সংসদ বহাল রেখে, নাকি না রেখে নির্বাচন by ইকতেদার আহমেদ

রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মধ্যে সংসদ অন্যতম। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সম্পর্কে সংবিধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। এ নির্দেশনার আলোকেই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন বিষয়ে ’৭২-র সংবিধানে পর্যায়ক্রমিকভাবে ১২৩(৩) (ক) ও (খ)-তে বলা ছিল, (৩) সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে, ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। পরে ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে সংশোধনী এনে বিধান প্রণয়ন করা হয় যে, মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৭২-পরবর্তী ৭ম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত মূল সংবিধানে সংসদ নির্বাচন বিষয়ে অনুচ্ছেদ নং ১২৩(৩) (ক)-তে বর্ণিত বিধানাবলী অনুসরণপূর্বক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবশ্যকতা দেখা দেয়নি। প্রথম সংসদ পাকিস্তানের সামরিক আইন কাঠামোর আওতায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী এ সংসদের নামকরণ করা হয়েছিল গণ-পরিষদ (ঈড়হংঃরঃঁবহঃ অংংবসনষু)। সংবিধান প্রণীত হওয়ার পর এ সংসদ ভেঙে দেয়া হয়। উল্লেখ্য, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংসদ মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে দেয়া হয়েছিল।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে মূল ’৭২-এর সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ১২৩(৩) (ক) ও (খ)-তে বর্ণিত বিধানাবলী পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। বর্তমান ৯ম সংসদে যাদের অবস্থান সংসদ সদস্য হিসেবে, তারা সংবিধানের ১২৩(৩)(ক)-এ বর্ণিত বিধানের আলোকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে অযোগ্য প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য করতে হলে ৬৬নং অনুচ্ছেদের (৩) উপ-দফায় অপরাপর পদধারীদের সঙ্গে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধনী আনা আবশ্যক। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা অনুসৃত কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংসদ ভেঙে দেয়ার পর রাজা বা রানী অথবা রাষ্ট্রপতি অব্যবহিত পূর্ববর্তী মন্ত্রিসভাকে সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে নিয়মমাফিক দৈনন্দিন কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে বলেন।
সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে যেসব জটিলতা দেখা দেবে তা হল- প্রথমত, বিদ্যমান সংসদ সদস্য নির্বাচনে বিজয়ী হতে না পারলে দেখা যাবে একই সময়ে একই আসন হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ২ জন; দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে তারা নির্বিঘেœ ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কি-না সে বিষয়ে অনেকেরই আশংকা রয়েছে; তৃতীয়ত, নির্বাচনে পরাভূত ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে কীভাবে এর সমাধান করা হবে; চতুর্থত, রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকলে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যে কোনো বিবদমান পরিস্থিতিতে তার পক্ষে ক্ষমতাসীনদের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ কতটুকু সম্ভব; পঞ্চমত, ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশন যে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে সে নিশ্চয়তা কোথায়; ষষ্ঠত, ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন বাহিনীপ্রধান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ তত্ত্বাবধায়ক ও থানা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা কিরূপে নিশ্চিত করা হবে; সপ্তমত, মন্ত্রিসভার যেসব সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কী কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের নিরপেরক্ষতা নিশ্চিত করা হবে এবং কী পদ্ধতি অবলম্বনে বড় দুটি দলসহ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী অপরাপর দলের জন্য সমসুযোগ সংবলিত মাঠের ব্যবস্থা করা হবে।
যতক্ষণ পর্যন্ত উপরোক্ত জটিলতাগুলো নিরসন করা না হবে, ততক্ষণ সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হলে তা একদিকে যেমন নির্বাচনে সার্বজনীন অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করবে না, অপরদিকে বিদ্যমান সংসদ সদস্যদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়ার পথ রুদ্ধ হবে। সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আগে ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৫ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে। নবম সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ এবং সে হিসাব অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর সংসদ আপনাআপনি ভেঙে যাবে। যদিও সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালে প্রধানমন্ত্রীর লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শদানের বিধান রয়েছে; কিন্তু সেক্ষেত্রে অন্য কোনো সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নন, এ মর্মে রাষ্ট্রপতি সন্তুষ্ট হলে তিনি সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। নির্বাচন বিষয়ে সংবিধানের বিদ্যমান বিধানাবলী বিবেচনায় নিলে প্রতীয়মান হয়, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সংসদ বহাল থাকাবস্থায় ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন থাকাবস্থায় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে তা সংবিধান সম্মত হবে কি-না সে প্রশ্নটি দেখা দেবে।
’৭২-এর সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার বিধান ছিল। ওই সংবিধানে বলা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন। ওই সংবিধানে সংসদ ভেঙে যাওয়া এবং সংসদ সদস্যদের অব্যবহিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যবর্তীকালে মন্ত্রী নিয়োগের প্রয়োজন দেখা দিলে সংসদ ভেঙে যাওয়ার অব্যবহিত আগে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদের সংসদ সদস্য গণ্যে মন্ত্রী পদে নিয়োগদান আইনসম্মত ছিল। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হলে উপরোক্ত দুটি বিধান রহিত করা হয়। অতঃপর দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঐকমত্যের ফলে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন করা হলে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা বিষয়ে ’৭২-এর সংবিধানের বিধানাবলী পুনঃপ্রবর্তিত হয়।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন পূর্ববর্তী প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকলেও ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সংসদ নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বহাল ছিল। উপরোক্ত ৪টি সংসদের কোনোটিই মেয়াদ পূর্ণ করতে না পারায় এবং উপরোক্ত সংসদগুলো ভেঙে যাওয়া পরবর্তী রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকায় মেয়াদ অবসানের আগে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ হয়নি। পঞ্চম সংসদ নির্বাচন তিন দলীয় জোটের রূপরেখায় অস্থায়ী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এ বিষয়টি উত্থাপনের অবকাশ সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া মূল কথা হল, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় এ প্রশ্নটি উত্থাপনের কোনো সুযোগ ছিল না। পরে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে ৭ম, ৮ম ও ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা বিষয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ ছিল না। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, পরবর্তী মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তিত হওয়ায় প্রথমবারের মতো আমাদের সাংবিধানিক ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রীর স্বপদে বহাল থাকাকালীন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা নং (৩)-এর উপদফা (ক) এবং (খ) একটি অপরটির সংযোজক। এ দুটি উপদফার মধ্যে ‘এবং’ শব্দটি ব্যবহার করায় একটির সঙ্গে অপরটি সংযোজক হয়েছে। এখানে ‘এবং’-এর পরিবর্তে ‘অথবা’ শব্দটি ব্যবহার করা হলে একটি অপরটির বিয়োজক হতো। উপদফাদ্বয়ের একটি অপরটির বিয়োজক হলে সময়ের বাধ্যবাধকতা ছাড়া একটি বিকল্পের পরিবর্তে অপর বিকল্প অবলম্বনে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব ছিল। কিন্তু উভয় উপদফার মধ্যবর্তী ‘এবং’ শব্দটি ব্যবহারের কারণে যে মুহূর্তে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন সময়ের গণনা শুরু হবে, সে মুহূর্ত থেকে অবশ্যই দফা নং (৩)-এর (ক) উপদফা অনুযায়ী মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ৯০ দিন পূর্ববর্তী যে কোনো সময় সংসদ ভেঙে যায়, সেক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে প্রথমোক্ত বিকল্প অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের অবকাশ সৃষ্টি হলে এটি কার্যকর থাকাকালীন দ্বিতীয় বিকল্পে, অর্থাৎ সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থার সুযোগ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই, দফা নং (৩)-এর (ক) উপদফায় বর্ণিত সময়ের মধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে উপদফা (খ) অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে, তবে তা কোনোভাবেই নৈতিকতা, নীতিজ্ঞান ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার দ্বারা সমর্থিত হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া এ বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন যে, দফা নং (৩)-এর (ক) উপদফা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হলে মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার যে পূর্ববর্তী ৯০ দিন সময়ের মধ্যে এই সময়টি ব্যাপৃত থাকবে, সে সময় সংসদ বহাল থাকলেও সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২নং অনুচ্ছেদের প্রথম শর্তাংশে ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা নং (৩)-এর (ক) উপদফায় উল্লিখিত সময়কে সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের অধিক বিরতিকাল হতে বহির্ভূত রাখায় এ সময়ের মধ্যে সংসদের অধিবেশন আহ্বানের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা নং (৩)-এর (ক) উপদফা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি হতে অপর অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যবর্তী সময় ৬০ দিনের বেশি না হওয়ায় উপরোক্ত উপদফায় বর্ণিত ৯০ দিন সময়ের শেষ প্রান্তে এসে যদি সংসদ ভেঙে দিয়ে ভেঙে দেয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দেখা দেবে, সংসদের এক অধিবেশন হতে অপর অধিবেশনের মধ্যবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সংসদের অধিবেশন আহ্বান না করায় সংবিধান লংঘিত হয়েছে কি-না?
সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বাধ্যবাধকতার কারণে যদিও ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা নং (৩)-এর (ক) উপদফায় মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে; কিন্তু এই ৯০ দিন সময়ের শেষ ৩০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতায় জটিলতা দেখা দেবে এ কারণে যে, একটি সংসদ বহাল থাকাকালীন অপর সংসদের বৈঠক আহ্বানের কোনো সুযোগ নেই । আর এ জটিলতা মানে সংবিধান লংঘন। তাই মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন সময়ের মধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিন সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হলে সংবিধান লংঘনের একাধিক কারণের উদ্ভব ঘটতে পারে। এ জটিলতা পরিহার্থে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা সংসদ বহাল রেখে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন, নাকি মেয়াদ অবসানের কারণে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন সময় উপনীত হওয়ার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.