দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির শাসন

শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির শাসনই জারি হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় দিল্লির জন্য রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আজ রোববার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। এর আগে উপরাজ্যপাল নাজিব জং, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছে লেখা চিঠিতে এই সুপারিশ করেছিলেন। তবে বিধানসভা জিইয়ে রাখার প্রস্তাবও তিনি দিয়েছিলেন। উপরাজ্যপাল ওই চিঠির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ইস্তফাপত্রও রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছেন। এসব পদক্ষেপে অবশ্য বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল চিন্তিত নন। গতকাল একটি টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে তিনি আবার মুকেশ আম্বানির কথা উল্লেখ করে তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস ও বিজেপির ‘অসত্ যোগসাজশের’ অভিযোগ এনেছেন। মনমোহন সিং, চিদাম্বরম, কমলনাথসহ বহু বিশিষ্ট নেতা দেশের জন্য ভাবেন না বলেও তিনি মনে করেন। তাঁদের ‘ইমানদার’ বলেও মনে করেন না কেজরিওয়াল। তাঁর ব্যাখ্যায়, তাঁরা সবাই বৃহত্ শিল্পগোষ্ঠীর হাতের পুতুল, তাদের স্বার্থে সরকার পরিচালনা করেন। কেজরিওয়াল আরও জানান, লোকসভা নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং যাঁরা ‘দুর্নীতিগ্রস্ত, অপরাধী, সাম্প্রদায়িক ও রাজনীতিকে পারিবারিক উত্তরাধিকার মনে করেন’, তাঁদের জয় ঠেকাবেন।
তবে কেজরিওয়ালের পদত্যাগের পরে আম আদমি পার্টিকে (এএপি) যেসব সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে সেগুলোর অন্যতম হলো, প্রশাসনিক দিক থেকে তাঁরা অনভিজ্ঞ এবং আদৌ দায়িত্বশীল নন। তাঁদের চরিত্র পলায়নমুখী। এ কারণে তাঁদের কাছ থেকে সুশাসিত স্থিতিশীল সরকার পাওয়ার আশা কম। প্রধানত বিজেপি এবং কিছুটা কংগ্রেস এভাবেই এএপিকে আক্রমণ করছে। কেজরিওয়াল তাতে বিচলিত নন। তাঁর দাবি, পদত্যাগের পর সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা আগের তুলনায় আরও বেড়ে গেছে। যদিও এটা ঠিক যে সমাজের শিক্ষিত এবং সচ্ছল মানুষদের মনে এএপির কাজকর্ম সম্পর্কে কিছুটা বিরূপ ধারণা জন্ম নিয়েছে। এই শ্রেণীর ব্যাপক সমর্থন এএপি দিল্লি নির্বাচনে পেয়েছিল। গত শুক্রবার রাতে এএপির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের সুপারিশ করেন। রাষ্ট্রপতির শাসন এড়ানোর একমাত্র উপায় ছিল বিকল্প সরকার গঠন। সেই সম্ভাবনা যে একেবারেই ছিল না, তা নয়। বিজেপি অনায়াসেই সরকার গড়তে পারত। ৭০ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় তাদের ৩২ জন সদস্য ছিলেন। আম আদমি পার্টি থেকে বহিষ্কৃত বিনোদ কুমার বিন্নি, জনতা দল (সংযুক্ত) সদস্য শোয়েব ইকবাল এবং স্বতন্ত্র সদস্য রাজবীর শৌকিন বিজেপিকে সমর্থন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। এএপি থেকে ভাগিয়েও সরকারের স্থায়িত্ব বাড়ানো যায়। কিন্তু বিজেপি সেই ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। বিধানসভার বিরোধী নেতা হর্ষবর্ধন গত শুক্রবারই বলে দেন, তাঁদের লক্ষ্য নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দিল্লির মসনদ দখল করা।

No comments

Powered by Blogger.