যুক্তরাষ্ট্রে ২৩৮ দিনে ২৪৭ বন্দুক হামলা

ম্যাস শুটিং বা ব্যাপক বন্দুক হামলা মার্কিন মুলুকে একটি অতিপরিচিত বুলি হয়ে উঠেছে এই চলতি বছরে। কেননা মাত্র ২৩৮ দিনে ২৪৭টি ম্যাস শুটিং হয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতার নামধারী এ ভূখণ্ডে। বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশ করেছে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট। ২৬ আগস্ট ভার্জিনিয়ায় দুই সাংবাদিক হামলার মাধ্যমে ২৪৭তম ম্যাস শুটিং ক্রিমিনাল রেকর্ড খাতায় স্থান পেয়েছে। বিশ্বজনতার নিরাপত্তায় কানফাটা বুলি আওড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাই বিপদসংকুল করে তুলেছে নিজের আবাসভূমি। ব্যক্তিগত বন্দুক হামলার ওপর করা এক জরিপে প্রথম স্থানও লাভ করেছে তারা। পৃথিবীজুড়ে ১৯৬৬-২০১২ সালের মধ্যে ম্যাস শুটিংয়ের ৩১ শতাংশই ঘটেছে এদেশে। অর্থাৎ মোট ২৯১টি হামলার ৯০টিই সংঘটিত হয়েছে আধুনিকতা ও সভ্যতার তেজে ফেঁপে ওঠা আমেরিকায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিদ্যাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম ল্যাংকফোর্ডের চালানো গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। আমেরিকায় ম্যাস শুটিং বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তির বন্দুক হামলায় ওই ব্যক্তিসহ অন্তত চারজন আহত হওয়া।
গানসআরকুল সাবরেডিট নামের বন্দুক হামলা চিহ্নিতকারী প্রতিষ্ঠানের দেয়া এ সংজ্ঞা যদিও এফবিআই ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন তবুও এটাই সর্বাধিক গৃহীত। অনলাইনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা লাইভ সায়েন্স এক খবরে উল্লেখ করেছে আমেরিকায় সার্বিক অপরাধের হার হ্রাস পেলেও ব্যক্তিগত বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে হুহু করে। আর এটাই বড় দুঃশ্চিন্তা ও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের। ৩৫ কোটি মানুষের দেশটিতে ৩০ কোটি আধুনিক অটোমেটেড আগ্নেয়াস্ত্রের প্রাইভেট লাইসেন্স রয়েছে। দেশটির সহজ অস্ত্র নিয়ন আইন এ পরিস্থিতির জন্য দিয়েছে। বন্দুকবাজদের দৌরাÍত্ম্য এ জন্যই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ল্যাংকফোর্ড মনে করছেন। এছাড়া, আমেরিকানরা স্বাভাবিকভাবেই উচ্চাভিলাষী। সামান্য ব্যর্থতায় বিগড়ে যায় তাদের মস্তক। হলিউড অ্যাকশন সিনেমাগুলো এক কাল্পনিক জগতে বাস করতে শেখাচ্ছে তাদের। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী চেতনা অপরিপক্ক কিশোরদের পরিচালিত করে বন্দুক হামলায়। এসব কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ফ্যাক্স পাঠিয়ে ঘাতকের আত্মহত্যা : যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় দুই সাংবাদিকের হত্যাকারী ভেস্টার ফ্ল্যানাগান পুলিশের ধাওয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই তিনি এবিসি নিউজে একটি ফ্যাক্সও পাঠান। তাতে নিজেকে ভয়ংকর ‘হিউম্যান পাউডার কেজ’ বলে দাবি করেন তিনি। অর্থাৎ নিজেকে বিস্ফোরণের অপেক্ষায় থাকা বোমার সঙ্গে তুলনা করেন ফ্ল্যানাগার। কংগ্রেসকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করতে হবে
হোয়াইট হাউস
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় সর্বশেষ দুই সাংবাদিক নিহত হওয়ার পর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন পাসে কংগ্রেসকে চাপ প্রয়োগ করেছে হোয়াইট হাউস। বুধবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আর্নেস্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমেরিকার ছোট-বড় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্দুক সহিংসতার সর্বশেষ উদাহরণ এটি। এটি মোকাবেলায় কংগ্রেসকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে অগ্রসর জাতি। কিন্তু অস্ত্র নিরাপত্তা আইনের সাধারণ জ্ঞানটুকু আমাদের নেই।’ এদিকে ভার্জিনিয়ায় লাইভ সম্প্রচারের সময় দুই সাংবাদিককে গুলি করে হত্যার খবরের প্রতিক্রিয়ায় নিজের হৃদয় ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, সারা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র সম্পর্কিত যত ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে, ছোট-বড় প্রত্যেকটি ঘটনাই সন্ত্রাসবাদের অন্তর্ভুক্ত। এবিসি টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় ওবামা বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমি যতবারই শুনি এবং দেখি, প্রতিবারই আমার হৃদয় ভেঙে যায়।

No comments

Powered by Blogger.