কঙ্গোর মাদার তেরেসা সিস্টার অ্যাঞ্জেলিকা

অ্যাঞ্জেলিক নামাইকা, যাকে বলা হয় কঙ্গোর ‘মাদার তেরেসা’। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যিনি জয় করেছেন জাতিসংঘ পুরস্কার। তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর হর এমন- কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এলআরএ বিদ্রোহীদের দ্বারা নির্যাতিত নারীদের সহায়তা করার জন্য এ বছর জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছেন অ্যাঞ্জেলিক নামাইকা। তিনিও একদিন ওই বিদ্রোহীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ৪৬ বছরের নারী অ্যাঞ্জেলিকা, যার হাসি, কর্মোদ্যম হাজারো নারীকে অনুপ্রাণিত করেছে নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলতে। ১-২ বছর নয়, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লর্ডস রেসিসটেন্স আর্মির (এলআরএ) নির্যাতনের শিকার উগান্ডা, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান এবং আফ্রিকান রিপাবলিকের মধ্যাঞ্চলের সীমান্তে বসবাসকারী নারীরা। এসব এলাকায় নারীদের ত্রাস এলআরএ। এই বিদ্রোহীদের জন্য ৩৫ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কেননা প্রায়ই গ্রাম থেকে শিশুদের অপহরণ করে নিয়ে যায়, নারীদের ধর্ষণ ও নির্যাতন করে তারা। এসব নারীদেরই সহায়তা দেন ‘সিস্টার’ অ্যাঞ্জেলিক। পরবর্তী পরিস্থিতিতে তারা যাতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারেন সে ব্যাপারে তিনি উৎসাহিত করেন নির্যাতিত নারীদের। আর এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন নির্যাতিতের আশার আলো।
শুধু তাই নয়, তাদের উপার্জনের বিভিন্ন পন্থাও দেখিয়ে দেন তিনি, দেন প্রশিক্ষণ। তরুণী বয়সে এই বিদ্রোহীদের জন্যই গ্রাম ছেড়ে একটি ঝোঁপের ভেতর দীর্ঘ ১ বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। তাই এই ঘর ছাড়া এবং পালিয়ে বেড়ানোর কষ্টটা ভালোই বোঝেন অ্যাঞ্জেলিক নামাইকা। সে কারণেই তিনি এসব নারীদের ভেতরকার প্রতিভাগুলো বের করে আনতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। যদিও এসব নারীদের সহায়তা করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। তিনি মনস্থির করেছিলেন লক্ষ্য পূরণে পিছপা হবেন না। অ্যাঞ্জেলিক হেরে যাননি। ৩০ সেপ্টেম্বর জেনেভায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, পুরস্কার পেয়ে তিনিই একইসঙ্গে আনন্দিত এবং বিস্মিত। সিস্টার অ্যাঞ্জেলিক যে পুরস্কার পেয়েছেন তার মূল্য ৭৪ হাজার ইউরো। এটি দিয়ে তিনি এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান, যেখানে নির্যাতিতা নারীরা তাদের বানানো জিনিস বিক্রি করে উপার্জন করবেন এবং স্বাবলম্বী হবেন, যা তাদের কষ্টকর অতীতকে ভুলতে হয়তো একটু হলেও সাহায্য করবে। তথ্যসূত্র : আলজাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.