অজ্ঞাত স্থানে ইংলাক!

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা রাজধানী ব্যাংকক ছেড়েছেন। বর্তমানে তিনি রাজধানী থেকে ৯০ মাইল দূরে অবস্থান করছেন বলে তাঁর দপ্তর থেকে গতকাল সোমবার জানানো হলেও ঠিক কোথায় আছেন, তা জানানো হয়নি। এদিকে ব্যাংককে গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। মধ্য ব্যাংককের একটি বিপণিবিতান এলাকায় গত রোববার বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে চলমান সংকট নিরসনে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন থাইল্যান্ডের সেনাপ্রধান। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, সহিংসতা এভাবে চলতে থাকলে দেশ ভেঙে পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী ইংলাককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত এবং থাই রাজনীতিকে তাঁর ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার প্রভাবমুক্ত করতে বর্তমানের বিক্ষোভ চলছে। ২০০৬ সালে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বেচ্ছানির্বাসনে বিদেশে থাকা থাকসিনই পেছনে থেকে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়ছেন বলে ধারণা করা হয়। ইংলাকের দপ্তর থেকে গতকাল সাংবাদিকদের জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ব্যাংককে নেই। বর্তমানে তিনি ব্যাংককের বাইরে অবস্থান নিয়ে ‘দাপ্তরিক কাজকর্ম চালাচ্ছেন’। তবে ইংলাক কত দিন ধরে রাজধানীর বাইরে থেকে কাজ করছেন বা তাঁর নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। অবশ্য ইংলাককে সর্বশেষ প্রায় এক সপ্তাহ আগে (গত মঙ্গলবার) ব্যাংককে দেখা গেছে। আগামী বৃহস্পতিবার রাজধানীতে তাঁর একটি দুর্নীতির মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুরাপোং তোভিচাকচাইকুল জানান, ‘ইংলাক আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। আমরা ব্যাংককের বাইরে বৈঠক করব, সেই সম্ভাবনাই বেশি। আর প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আমি অবগত নই।’ থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সংকটের একপক্ষে রয়েছে ব্যাংককের মধ্যবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণী এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তাদের সমর্থকেরা। আরেক পক্ষে রয়েছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, যারা থাকসিন পরিবারের সমর্থক। অবস্থাদৃষ্টে এই সংকট নিরসনের আশু কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ১৯৩২ সালে থাইল্যান্ডে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটির সেনাবাহিনী ১৮ বার অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে তারা থাকসিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তবে চলমান সংকটে তারা নাক গলাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সেনাপ্রধান প্রাইয়ুথ চান-ওচা এক বিরল টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতেই হবে। তার মানে এই নয়, সেনারা (আইনের) কাঠামোর আওতায় কাজ না করে হস্তক্ষেপ করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কে নিশ্চিত করে বলতে পারে, আমরা সেনাদের ব্যবহার করলেই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে?’ এদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বর্তমানে থাকসিন পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। গতকাল তারা একটি টেলিভিশন কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হয়, যেটি পরিচালনা করেন থাকসিনের ছেলে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রালয়ের দিকেও রওনা হয় বিক্ষোভকারীরা। গত রোববার মধ্য ব্যাংককের ব্যস্ততম একটি বিপণিবিতান এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে অন্তত একজন নারী ও চার বছরের একটি ছেলেশিশু নিহত হয়। ওই ঘটনায় শিশুটির আহত ছয় বছরের বোনও গতকাল মারা গেছে। ওই বোমা হামলায় কারা জড়িত, তা এখনো স্পষ্ট নয়। রয়টার্স ও এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.