নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ

সরকার ২০১৫ সালে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে জোগান দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎস বিভিন্ন দেশে ব্যবহূত হলেও বাংলাদেশে প্রধানত সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাস্তবানুগ বিবেচনা করা হচ্ছে। ভৌগোলিক কারণে জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা আমাদের দেশে সীমিত। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদনক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট, যা লেকে পানির প্রাপ্যতার ওপর নির্ভরশীল। এ দেশে ইতিমধ্যে ‘সোলার হোম সিস্টেমস’ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে গ্রিড বিদ্যুৎবঞ্চিত এলাকায়। এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ লাখ সোলার হোম সিস্টেম বিক্রি হয়েছে (সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ১১৫ মেগাওয়াট)। আশা করা হয়, এর প্রায় সবগুলো সূর্যের আলো থেকে সীমিত পরিসরে বিদ্যুৎশক্তির জোগান দেয়। ব্যয়বহুল হলেও বিদ্যুৎহীন অন্ধকারের চেয়ে সে আলো অনেক আকাঙ্ক্ষিত। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুতের মিলিত উৎপাদনক্ষমতা ও অন্যান্য পরীক্ষামূলক নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্মিলিত স্থাপিত ক্ষমতা এখন দেশে প্রায় ৩৬০ মেগাওয়াট। দেশে মোট স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট হিসেবে নিলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ থেকে আমরা বেশ খানিক দূরেই দাঁড়িয়ে আছি। এই পটভূমিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০১৪-এর খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে।
২০০৮ সালে প্রথম যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি প্রণীত হয়েছিল, এত দিনে তার অনেক পরিমার্জন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে যে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে, সে অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিতে বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধন এবং তা আরও বিনিয়োগবান্ধব করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে লক্ষ করা যেতে পারে যে ভারত কেবল সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াট ও বায়ুশক্তি থেকে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। জলবিদ্যুৎ ছাড়াই ভারতের নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১২ শতাংশ। জার্মানি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে প্রাগ্রসর একটি দেশ এবং ২০২০ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে জার্মানি প্রায় ৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে মনে রাখা ভালো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সস্তা নয়। প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দেওয়ায় জার্মানদের প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় ইউরোপে সর্বোচ্চ। তা ছাড়া, জমিস্বল্পতার দেশে সৌর বিদ্যুতের সম্ভাবনা এখনো সীমিত (এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেতে প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে সৌর প্যানেল বসাতে হয়)। বাংলাদেশে কোথায় বাতাসের প্রবাহ।

No comments

Powered by Blogger.