উন্নয়নের ডাক দিলেন মোদি

ভারতের ৬৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল
নয়াদিল্লির লাল কেল্লায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতির
উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি গত বৃহস্পতিবার তাঁর ভাষণে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে বলেছিলেন। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেও এর প্রতিফলন দেখা গেল। তিনি বললেন, জাতপাত ও সাম্প্রদায়িকতার লড়াই বন্ধ করতে হবে। এই বিষের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। প্রথা ভাঙা এ ভাষণে দেশকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করলেন নরেন্দ্র মোদি। বুলেটপ্রুফের ঘেরাটোপহীন: স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে লাল কেল্লা থেকে দেওয়া মোদির প্রথম ভাষণ নিয়ে আগ্রহ ছিল প্রবল। নানাভাবে প্রথা ভেঙে তিনি যেন সেই আগ্রহের যৌক্তিকতাই প্রমাণ করলেন। যেমন, ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর থেকে লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার স্বার্থে বুলেটপ্রুফ কাচের যে ঘেরাটোপ ব্যবহৃত হয়ে আসছিল, মোদি তা প্রত্যাখ্যান করলেন। বৃষ্টি হলে (অবশ্য হয়নি) মাথায় ছাতা না ধরার হুকুমও দিয়েছিলেন তিনি। লিখিত ভাষণ পাঠ না করে লিখে আনা ‘পয়েন্ট’ ধরে দীর্ঘ (জওহরলাল নেহরুর পরে এটাই দীর্ঘতম) ভাষণও দিলেন তাঁরই মতো করে। আমন্ত্রিত আমজনতাও: এত বছর ধরে লাল কেল্লার প্রান্তর সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। মোদির নির্দেশে সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল হলো। আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের পাশাপাশি ১০ হাজার সাধারণ মানুষের বসারও বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।
পোশাক নির্বাচনেও মোদি ছিলেন সজাগ। ক্রিম রঙের হাফ হাতা পাঞ্জাবি ও পাজামার সঙ্গে পরেছিলেন গেরুয়া রঙের পোলকা ডট প্রিন্টেড পাগড়ি, যার নিচের দিকটা ছিল সবুজ রঙের। অর্থাৎ, স্বাধীনতা দিবসের দিন ভারতের তেরঙায় মুড়েছিলেন শরীরকে। দেশকে এগিয়ে নিতে: দেশটাকে কীভাবে এগিয়ে নিতে চাইছেন, তার বহু ঘোষণা ও ইঙ্গিত এই ভাষণে দিলেন মোদি। উন্নত বিশ্বের প্রতি তাঁর আহ্বান, বেচুন যেখানে খুশি, কিন্তু আপনাদের জিনিস ভারতে তৈরি করুন। গ্রামের উন্নতির মধ্য দিয়ে দেশের উন্নতির জন্য ‘সংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনায় প্রত্যেক সাংসদকে নিজের আসনে একটি করে গ্রামকে আদর্শ গ্রামে পরিণত করতে হবে। ক্রমেই এর পরিধি বাড়বে। এ ছাড়া ‘জন ধন যোজনা’র আওতায় সব গরিবের জন্য ব্যাংক হিসাব, ডেবিট কার্ড ও এক লাখ টাকা করে বিমা হবে। ‘ডিজিটাল ভারত’ গড়ার ওপরও জোর দিলেন। জানালেন, গান্ধীজির জন্মদিন থেকে দেশের প্রতি স্কুলে টয়লেট স্থাপনের কর্মসূচি নেওয়া হবে। যোজনা কমিশনের (পরিকল্পনা কমিশন) অবসান ঘটানোর কথাও তিনি ঘোষণা করেন। বলেন, যোজনা কমিশনের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। সে জায়গায় নতুন সংস্থা হবে। লজ্জায় ফেলেছে ধর্ষণ: একের পর এক ধর্ষণ ভারতকে লজ্জায় ফেলেছে মন্তব্য করে মোদি অভিভাবকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘মেয়েসন্তানের ওপর দায় না চাপিয়ে আপনারা ছেলেদের সংশোধন করুন।’ প্রতিবেশীদের প্রতি: প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপারে তাঁর নীতি যে পূর্বসূরিদের চেয়ে আলাদা হবে, তার প্রমাণ মোদি এরই মধ্যে বারবার রেখেছেন। গতকালও তার ছোঁয়া পাওয়া গেল। পাকিস্তানের নাম না করে তিনি বলেন, ‘সংঘাতের রাস্তায় কেন? আমরা তো একযোগেই স্বাধীনতার লড়াই লড়েছি?’ উপমহাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে প্রতিবেশী দেশগুলোকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজে নামারও আহ্বান জানান মোদি। তিনি বলেন, ‘সার্কের সদস্য হিসেবে মানবজাতির কল্যাণে এটুকু অন্তত আমরা করতেই পারি।’

No comments

Powered by Blogger.