দরিদ্র শিশুদের দিয়ে সেক্স- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিশু যৌন পর্যটন

শিশু যৌন পর্যটনের প্রক্রিয়া অনেকটা এরকম- ধনী দেশের একজন শিকারী মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দরিদ্র কোন দেশে সফর করবে। ওই মধ্যস্থতাকারী হতে পারে একজন দালাল এমনকি সে হতে পারে হতভাগ্য কোন শিশুর পরিবারের সদস্য। তেমনটা হলে ওই শিকারী- শিশুটির পরিবারকে নানা উপহার আর অর্থ দিয়ে ভাসিয়ে দেবে। বিনিময়ে পরিস্থিতির শিকার শিশুর সঙ্গে একান্তে সময় যাপন। শেষ পর্যন্ত ওই অপরাধী আকাশ পথে উড়াল দিয়ে ঠিকই দেশে ফিরে যায়। তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলতে থাকে, যেন কোন কিছুই ঘটেনি। এদিকে, দরিদ্র দেশগুলোতে সস্তা ইন্টারনেট সংযোগের দ্রুত প্রসারের কারণে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জঘন্য এ গল্পে নতুন মোড় যুক্ত হয়েছে। এর নাম ‘ভার্চুয়াল ট্রাফিকিং’। এখানে, ভিডিও চ্যাট রুমে শিকারীদের সঙ্গে শিশুদের সাক্ষাৎ হয়। জাতিসংঘ ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ৭ লাখ ৫০ হাজার সম্ভাব্য শিকারী দিনের যে কোন সময় অনলাইনে থাকে। এফবিআই’র অনুমান এ ধরনের কমপক্ষে ৪০ হাজার চ্যাট রুম রয়েছে। নতুন এ প্রযুক্তির সুবাদে বিবৃত যৌন চাহিদার এসব লোকজন ভ্রমণ ব্যয় থেকে রেহাই পাচ্ছে। তারপরও বিশ্বের অপর প্রান্ত থেকে দুর্ভাগা শিশুদেরকে নিয়ে আসছে নিজেদের বেডরুমে। চলতি বছরের শুরুতে টানা কয়েকটি যৌথ পুলিশ অভিযানে কিছু কটেজ ইন্ডাস্ট্রি আর ওয়েব স্ট্রিমিং সেক্সের আস্তানার খোলনলচে উন্মোচিত হয়েছে। যেখানে যৌন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে শিশুদের আটকে রাখা হয়। এগুলোর বেশকিছু পরিচালনা করছে দরিদ্র পরিবার। শিশুদেরকে দিয়ে অর্থ উপার্জন করার চেষ্টায় আছে তারা। তেরে দ্য হোমেস (টিডিএইস) নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি এনজিও। সংস্থাটি শিশু হয়রানি রোধে কাজ করে চলেছে। গত নভেম্বরে তাদের প্রকাশিত একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে, বিকৃত যৌন মানসিকতার এসব ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করা কতটা সহজ। তারা ফিলিপাইনের ১০ বছরের এক বাচ্চা মেয়ের ভুয়া প্রোফাইল ব্যবহার করে মাত্র ১০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৭১টি ভিন্ন দেশের ২০ হাজার পেডোফাইলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা সহজেই তাদের পরিচয়-ঠিকানা প্রকাশ করে দেয়। টিডিএইচ এমন ১০০০ ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে তাদের বিস্তারিত ইন্টারপোলের কাছে হস্তান্তর করেছে। এরপর থেকে কয়েকটি দেশের পুলিশ বাহিনী ওইসব চ্যাটরুম শিকারীদের খুঁজে বের করতে ব্যস্ত সময় পার করেছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক বৃটিশ আর অস্ট্রেলিয়ান তদন্তাধীন রয়েছে। আমেরিকা ও কানাডা সহ কয়েকটি দেশের আইনে এসব শিশু যৌন অপরাধীদেরকে এমনভাবে বিচার করা হয় যেন অপরাধটি তাদের নিজ দেশে সংঘটিত হয়েছে। তবে বেশিরভাগ দেশের আইন এমন শক্ত নয়। টিডিএইচ বলছে অপরাধীদের ধরতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.