‘হাসিনাকে ভোটচুরির কাফফারা দিতে হবে’ by কাফি কামাল

আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ আখ্যায়িত করে ভোট চুরির জন্য শেখ হাসিনাকে কাফফারা দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, আমেরিকায় গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা নির্বাচনে যাইনি বিদায় কাফফারা দিচ্ছি। আমরা নির্বাচনে না গিয়ে প্রমাণ করেছি, দেশের ৯৫ ভাগ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা ভুল করিনি। কিন্তু জনগণের ভোটচুরি ও বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে কোটি কোটি টাকা চুরির হিসাব যখন দিতে তখন তো আপনাদেরই কাফফারা দিতে হবে। আজ বিকালে জামালপুর জেলা স্কুল মাঠে ২০ দল আয়োজিত বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, এই সংসদ অবৈধ, এই সরকার অবৈধ। এই সংসদে যে আইন পাস হচ্ছে সে আইনগুলো অবৈধ। কারণ আপনাদের ভোটে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হয়নি। তাদের আইন পাস করার কোন অধিকার নেই।

আওয়ামী লীগ একটি ছেঁচড়া দল
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও ছেঁচড়া দল। উপজেলা নির্বাচনে তারা কিভাবে কারচুপি করেছে। তাই শেখ হাসিনার অধীনে কোন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। জনগণ সেই নির্বাচনে যাদের পছন্দ তাদেরকে নির্বাচিত করবে।
বিএনপির সঙ্গেই আলোচনায় বসতে হবে
সরকারকে আবারও আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দল। চোর-চোট্টা নিয়ে বিদেশ গিয়ে লাভ হবে না। ‘৮৬ সালে এরশাদের সঙ্গে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ স্বঘোষিত জাতীয় বেঈমান হয়েছে। আলোচনায় বসতে হলে বিএনপির সঙ্গে বসতে হবে। বিএনপিকে ভয় পায় তাই তারা আলোচনায় বসতে চায় না। বিএনপিকে বাদ দিয়ে  কোন নির্বাচন হবে না। যদিও ষড়যন্ত্র চলছে। যদু-মধুদের দিয়ে কিছু হয় না। বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এর বাইরে কোন নির্বাচন বাংলার মানুষ মানবে না।
র‌্যাবের জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে হবে
আবারও র‌্যাব বাতিলের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা র‌্যাব গঠন করেছিলাম সন্ত্রাস দমনের জন্য। কখনও রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করিনি। কিন্তু র‌্যাব এখন টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করছে। নারায়ণগঞ্জে ১১ জনকে খুন করেছে। বিএনপির ৩১ জনকে খুন ও ৫৬ জনকে গুম করেছে। র‌্যাবের যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জামাই আদরে রাখা হয়েছে। এখনও র‌্যাবের  অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। অবিলম্বে তাকে চাকুরিচ্যুত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি আমি। গোয়ান্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সব এজেন্সির লোকদের নাম আমি জানি। আপনাদের নাম আমি বলতে চাই না। আমরা ক্ষমতায় থাকতে তাদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করিনি। কিন্তু এখন এজেন্সিগুলো নানা অপকর্ম করছে। আপনাদের যার যা কাজ তা করেন। তা না হলে কিন্তু আপনাদেরকে একদিন আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
টকশোতে যারা তেল মারেন তাদের আসতে বলা হয়
খালেদা জিয়া বলে, এই অবৈধ সরকার একের পর আইন করছে। বাকশাল কায়েম করতে সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। ৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানও একইভাবে ৪টি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এবারও বাকশাল কায়েম করার উদ্দেশে একের পর এক গণমাধ্যম বন্ধ করছে সরকার। তিনি বলেন, টকশোগুলো সরকারের ভুল-ত্রুটি নিয়ে সুশীল সমাজের লোকেরা সমালোচনা করেন। যারা সত্য কথা বলেন, সমালোচনা করেন তাদের আসতে দেয়া হয় না। কিন্তু যারা তেল মারতে পারেন তাদের আসতে বলা হয়। 
বিচার বিভাগের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিচার বিভাগ এমনিতেই ঠুঁটো জগন্নাথ। তার ওপর বিচার বিভাগকে নিজের হাতে নেয়ার জন্য অভিশংসন আইন করেছে। এই আইনের মাধ্যমে বিচারকদের ভয় দেখাবে তারা।  এর ফলে বিচারকদের বলবেÑ ওমুককে জেল দিতে হবে, ওমুককে রিমান্ডে নিতে হবে। বিচারকরা আর স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। সরকার বিচার বিভাগের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।  সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, কোন মানুষ যখন অপরাধ করেন তখন আল্লাহ তাকে বাড়তে বাড়তে দেন। বাড়তে বাড়তে এমন একপর্যায়ে পৌঁছবে তখন আল্লাহ একটান দেবে একেবারে সোজা নিচে পড়ে যাবে। চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখবে।  
ঈদের পর আন্দোলন হবে
উপস্থিত জামালপুরবাসীকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বলেন, আপনারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছেন। ইনশাআল্লাহ ঈদের পর আমরা আন্দোলনে নামবো। এই খুনি, অত্যাচারী সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
এর আগে দুপুর সোয়া ২টার সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে জনসভা শুরু হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীমের সভাপতিত্বে জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, এলডিপির  চেয়ারম্যান কর্নেল (অ.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মোহম্মদ ইসহাক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহউদ্দীন মতিন, জাগপার সভাপতি সফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব  মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.