গাজার বাড়ি বাড়ি, স্কুলে ইসরাইলি সেনাদের মলমূত্র ত্যাগ

ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংসতার স্বাক্ষর রেখে গেছে ইসরাইলি সেনারা। তারা ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরসহ বেশির ভাগ স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করেছে। দেয়ালে দেয়ালে লিখে গেছে জাতিগত বিদ্বেষমুলক লেখা। তারা ভাঙচুর করেছে আসবাবপত্র। এসব তথ্য উঠে এসেছে বৃটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। এর লেখক হ্যারিয়েট শেরউড। এতে বলা হয়, গাজার এক বাসিন্দা আহমেদ ওয়েদাত। তার সঙ্গে সাক্ষাত হয় শেরউডের। এ সময় তিনি জানান, ইসরাইলি সেনারা গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে। এর দু’দিন পরেই তিনি বাড়ি ছাড়েন ১৩ সদস্যকে নিয়ে। কিন্তু বাড়ি ফিরে তিনি কি দেখতে পাচ্ছেন! তাদের বাড়িতে ইসরাইলি সেনাদের মলমূত্র। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইসরাইলি সেনাদের মল। প্লাস্টিকের বোতলে ভরে রেখেছ মূত্র। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্থল অভিযানের সময় ওই বাড়িটি দখলে রেখেছিল ইসরাইলি সেনারা। গাজায় ইসরাইলি অভিযানে সেনাদের কামান গোলা ও বিমান থেকে ছোড়া বোমার আঘাতে প্রায় দু’ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। এক মাসের অভিযানে বেশ কয়েকবার অস্ত্রবিরতির ঘোষণা শুনে বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন ওয়েদাতরা। প্রতিবারই তাদেরকে ফিরিয়ে দেয় দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনী। স্থল অভিযানের সময় বাসায় অবস্থানকালে এর সিঁড়িতে, খাবার টেবিলে এমন কি শোবার ঘরে জাতিগত বিদ্বেষমূলক বিভিন্ন বক্তব্য লিখে যায় ইসরাইলি সেনারা। চার তলা ভবনের সিঁড়িগুলোতে ‘ফাক হামাস’ (হামাস গোল্লায় যাক) এমন লেখা দেখতে পেয়েছেন বাসিন্দারা। এছাড়া, ‘বার্ন গাজা’ (গাজাকে পুড়িয়ে দাও), ‘গুড আরব ইজ ডেড আরব’ (আরবরা মৃতই ভাল) এ ধরনের কটূক্তি লেখা ছিল খাবারের টেবিলে। শোবার ঘরে ইসরাইলি জাতীয় পতাকার মধ্যে থাকা ‘দ্য স্টার অব ডেভিড’ ( ছয় কোণের নীল রঙয়ের তারকা) এঁকে যায় সেনাবাহিনী। ৫২ বছর বয়সী ওয়েদাত বলেন, ৫ বার ঘরের মেঝে পরিষ্কার করলাম। তার পরেও দুর্গন্ধ যাচ্ছে না। ওই বাসার চারটি টিভি, একটি ঘড়ি, কম্পিউটার ও ঘরের অন্য আসবাবপত্র নষ্ট করে গেছে সেনারা। এছাড়া, বাড়িতে বিপদকালের জন্য সঞ্চিত ১০ হাজার ডলারও সেন্যরা চলে যাওয়ার পর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এই ফিলিস্তিনি। স্থল অভিযানের আগে বিমান থেকে ছোড়া গোলায় বিধ্বস্ত হয়েছিল বাড়িটির ছাদ। বাড়ির সীমান দেয়ালেও গোলার আঘাতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শোবার কক্ষে আরও ছবি এঁকে রেখেছিল সেনারা। এতে দেখানো হয়েছে বাড়ির দেয়াল ও তার কিছু দূরেই ইসরাইলি সীমান্ত। বাড়ির জানালার ভাঙ্গা কাঁচের ফাঁক দিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের ইসরাইলি সীমান্তের দিকে আঙ্গুল তুলে ওয়েদাত বলেন, সেনারা বুঝাতে চেয়েছে, সীমান্ত থেকে তোমরা বেশি দূরে নও। ঘটনাটি সম্পর্কে ইসরাইলি সেনা বাহিনীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছেন গার্ডিয়ান প্রতিবেদক। তবে এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। ওই বাড়ি থেকে গাড়িপথে আধাঘণ্টার দূরত্বেই রয়েছে বেইত হানুন গার্লস স্কুল। স্থল অভিযানের সময় সেখানেও অবস্থান নিয়েছিল ইসরাইলি সেনারা। স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক ফায়েজ জানান, ইসরাইলি সেনারা স্থানে স্থানে মলত্যাগ করে গেছে। বোতল ভর্তি করে রেখে গেছে মূত্র। বালিকা বিদ্যালয়ের ব্লাকবোডে লিখেছে- এখানে তোমাদেরকে ধর্ষণ করা হবে। ভুলে যেও না, এখনই তোমাদের মরার সময়। অবশ্য ইসরাইলি সেনাদের এ ধরনের লেখালেখির পাল্টা জবাব এসেছে হামাসের দিক থেকে। সেনারা চলে যাওয়ার পর সেখানে ফিরে আসে হামাসের সশস্ত্র দল কাসেম ব্রিগেডের অস্ত্রধারীরা।

No comments

Powered by Blogger.