দুই কারণে বাজার চড়া

একদিকে ঈদের ছুটি অন্যদিকে টানা বৃষ্টি। দুই অজুহাতে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। কোথাও মাংস কোথাও কাঁচা পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ঈদের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মাংসের দাম বেড়েছে। সঙ্গে কাঁচা পণ্যের দামও চড়া। পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি খোদ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও সরকারি বিপণন সংস্থা- ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) স্বীকার করেছে। তবে টিসিবি মাত্র পাঁচ পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ওয়েবসাইটে তুলে ধরেছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, খাসি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা ও  ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। একইভাবে প্রতিহালি ফার্মের ডিম ৩০ থেকে ৩২ টাকা ও প্রতি কেজি দেশী পিয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। টিসিবির ওই তথ্যে আরও দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম সর্বোচ্চ ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সাধারণত টিসিবি শাহজাহানপুর, মালিবাগ বাজার, কাওরান বাজার, ঠাঁটারি বাজার, বাদামতলী বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, মৌলভীবাজার, রহমতগঞ্জ বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল, নিউ মার্কেট, শান্তিনগর, ফকিরাপুল বাজার, মিরপুর-১ ও ৬নং বাজার এবং আজমপুর বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এর বাইরে রাজধানীর অন্যান্য বাজারের চিত্রও ছিল প্রায় অভিন্ন। ঈদের আগের দিন রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। বেড়েছে মসলার দরও। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদ ও টানা বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরেই বাজারে কাঁচা মরিচের দর বাড়ছে। একদিকে চাহিদা বেশি অন্য দিকে আমদানি কম। সব মিলিয়ে পণ্যের দাম বাড়ছে বলে জানান তারা। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম জানান, ৫ মাস আগেও ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে সীমান্ত দিয়ে গরু আনা একদম বন্ধ ছিল। তখন গরুর মাংস ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি হয়ে যায়। কিছু ব্যবসায়ী চাহিদা মেটাতে মিয়ানমার থেকে গরু আনা শুরু করেন। তখন কিছুটা কমে। তবে সীমান্তে বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে ঝামেলার কারণে সেখান থেকেও গরু আনা বন্ধ হয়ে যায়। সে থেকে গরুর মাংসের দাম বেড়েই চলেছে। এদিকে ঈদের আগের দিন শুক্রবার খুচরা বাজারে এক ধরনের আগুন ধরে যায়। সব পণ্যের দাম বাড়তি। এ সময় মানভেদে প্রতি কেজি শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, কাকরোল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ঝিঁঙা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, সাদা গোল আলু ২৫ টাকা, লাল গোলআলু ৩০ টাকা, ধোন্দল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, চিঁচিঙ্গা ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া প্রতি লিটার সয়াবিন তেল (লুজ) ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, ৫ লিটার বোতল ৪৫০ থেকে ৪৮৬ টাকা, এক লিটার বোতল ৯৩ থেকে ১১০ টাকা, পাম অয়েল (লুজ) প্রতি লিটার ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, পাম অয়েল সুপার প্রতি লিটার ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। বাজারে সবচেয়ে ভাল মানের এরফানের পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায়; যা কয়েকদিন আগে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি খোলা পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। একই সঙ্গে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এদিকে ঈদকে ঘিরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির (সাদা) দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়; যা আগে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা ছিল। লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা থেকে ২১৫ টাকায়; যা আগে ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নূরু হাজী বলেন, ঈদের সময় যানজট ও বৃষ্টির কারণে কাঁচা পণ্য আমদানিতে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। সে কারণে পণ্যের দর একটু ওঠানামা করছে। এছাড়া ঈদে কয়েকটি মসলার দর অতিরিক্ত বেড়েছে। এর মধ্যে পোলাওয়ের অনুষঙ্গ হিসেবে খ্যাত আলু বোখারার দর প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, যা তিন দিন আগেও ছিল ৪০০ টাকা কেজি। এ নিয়ে মশলার দর ঈদের আগের দুই দফা বাড়লো। বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী এনায়েতুল্লাহ জানান, মসলার দর ওঠানামা স্বাভাবিক ব্যাপার। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মসলার দর বাড়ে-কমে। এগুলোর দর বছরের বেশির ভাগ সময় ওঠানামা করে। তবে ঈদে মসলার কাটতি তুলনামূলক বেশি কিন্তু আমদানি কম থাকায় কিছু মসলার দর সামান্য বেড়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.