বিএনপি কি জামায়াতের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে? by নুরুল ইসলাম বিএসসি

আমি এক ছাত্রদল কর্মীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। আক্ষেপ করে ছাত্রটি বলল, ছাত্রদলে এখন তাদের আওয়াজ নিচু হয়ে গেছে। ছাত্রশিবির যা বলে তাই হয়। এই ছাত্রদলের কর্মীর ভয়, আগামীতে ছাত্রদলকে ছাত্রশিবির গ্রাস করে ফেলবে, যা তার কাছে মোটেও কাম্য নয়। ফলে ছাত্রদলের কর্মীরা নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে বিএনপি বা জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দেবে না। বিএনপিকে এখন ভোট দেয়ার অর্থই হবে জামায়াতকে ভোট দেয়া। ধানের শীষ যদি জিতে যায়, মূলত জামায়াতিরাই জিতবে এবং এ দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সংখ্যালঘুসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। বর্তমান পর্যায়ে অনেকে লক্ষ্য করে থাকবেন, যেখানে বেগম জিয়ার সভা হয়, আগের কাতারগুলো শিবির কর্মীরা দখল করে রাখে। এমনও দেখা গেছে, ছাত্রদলের ছেলেদের তাড়িয়ে দিয়ে ওই জায়গাটাই শিবির দখলে রেখেছে। দখল বললে ভুল হবে, তারা ওখান থেকে বেগম জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে যুদ্ধাপরাধী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের পক্ষে স্লোগান দেয়। ছবি ও প্লাকার্ড বহন করে এদের মুক্তি দাবি করে। বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে, শাস্তি ঘোষিত হয়েছে, এমন ব্যক্তিদেরও মুক্তি দাবি করছে। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, এ দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা নেই। অথচ বেগম জিয়া একবারের জন্যও এ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে এদের নিষেধ করেননি। তিনি দেশনেত্রী হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া কি একজন নেত্রীর কাজ নয়?
আগামীতে দেশে কী হবে, তা ভবিষ্যতের গর্ভে নিহিত থাক। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে বেগম জিয়া জামায়াতের হাতের পুতুল। এই জামায়াতিদের জন্যই বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারলেন না। সংলাপ সংলাপ বলে যারা এতদিন টিভির পর্দা ফাটিয়েছেন, এখন তারা কী বলবেন? কই, টকশোর নায়করা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে আবারও ৬০ ঘণ্টা হরতালের বিষয়ে তো কিছুই বলছেন না! সংলাপের আগেই যদি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়, তাহলে সংলাপের প্রয়োজন কী? আমাদের নবীজিও যেখানে সংকট সৃষ্টি হয়েছে ওখানে সংলাপ করেছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ছাড় দিয়ে হলেও চুক্তি করে গেছেন। মদিনা সনদ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যারা এখন ইসলাম রক্ষায় মাঠে নেমেছেন, তারা কি মদিনা সনদ পড়েছেন? আসলে এরা কিছুই মানে না। এদের একমাত্র উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো এবং যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগারদের শায়েস্তা করা।
এরা ইসলাম রক্ষা করার কথা বলে। কই, এ সরকারের আমলে ইসলামের বিপক্ষে একটি আইনও কি পাস হয়েছে? তবু মানুষদের ধোঁকা দিয়ে সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে প্রচার করে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তনের ছবিকে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রতিবাদ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। কত বড় মিথ্যুক হলে এমন কাজ করতে পারে! কোনো ভিন্নধর্মী মানুষও এ কাজ করতে পারে না। অথচ এরা নিজেদের মুসলমান দাবি করে, আবার ইসলাম রক্ষার নামে ককটেল মারে। কোন কিতাবে লেখা আছে ককটেল বানানোর ফর্মুলা? কোন ইসলামিক আইনে লেখা আছে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার? নিরীহ মানুষ যারা হত্যা করতে পারে, এদের হাতে সাধারণ মানুষ নিরাপদ কিনা?
মিথ্যা বলারও একটা আর্ট আছে। মাওলানা শফী সাহেব মহিলাদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করে অবস্থা বিপরীত দেখে এখন বলছেন, তিনি গোলাপ ফুল বলেছেন। এসব মিথ্যাবাদীর হাতে ইসলাম কতখানি নিরাপদ- এ প্রশ্ন উত্থাপন করলে বেশি বলা হবে কি?
মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সাময়িক টিকে থাকা যায়। দীর্ঘমেয়াদি কর্মকাণ্ডে সত্যকেই আঁকড়ে থাকতে হয়। মিথ্যা বেশিদূর এগুতে পারে না। যারা ঈমানদার বলে দাবি করছেন, তাদের কাছে মিনতি- মিথ্যা ছাড়–ন, যা সত্য তাকেই প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ দিন। খামাকা দেশের সম্পদ, মানুষের জানমাল নিয়ে খেলা করা থেকে বিরত থাকুন। হরতাল দিয়ে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করা যাবে, একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারকে কখনও ফেলে দেয়া যাবে না। গণতন্ত্র ভেস্তে যাক, এটা কারও কাম্য হতে পারে না।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক

No comments

Powered by Blogger.