নতুন অধ্যায়ের সূচনা -মোদির নেপাল সফর

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুদিনের (৩ ও ৪ আগস্ট) সফরে নেপাল ঘুরে এলেন। তাঁর এই সফর দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নবায়নের পথকে সুগম করবে বলে অনেকেই আশা করছেন। মোদির নিজের ভাষায়, ‘এই সফর নেপাল ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।’ নেপালের রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ তাঁর এই সফরকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। তারা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানিয়েছে। নেপালি প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা চিরাচরিত প্রথা ভেঙে মোদিকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হন। জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের পর মোদিই প্রথম বিদেশি সরকারপ্রধান যাঁকে নেপালি পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে আহ্বান জানানো হয়। তাঁর ভাষণে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকেই।

নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-মাওয়িস্টের (সিপিএন-মাওয়িস্ট) নেতা বাবুরাম ভট্টরাইয়ের কথায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ভট্টরাই তাঁর টুইটার বার্তায় লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদি তাঁর জাদুকরি ভাষণ দিয়ে নেপালি জনগণের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। ভারতবিরোধী বলে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সিপিএন-মাওয়িস্ট নেতা পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ড বলেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদি তাঁর ভাষণে নেপালের চলমান শান্তিপ্রক্রিয়ার প্রতি খোলাখুলি সমর্থন দিয়েছেন, এ জন্য আমরা খুশি৷’
গত ১৭ বছরের মধ্যে মোদির সফরই ছিল ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম নেপাল সফর। শেষবার নেপাল সফরে গিয়েছিলেন ইন্দর কুমার গুজরাল। মোদির এই সফরকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। চীনের প্রভাব ঠেকাতে মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের যে নীতি নিয়েছেন, নেপাল সফর তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
মোদি তাঁর সফরে যে বার্তাটি পৌঁছে দিতে পেরেছেন, তা হলো, প্রতিবেশীদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারত নাক গলাবে না, শুধু তাদের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক উন্নয়নের সমান অংশীদার হতে বিকশিত হতে সহায়তা করবে। এই সূত্রেই নেপালের জাতীয় সড়ক নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ও বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ১০০ কোটি ডলার আর্থিক ঋণদানের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি ১৯৫০ সালে ভারত-নেপাল মৈত্রী চুক্তি সংশোধনের আশ্বাসও দিয়েছেন। নেপালিরা এই চুক্তিকে বৈষম্যমূলক বলে মনে করেন। অতীতে বহুবার এই চুক্তি সংশোধনের দাবি তুলেও নেপাল নয়াদিল্লির কাছ থেকে কোনো সদর্থক সাড়া পায়নি। নেপালে সংবিধান রচনার যে উদ্যোগ চলছে, তাকে সমর্থন করে মোদি একটি প্রজাতান্ত্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের জন্য তাঁর শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন।
নেপালের সাবেক পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী ভেখ বি থাপা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মোদি আমাদের সুন্দর সময় উপহার দিয়েছেন। তিনি সবটাতেই অনেক নম্বর পেয়েছেন। ভবিষ্যতের কথা তো বলতে পারি না। সময়ই তা বলে দেবে।’
যাহোক, সব মিলিয়ে মোদির নেপাল সফরকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি এ রকম মনোভাব বজায় রাখলে তা আখেরে ভারতের জন্যই মঙ্গলজনক হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
রোকেয়া রহমান

No comments

Powered by Blogger.