সালাহ উদ্দিনের খোঁজ মিললেও রহস্যের জট খুলছে না

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরের সিভিল হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় আছেন। সুস্থ হলে আগামী সপ্তাহে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে সেখানকার পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।
নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস পর গত সোমবার ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে সালাহ উদ্দিন আহমদের হদিস মেলে। দুপুরে তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ জানান, শিলংয়ের হাসপাতাল থেকে তিনি স্বামীর ফোন পেয়েছেন। অন্যদিকে শিলং পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিলং শহরের গলফ লিংক এলাকায় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করার সময় তাঁকে আটক করা হয়। সে দেশে অনুপ্রবেশের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আটক করার সময় সালাহ উদ্দিন উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করছিলেন বলে স্থানীয় পুলিশ দাবি করলেও ছবিতে তাঁর পরনের পোশাক পরিষ্কারই দেখা যায়। পায়ের জুতাও ছিল চকচকে। সেভ করা মুখে পরিপাটিভাবে চশমা আঁটা। প্রশ্ন উঠেছে, অপহরণের পর দুই মাস আটক থাকা অবস্থায় কোনো মানুষের পক্ষে এমন পরিপাটি থাকা সম্ভব কি না। তা ছাড়া সীমান্ত পার হয়ে ওই জায়গায় তিনি কীভাবে পৌঁছালেন, এত দিন কোথায়, কী অবস্থায় ছিলেন, সেই রহস্য রয়েই গেছে। গতকাল বিভিন্ন মহলে এ বিষয়টি আলোচিত ছিল।
তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সালাহ উদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায়নি। বিএনপির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলো। তিনি নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে তেজগাঁও আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এদিকে হাসিনা আহমদ গতকাল সাংবাদিকদের জানান, সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর আর কোনো কথা হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব স্বামীর কাছে তিনি যেতে চান। এ জন্য তিনি ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
সালাহ উদ্দিনের ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে শিলং টাইমস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মানস চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সিভিল হাসপাতালের একটি কক্ষে সালাহ উদ্দিনকে রাখা হয়েছে। সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। গতকাল গণমাধ্যমের কোনো সংবাদকর্মী তাঁর কাছে যেতে পারেননি। তিনি জানান, চিকিৎসকেরা তাঁকে বলেছেন, সালাহ উদ্দিনের হৃদ্রোগ ও লিভারের সমস্যা আছে। হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করলেও পরনের পোশাক পরিষ্কারই দেখা যায়। পায়ের জুতাও ছিল চকচকে। সেভ করা মুখ, পরিপাটি চশমা। দুই মাস আটক থাকা অবস্থায় এমন পরিপাটি থাকা সম্ভব? ‘‘সালাহ উদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায়নি। বিএনপির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলো। তিনি নিজেই আত্মগোপনে ছিলেন’’ আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আটক রাখার ব্যাপারে সালাহ উদ্দিন চিকিৎসক ও পুলিশকে কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে মানস চৌধুরী বলেন, পুলিশ তাঁকে জানিয়েছেন, সালাহ উদ্দিন এখনো ঠিকমতো কিছু বলতে পারছেন না। কোনো কথা জানতে চাইলে চুপ থাকছেন। পুলিশ তাঁর সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করছে। স্থানীয় পুলিশের ধারণা, মঙ্গলবার ভোরে তাঁকে একটি মারুতি জিপসি গাড়িতে করে শিলং শহরে পৌঁছে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ তাঁকে আটক করার আগ পর্যন্ত তিনি একটি স্থানেই বসে ছিলেন। তবে তিনি আগে থেকেই ভারতে ছিলেন, নাকি সীমান্তের ওপার থেকে পাঠানো হয়েছে, তা পুলিশ বলতে পারেনি। এমনকি তাঁর পরনের পোশাক ও পায়ের জুতা পরিষ্কার ছিল। চোখ বাঁধা থাকার কথা বলা হলেও ছবিতে তাঁর চোখে চশমা দেখা যাচ্ছে।
এদিকে স্বামীর খোঁজ পাওয়ার পর গতকালই ভিসার জন্য আবেদন করেন সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী। ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওনারা বলেছেন, আমরা চেষ্টা করছি। হবে ইনশা আল্লাহ।’
ভিসা হলে আজকেই যাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিনা বলেন, ‘আশা করছি। যদি ভিসা হয়ে যায়, টিকিট পাব কি না, তারপর কীভাবে যাব, কোন দিক দিয়ে গেলে সুবিধা হবে, সেগুলো ডিসাইড করে তারপরে যাব।’
শিলংয়ের পুলিশ বলছে, ওনার সঙ্গে পাসপোর্ট নেই। তাই তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ হতে পারে। এ নিয়ে প্রশাসন কিংবা সরকারের কারও সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, ‘আমরা আগে ওখানে পৌঁছাব। পরিস্থিতি বোঝার পর তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’
স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতা তো সব সময়ই কামনা করে আসছি। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া তো কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। অবশ্যই সরকারের সহযোগিতা চাই।’
গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩-বি নম্বর সড়কের একটি বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সালাহ উদ্দিন আহমদকে ধরে নিয়ে যায়। হাসিনা আহমদ তখন অভিযোগ করেন, স্বামীর খোঁজ চেয়ে পরদিন রাতে তিনি গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি। সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে গেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.