‘হঠাৎ সংশোধনী নিয়ে প্রশ্ন’

৬ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপনের অনুমতি থেকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো পর্যন্ত লেগেছে এ সময়। আর সংসদীয় কমিটিকে সময় দেয়া হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ। তড়িঘড়ি করে সংবিধানের কেন এই সংশোধনী- সে প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে আদালত পাড়ায়ও। মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদনের পর থেকেই প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিরোধিতা করে আসছিলেন শীর্ষ আইনবিদরা। দলমত নির্বিশেষে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন তারা। সর্বশেষ রোববার দেশের শীর্ষস্থানীয় চার আইনজীবী এক যৌথ বিবৃতিতে সংশোধনীর ব্যাপারে এগিয়ে না যেতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সিনিয়র আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে নেয়া হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি।  আমাদের সুপ্রিম কোর্ট অষ্টম সংশোধনী মামলার যুগান্তকারী রায়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ বলে ঘোষণা দিয়েছে। কোন আলোচনা, বিতর্ক বা যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ভারতের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন ছাড়াই হঠাৎ কেন সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের সাবেক এটর্নি জেনারেল এইচ এম সিরভাই অভিশংসন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি তাঁর দ্য পজিশন অব দ্য জুডিশিয়ারি আন্ডার দ্য কনস্টিটিউশন অব ইন্ডিয়া’ বইয়ে লিখেছেন, ‘একজন বিচারপতিকে অপসারণের ক্ষমতা আইনপ্রণেতাদের ওপর ন্যস্ত হলে রাজনৈতিক দল ও রাজ্যের বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ১৮৩০ সালের পর বৃটেনে কোন বিচারপতি অপসারণ করা হয়নি। দেশটিতে বিচারপতিদের অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে একজন বিচারককে অভিশংসন করার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। একজন বিচারকের আচরণ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করার পর্যাপ্ত সময় সিনেট পায় না। এ ধরনের তদন্তের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনা কাজ করে। বিবৃতিতে চার আইনজীবী আরও বলেন, সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য দলের নিয়ন্ত্রণাধীন। ফলে সংসদে বিচারপতিদের অভিশংসন করা হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে। বিচারপতিদের অভিশংসন সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনের আগে জাতীয় ঐকমত্যের আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, একমাত্র সঠিক আলোচনার পরই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে দেয়ার উদ্দেশ্য অসৎ: মওদুদ
উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে দেয়ার উদ্দেশ্য অসৎ ও দুরভিসন্ধিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে প্রেসিডেন্টের কাছে দিয়েছিলেন। ওই সময় বেশির ভাগ পত্রিকাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করে এবং এটা তারা স্বীকার করতেও লজ্জাবোধ করে। কিন্তু জিয়াউর রহমান বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। সভায় অন্যদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অভিশংসন বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি আজ এক আলোচনা সভা আহ্বান করেছে। দলমত নির্বিশেষে সিনিয়র আইনজীবীদের এ সভায় অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.