যুদ্ধবিরতি শেষ হতেই ফের হামলা

গাজায় গতকাল নতুন করে চালানো ইসরায়েলি বিমান
হামলায় নিহত শিশু ইব্রাহিম আল-দাওয়াওয়াসার মায়ের
শোক। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে মিসরে
আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর ওই বিমান হামলা চালানো হয়। রয়টার্স
ফিলিস্তিনের গাজায় গতকাল শুক্রবার ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই আবার দুই পক্ষের সংঘাত শুরু হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা পার হওয়ার পর ইসরায়েলে রকেট ছোড়া শুরু করে হামাস। জবাবে গাজায় আবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান হামলায় এক ফিলিস্তিনি শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। টানা চার সপ্তাহের ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় প্রায় দুই হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির পর গত মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় ইসরায়েল ও গাজা শাসনকারী ইসলামপন্থী সংগঠন হামাস। উভয় পক্ষকে একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করতে মিসরের মধ্যস্থতায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিকেরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ অন্তত আরও ৭২ ঘণ্টা বাড়ানোর জন্য কায়রোতে চলমান আলোচনা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, গতকাল স্থানীয় সময় সকালে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই গাজা থেকে ইসরায়েলের ভেতরে রকেট ছোড়া শুরু করেছে হামাস। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ১৮টি রকেট ছুড়েছে তারা। ইসরায়েলের একটি সেনাসূত্র যুদ্ধবিরতির মেয়াদের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে গাজা থেকে দুটি রকেট এসে পড়ার দাবি করলেও হামাস সেগুলো ছোড়ার কথা অস্বীকার করে। গাজার যোদ্ধারা গতকাল মোট ১০টি রকেট ছুড়েছে বলে দাবি করে। এর মধ্যে দুটিকে ভূপাতিত করে ইসরায়েলের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’। রকেটের আঘাতে দুজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। এদিকে ইসরায়েল হামাসের রকেট হামলার জবাব দিয়েছে বিমান হামলার মাধ্যমে।
এর প্রথম শিকার হয়েছে ফিলিস্তিনি এক শিশু। ১০ বছর বয়সী ওই শিশুটি গাজা সিটির একটি মসজিদের কাছে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়। অন্যত্র নিহত হয় আরও চারজন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা গাজাজুড়ে বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী অবস্থান’-এ হামলা চালিয়েছে। গাজা সিটিতে দৃশ্যত ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রকাণ্ড এক বিস্ফোরণের পর সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটন্যান্ট কর্নেল পিটার লার্নার বলেন, ইসরায়েলে সন্ত্রাসীদের আবার রকেট হামলার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য, অসহনীয় এবং অদূরদর্শী। যুদ্ধবিরতি ভাঙার ব্যাপারে হামাসের সিদ্ধান্তের জবাব দেবে আইডিএফ। এদিকে ইসরায়েলি সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, রকেট হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আর ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিসংক্রান্ত কোনো আলোচনায় যাবেন না। যদিও ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি চলাকালে দেশটি বলেছিল, তারা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে রাজি আছে। অন্যদিকে হামাস বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে রাজি না হলেও কায়রোতে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়। গাজার আরেক প্রভাবশালী ইসলামপন্থী সংগঠন ইসলামিক জিহাদ বলেছে, কায়রো আলোচনা শেষ হয়ে যায়নি। তারা আগ্রাসন ঠেকাতে এবং নিজেদের জনগণের দাবি অর্জনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। হামাসের মূল দাবি হচ্ছে, গাজার ওপর থেকে ইসরায়েলের আট বছর ধরে চলমান অবরোধ তুলে নেওয়া এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া। তবে এসব বিষয়ে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত খুব সামান্যই আগ্রহ দেখিয়েছে। বরং তারা হুঁশিয়ার করে আসছিল, হামাস নিঃশর্তভাবে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ না বাড়াতে রাজি হলে এবং রকেট হামলা শুরু করলে তার কড়া জবাব দেওয়া হবে। গতকাল সকালে গাজা থেকে ইসরায়েলের ভেতরে আবার রকেট ছোড়া শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির সেনাবাহিনীকে কড়া জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন।

No comments

Powered by Blogger.