যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা জোরদার

গাজার বাসিন্দা হিসেবে যুদ্ধ ও ধ্বংসে অভ্যস্ত হয়ে
উঠেছে এই শিশুরা। এ কারণেই হয়তো ইসরায়েলি
গোলায় বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপে বল খুঁজে পেয়ে
খুশি এই ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবি: এএফপি
সর্বশেষ দফা যুদ্ধবিরতিও ভেঙে যাওয়ার পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। তাদের নির্বিচারে গোলাবর্ষণ কেড়ে নিয়েছে আরও ১০৭ জনের প্রাণ। বিধ্বস্ত হয়েছে গাজা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশ। গাজার রাজনৈতিক নিয়ন্তা হামাসও থেমে নেই। ইসরায়েলের দিকে তারাও রকেট হামলা অব্যাহত রেখেছে। তবে সেসব হামলায় প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে এ রকম একটি নাজুক পরিস্থিতিতে মার্কিন কংগ্রেস ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘আয়রন ডোমে’র জন্য ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তহবিল অনুমোদন করেছে। আয়রন ডোমের সাহায্যে ইসরায়েল হামাসের ছোড়া রকেট আকাশেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।
বিদ্যমান সামরিক সহযোগিতার যুক্তি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ইতিমধ্যে সে দেশেই মজুত মার্কিন সমর উপকরণ ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও আল-জাজিরার। গত ৭ জুলাই থেকে চলা ইসরায়েলের এ অভিযানে গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৬৫০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় নয় হাজার। হতাহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। পক্ষান্তরে ইসরায়েল ৬৬ জনকে হারিয়েছে; যাঁদের মধ্যে ৬৩ জনই সেনাসদস্য। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় আরেক দফা মানবিক যুদ্ধবিরতিতে যায় ইসরায়েল ও হামাস। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক যেতে না-যেতেই গাজার দক্ষিণে রাফা শহরে ফের আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামাসের চোরাগোপ্তা হামলায় তাদের দুজন সেনা নিহত হওয়া ছাড়াও এক সেনা অপহৃত হয়েছে। তবে হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কথিত অপহৃত সেনাটি সংঘর্ষে নিহত হয়ে থাকতে পারে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, রাফা শহরে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ব্যাপক বিমান হামলা চালানো শুরু হয়। গতকাল সকালেও তা অব্যাহত ছিল। হামলায় গাজা শহরে অবস্থিত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ওই হামলার ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক ইমতিয়াজ তায়েব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন হামলা চালানো হলো, তা স্পষ্ট নয়। তবে গাজার পরিস্থিতি কতটা অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এ ঘটনা এটাই প্রমাণ করে।
দুই পক্ষকে ওবামার আহ্বান: মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ‘নিখোঁজ’ ইসরায়েলি সেনার ‘নিঃশর্ত’ মুক্তি দাবি করেছেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, গাজার বেসামরিক লোকজনকে রক্ষায় ইসরায়েলকে আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে ইসরায়েলের এ অভিযানকে ‘বোকামি’ ও ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাজ্যের জোট সরকারের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির সাবেক নেতা লর্ড অ্যাশডাউন। তিনি উভয় পক্ষকে সহিংসতার পথ ছেড়ে শান্তি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। অ্যাশডাউন বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা হাতে থাকার পরও সামরিক অভিযান শুরু করা ইসরায়েলের জন্য বোকামি হয়েছে।’ পাশাপাশি সাবেক ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রক্ষণশীল দলের এমপি পিটার লাফ প্রধানমন্ত্রীকে চলমান গাজা-সংকটের বিষয়ে আরও দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ক্ষমতাসীন দলটির আরও কয়েকজন এমপি অনুরূপ আহ্বান জানিয়েছেন। অস্ত্রবিরতির আহ্বান মিসরের: দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি গতকাল বলেছেন, মিসরের অস্ত্রবিরতি পরিকল্পনাই গাজায় সংঘাত নিরসনের ‘সুবর্ণ সুযোগ’ হতে পারে। তিনি এই অস্ত্রবিরতি পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘এটাই উপযুক্ত সময়। ফিলিস্তিনে রক্তপাত বন্ধে ও গাজার আগুন নেভাতে আমাদের দ্রুত এর সুবিধা নিতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.