পশ্চিমবঙ্গে দৃষ্টি থাকবে দুই আসনে

মুনমুন সেন, বাসুদেব আচার্য, বাবুল সুপ্রিয়
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আজ বুধবার চতুর্থ দফায় ভোট হচ্ছে৷ রাজ্যের মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও আসানসোল-এই ছয় আসনের জনগণ আজ বেছে নেবেন তাঁদের পছন্দের প্রার্থী৷ তবে আজ সবার দৃষ্টি থাকবে আসানসোল আর বাঁকুড়া আসনের দিকে৷ রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে আসানসোল একমাত্র ব্যতিক্রমী কেন্দ্র, যেখানে বাংলাভাষী মানুষের চেয়ে অবাঙালি সামান্য হলেও বেশি৷ সেখানেই নরেন্দ্র মোদির হাওয়া এখন প্রবল৷ গত রোববার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে এখানে নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী জনসভায় এক লাখ মানুষ এসেছিল৷ মোদির জনসভার পরদিন একই জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের সভায় মিঠুন চক্রবর্তীকে এনেও মুকুল রায়রা মাঠের এক কোনাও ভরাতে পারেননি৷ আসানসোলের প্রায় ১৫ লাখ ভোটারের মধ্যে ২৮ শতাংশ হিন্দিভাষী আর ২২ শতাংশ মানুষ উর্দুভাষী মুসলমান৷ তবে বিজেপির প্রভাব এখন হিন্দিভাষীদের সঙ্গে এলাকার বাঙালি তরুণ প্রজন্মকেও যে আকর্ষণ করছে, তা বিজেপি কার্যালয়ে হাজির একদল বাঙালির উপস্থিতিতেই স্পষ্ট৷ এলাকার বেকার ও শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম বিজেপির ‘উন্নয়ন ও বিকাশ’-এর ডাকে সাড়া দিচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গের অন্য এলাকার মতো এখানেও শিল্পে মন্দা বহুদিনের রোগ৷ বহুদিন ধরেই এলাকার বেকার যুবকদের রোজগারের উৎস ছিল বেআইিন কয়লাখনি৷
তাতে কম করে ২০ হাজার মানুষ কাজ করে খাচ্ছিলেন৷ ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর কিছুদিন বেআইিন কয়লাখনির কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ এ সম্পর্কে অভিজ্ঞ পরিতোষ ঘোষ জানান, কাজ হারানো যুবকদের মধ্যে ক্ষোভ যথেষ্ট৷ তাঁরা এখন তৃণমূল থেকে মুখ ফিরিয়ে বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন৷ বিজেপির প্রার্থী বলিউডের সুপরিচিত সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়৷ স্থানীয় অজয় সরকার মনে করেন, তৃণমূল বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা করেই তাঁকে পাদপ্রদীপের সামনে এনে দিয়েছে৷ সাধারণ মানুষের সহানুভূতিও এখন বাবুলের দিকে৷ তৃণমূলের প্রার্থী ট্রেড ইউনিয়নের রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের সঙ্গে দেখা হলো স্থানীয় দুর্গা ম্যানশনে৷ হুগিলর বন্ধ ডানলপ কারখানার শ্রমিকনেতা, রুগ্ণ হিন্দমোটর কারখানার শ্রমিকনেতা, এমনকি উত্তরবঙ্গের চা-বাগানের শ্রমিকনেতারা এসেছেন তাঁর প্রচারণার কাজে৷ আসানসোলে ‘বহিরাগত’ দোলা সেনের প্রচারের নিয়ন্ত্রণও বহিরাগতদের হাতেই৷ এই ‘বহিরাগত’ প্রশ্নটিই আসানসোলে বিজেপির বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে৷ এ অবস্থায় শঙ্কিত কসাই মহল্লা, চাঁদমারি, বাবুয়া তালাও, ঝিংড়ি মহল্লা প্রভৃতি এলাকার প্রায় ৩০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার৷ তাঁদেরই একজন সুলতানের কথায়, তবু মুসলমান ভোট তৃণমূল বা সিপিএম একা পাবে না; কিছু ভাগাভাগি হবেই৷ আর এই ভাগাভাগির কারণেই আসানসোলের ভোটের ফলাফল এবার চরম অনিশ্চিত৷ বাঁকুড়া: একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ৷
অন্যজন মহানায়িকার মেয়ে, নিজে অভিনেত্রী৷ প্রথমজন নয়বার টানা লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে থাকলে দ্বিতীয়জনের নির্বাচনী লড়াই কেন, রাজনীতিরও কোনো পূর্বাভিজ্ঞতা নেই৷ প্রথমজন বাসুদেব আচার্য৷ অন্যজন মুনমুন সেন৷ বাসুদেব আচার্যের শক্তি যদি হয় একটি শৃঙ্খলাপরায়ণ সংগঠন, মুনমুনের শক্তি তাঁর পারিবারিক পরিচয়৷ তিনি সদ্যপ্রয়াত সুচিত্রা সেনের মেয়ে৷ সর্বোপরি, তাঁর পাশে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মুনমুনের প্রচার দেখতে মানুষ ভালোই ভিড় করছে৷ কারণ, তাঁর রোড শোর সঙ্গী কখনো তাঁর দুই মেয়ে চলচ্চিত্রাভিনেত্রী রাইমা ও রিয়া সেন, আবার কখনো টালিউডের অন্য শিল্পীরা৷ বাসুদেব আচার্যের প্রচার অনেকটা নিচু স্বরের৷ হেঁটে লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলার মাধ্যমে জনসংযোগ করছেন তিনি৷ স্থানীয় মানুষ ও শিক্ষক রণজিৎ পালের কথায়, গোড়ায় বাসুদেব আচার্যের বিরুদ্ধেই জনমত ছিল৷ কিন্তু তৃণমূল মুনমুনকে প্রার্থী করার পরই ধাক্কাটা এল৷ কেন? রণজিতের সাফ জবাব, বাসুদেবকে তবু কালেভদ্রে পাওয়া যেত, মুনমুন যে ভোটের পরে আর বাঁকুড়ায় পা দেবেন না, তা নিশ্চিত৷ সিপিএমের জেলার শীর্ষনেতা অমিয় পাত্র জানান, এখানে তৃণমূল-সন্ত্রাসের দাপট তত নেই৷ ফলে, সিপিএম আসন ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী৷ তিনিও স্বীকার করছেন, বিজেপির ভোট কিছু বাড়বে৷ কিন্তু তা কতটা, সেই অঙ্কই এখন ভাবাচ্ছে সিপিএম ও তৃণমূলকে৷

No comments

Powered by Blogger.