পাট খাতে দুর্দিন

পাট খাতের বিকাশে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। গত দেড় মাসে ছয়টি বেসরকারি পাটকল এবং ১২টি পাট ও সুতা কারখানা বন্ধ হয়েছে। বেকার হয়েছেন প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক। দেশের প্রায় এক কোটি পাটচাষির জীবনে এটা অশনিসংকেত। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এত দিন কী করেছে? এই বিপর্যয়ের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। অথচ তাদের আমলের শেষ দিকে পাটকল-সুতাকল ও পাটচাষিদের দুর্ভাগ্য ফিরে আসে। সরকারের আগের মেয়াদে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ছিলেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি অনেক হাঁকডাক করতেন, অথচ তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি কতটা পালন করেছেন, পাট খাতের সংকট থেকেই তা বোঝা যায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যেকের জবাবদিহি থাকার কথা, তা নিশ্চিত না করাও সরকারের ব্যর্থতা। নতুন পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম অবস্থাটা বদলাতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করবে এ মুহূর্তে মন্ত্রণালয় কী করছে, তার ওপর। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে কার্যকর দিকনির্দেশনা দরকার। দরকার আসন্ন বাজেটে পাট খাতের সুরক্ষায় বরাদ্দ রাখা। বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদা কমে গেছে। ভারতের দিক থেকে পাট না কিনতে চাওয়া, থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা, ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা ইত্যাদি কারণে পাটের রপ্তানি কমে গেছে।
ফলে পাটের উৎপাদন ২০১১ সালের প্রায় ৮৪ লাখ বেল থেকে ২০১৩ সালে নেমে আসে ৭৪ লাখ বেলে। রপ্তানিও ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রায় অর্ধেকে। গত তিন বছরে ক্রমাগত চাষিরা লোকসান গুনছেন। গত বছরের অবিক্রীত প্রায় ২০ লাখ বেল পাটের সঙ্গে যোগ হতে যাচ্ছে এ বছরের উৎপাদিত পাট। ঘটনাগুলো ঘটেছে দীর্ঘ সময় ধরে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার অনুমানযোগ্য এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি কেন? স্পষ্টভাবেই এখানে সরকারের দায় রয়েছে। ২০১০ সালে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন হলেও তা বাস্তবায়ন করার তৎপরতা নেই। বাজারে এখনো চলছে পলিথিনের রমরমা ব্যবসা। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও পাটজাত পণ্য ব্যবহার করছে না। অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের চাহিদা বাড়াতে পারলেও পাট খাতকে টিকিয়ে রাখা যেত। পাটকলগুলোর সংগঠন বিজেএমএ অভিযোগ করেছে যে রপ্তানি ভর্তুকি বাবদ সরকারের কাছে তাদের পাওনা ৬৩৮ কোটি টাকা। এই টাকা পাওয়া গেলে হয়তো অনেকের পক্ষে কারখানা চালু রাখা সম্ভব হতো। সরকার পাটের জিন-নকশা আবিষ্কৃত হওয়ার কৃতিত্ব দাবি করবে, কিন্তু বাস্তবে পাট খাত মরণদশায় ও নিষ্ক্রিয় থাকবে, তা হতে পারে না। সোনালি আঁশ একসময় সোনার বাংলার মিথ তৈরিতে অবদান রেখেছিল। সেই পাট খাতের প্রতি যুগ যুগ ধরে বিমাতাসুলভ আচরণ জাতীয় কৃতঘ্নতা। আশা করি, সরকারের চৈতন্যোদয় হবে এবং পাট খাতের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.