বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত: সুষমাকে খালেদা

ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এ সৌজন্য সাক্ষাত শুরু হয়। এসময় সুষমাকে খালেদা জিয়া বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। তথাকথিত সংসদে জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হচ্ছে না। মতবিনিময়ে সুষমা স্বরাজ বলেছেন- সরকার বা কোনো দলের সাথে নয়, বাংলাদেশের জনগণের সাথে সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় ভারত। এর আগে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে সকাল ১০টার দিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে পৌঁছান সুষমা। এসময় সুষমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান বিএনপি নেতারা।

আধাঘন্টাব্যাপী বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসরাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে প্রায় ১০ মিনিট একান্তে বৈঠক করেন সুষমা স্বরাজ ও খালেদা জিয়া। তবে কি কথা হয়েছে তা জানা যায়নি।
মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, যে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো—বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। তথাকথিত সংসদ জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত করে না। বিশ্বের সর্ববৃহত্ গণতন্ত্রের দেশ তার প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে চায় কি না, তা আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। এসময় সুষমা স্বরাজ বলেন, এশিয়ার সব দেশে গণতন্ত্র দেখতে চায় ভারত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, এ অঞ্চলে ভারত বিশ্বের বৃহত্ গণতন্ত্র। প্রতিবেশী দেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিত থাকলে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত করবে।
সুষমা স্বরাজকে জামদানি শাড়িসহ বেশ কিছু মূল্যবান উপহার সামগ্রী দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে মঈন খান জানান, বৈঠকের আগেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে পাঁচটি জামদানি শাড়িসহ বেশ কিছু মূল্যবান উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে ভারত সফরকালে দেশটির তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজও খালেদা জিয়াকে বেশ কিছু উপহার সামগ্রী দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন- ভারতের নতুন সরকার কোনো দল বা ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না। সরকার দেশের জনগণের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, সংবাদ মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন সরকার চায়নি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হোক। তবে ভারতের বর্তমান সরকার বিশেষ কোনো দল নয় বরং বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বলেই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অগ্রহে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বেগম খালেদা জিয়া ভারতের নতুন সরকারকে পুনরায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সার্কের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার ঐকমত্য গড়ে তুলতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে স্বাগত জানান।
বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান শমসের মবিন চৌধুরী। বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন এবং মধ্যবর্তী নির্বাচন বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
বুধবার রাতে তিন দিনের সফরে ঢাকা আসেন সুষমা স্বরাজ। গত মাসে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর নতুন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর এটায় তার প্রথম বিদেশ সফর। সুষমা স্বরাজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারত সফরের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ পত্র তুলে দেন শেখ হাসিনার হাতে। এছাড়া তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। আজ দুপুরে সুষমা স্বরাজ ঢাকা ত্যাগ করবেন।

No comments

Powered by Blogger.