র‌্যাবের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল?

এক: কার হাতে কার হাতিয়ার বিরোধী দলের বেদনা ক্ষমতাসীন দল বোঝে না। ক্ষমতাসীন দল যখন বিরোধী দলে পর্যবসিত হয়, কেবল তখনই সে তা উপলব্ধি করে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এখন উপলব্ধি করছেন, র‌্যাবের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। গত রোববার তাঁর দলের এক নিখোঁজ নেতার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, র‌্যাবের আর প্রয়োজন নেই। কারণ, র‌্যাবকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে; এই বাহিনী গুম-খুনে জড়িয়ে পড়েছে।
একেই বলে নিয়তির নির্মম পরিহাস। কারণ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন নামের এই ‘এলিট স্ট্রাইক ফোর্স’ গঠন করেছিলেন খালেদা জিয়া নিজেই। র‌্যাব ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) চৌধুরী ফজলুল বারী, যিনি র‌্যাব গঠনের প্রাথমিক পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছিলেন, তিনি আমেরিকান কূটনীতিকদের যা বলেছিলেন, তা যদি সত্য হয়, তাহলে র্যাবের ভয়জাগানো কালো পোশাক, এমনকি মাথায় বাঁধার কালো ফেট্টিও বাছাই করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্বয়ং। আর র‌্যাবকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আজ বেগম জিয়া যে অভিযোগ করছেন, এই অভিযোগ তখনই তুলেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। ২০০৪ সালের জুন মাসে র‌্যাব কাজ শুরু করার পরের ছয় মাসে তাদের দ্বারা ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ ঘটে ৭৯টি, যার মধ্যে ৬৩টি ছিল ‘ক্রসফায়ার’। সেসব ‘ক্রসফায়ারে’ অন্যদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের লোকজনও মারা পড়ছিল বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিন্দা-প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হচ্ছিল, ক্রসফায়ার হত্যাকাণ্ডগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আওয়ামী লীগের বিরোধিতার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০০৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বিএনপির এক জনসভায় বলেছিলেন, বিরোধী দল র‌্যাবের বিরোধিতা করছে, কারণ র‌্যাব বিরোধী দলের সন্ত্রাসীদের কোণঠাসা করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের র‌্যাব-বিরোধী অবস্থানের কথা ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের জানা ছিল। এমনকি তারা সম্ভবত মার্কিন দূতাবাসের কাছে র‌্যাবের বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নালিশও করেছিল। অথবা দূতাবাসকে তারা হয়তো বলেছিল যে তারা ক্ষমতায় গেলে র‌্যাব ভেঙে দেবে। এ রকম ধারণা হয় এ কারণে যে, মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জুডিথ শামাস ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের সদর দপ্তরকে লেখা এক গোপনীয় তারবার্তায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘পরবর্তী নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারে, তাহলে অবশ্যই র‌্যাব ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে।’
তিনি ওই গোপনীয় তারবার্তাটি পাঠিয়েছিলেন ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর, র‌্যাব গঠনের দেড় বছরের মাথায়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার পরে তিনি সেটি লিখেছিলেন। খালেদা জিয়ার সরকার র‌্যাবকে শুরু থেকেই রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করে আসছিল—মার্কিন দূতাবাসও এমন ধারণাই পোষণ করত। ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি, র‌্যাব কাজ শুরু করার সাত মাস পর, সে সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস ওয়াশিংটনে পাঠানো এক গোপনীয় তারবার্তায় মন্তব্য করেন, ‘র‌্যাবের আরও রাজনৈতিকীকরণ ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে৷ কারণ, এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, যিনি ইসলামপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে অভিযোগ আছে এবং স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুক, যাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আছে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। ২০০৭ সালের গোড়ার দিকে প্রত্যাশিত সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন আরও সংঘাতময় হয়ে উঠবে এবং আরেক মেয়াদে জয়ী হওয়ার জন্য বিএনপি সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে, তখন এটা সহজেই কল্পনা করা যায়, র‌্যাব আড়ালে-আবডালে আরও দলীয়, রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করবে।’ ‘ক্রসফায়ার হত্যাকাণ্ডগুলো যে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন ও নির্দেশনায় সংঘটিত হচ্ছে, এতে তেমন কোনো সন্দেহ নেই,’ এই মন্তব্য করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওই তারবার্তায় আরও লিখেছেন, ‘তবে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, জামায়াতে ইসলামী বা তার ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি

No comments

Powered by Blogger.