি ও সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস ওই শালিসী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিরোধ মীমাংসা না হওয়ায় বৈঠক ত্যাগের পর ওই গ্রামের এ ধরনের কোনো ঘটনা তাদেরকে কেউ জানায়নি। সিংড়া থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, একঘরে করে রাখার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে আইয়ুবসহ ওই পাঁচ পরিবারের বিরুদ্ধে সিংড়া থানায় একটি মামলা রয়েছে। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছে। বিষয়টি জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।

No comments

Powered by Blogger.