বিএনপি ঠেকাতে মৌলবাদীও কবুল by অমিত রহমান

বিএনপি ঠেকাতে গিয়ে কথিত মৌলবাদের উত্থান ঘটাতেও আপত্তি নেই শাসক আওয়ামী লীগের। এটা কি রাজনৈতিক কৌশল? নাকি জিঘাংসা? রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন, যদি কৌশল হয়ে থাকে তাহলে এটা হবে মস্ত বড় ভুল।
যে ভুল বাংলাদেশকে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের পথে নিয়ে যেতে পারে। শুরুতেই দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে ছলে-বলে-কৌশলে আটকাতে চেয়েছেন। বরাবরই শক্ত হাতে দমাতে চেয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে তাদের যে প্রাপ্য তা-ও দিতে চাননি। রাজপথে দাঁড়াতে দেননি। সংসদেও কৌশল ছিল অন্য। যাতে করে তারা সংসদমুখী না হতে পারে। এখানে বিএনপিরও কৌশলগত ভুল ছিল। তারা সুযোগ নেই, পরিবেশ নেই -এসব কথা বলে সংসদ থেকে হাজার মাইল দূরে থেকেছে। এতে সরকারের কোন ক্ষতি হয়নি। হয়েছে বিএনপির। বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া এটা মানতে না চাইলেও বাস্তবতা কিন্তু তাই। বিএনপিকে দুর্বল রাখার সরকারি কৌশল অনেকটাই সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা হয়তো এতে আনন্দ পেতে পারেন বা পান। কিন্তু দিনের শেষে আমরা কি দেখছি, একটি শক্তির উত্থান ঘটতে চলেছে যাকে সরকার বলছে মৌলবাদী। এই শক্তি হেফাজতে ইসলাম মাঝপথে এসে বাগড়া দেবে এটা কি কেউ ভেবেছিলেন? জামায়াত-শিবির ঠেকাতেই প্রশাসন ছিল সক্রিয়। বলা চলে সর্বশক্তি দিয়ে তা-ই করেছে হাসিনার প্রশাসন। জামায়াত হয়তো আপাতত গর্তে ঢুকে গেছে। মন্দের ভাল এখনও পুরোপুরি আন্ডারগ্রাউন্ডে যায়নি। তাহলে বাংলাদেশের বিপদ বাড়বে। পশ্চিমা দুনিয়া বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই তা বলে এসেছে। কেউ কান দেননি। সময় দ্রুত গড়াচ্ছে - হয় জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় ফিরতে হবে, না হলে কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, যা হবে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার এখন হেফাজতের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। বিএনপি কিংবা জামায়াতের সঙ্গে নয়। হেফাজতের সঙ্গে বিরামহীন আলোচনা চলছে। ৬ই এপ্রিলের আগে কয়েক দফা আলোচনা হয়। কিছুটা সফলও হয় সরকার। নানা উস্কানির মধ্যেও হেফাজত রাজপথে বসে যায়নি। শাপলা বিপ্লবের পথে যেতে রাজি হননি তারা। একটি অদৃশ্য শক্তি নাকি তাদের বলেছিল- এখনই নয়, এক মাস সময় দিন। তারপর চূড়ান্ত আন্দোলনে যান। এই যুক্তিতেই তারা নাকি ৫ই মে পর্যন্ত সময় দেয় সরকারকে। কারা এই অদৃশ্য শক্তি? তাদের উদ্দেশ্যই বা কি? ১৩ দফা দাবি নিয়ে হেফাজতের সমালোচনা করছে সরকার। আবার তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতেও দ্বিধা করছে না। সরকার মনে করে বিএনপি, জামায়াত এখন আর কার্যকর শক্তি নয়। হেফাজতকে ম্যানেজ করতে পারলেই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। তাদের প্রধান লক্ষ্য ভোটে জেতা। হেফাজত নিজেদেরকে অরাজনৈতিক শক্তি বলছে। কিন্তু তাদের ভেতরে রাজনৈতিক শক্তির তৎপরতা বড় বেশি। ভোটে দাঁড়াবার প্রস্তাবও দেয়া হচ্ছে হেফাজতে ইসলামকে। যদিও হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমেদ শফি জীবনে কোন রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হননি। তার সহকর্মীদের অনেকে রাজনীতির মধ্যে রয়েছেন। এখন তাদের কৌশল হচ্ছে অরাজনৈতিক থেকে দাবি আদায় করা। সেটা কি সম্ভব? সরকার কি তাদের দাবি মানবে বিনা শর্তে? বিএনপির জনসমর্থন আছে। কিন্তু রাজপথে নামার লোক নেই এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। অনেক সিনিয়র নেতা ম্যানেজ। মধ্যম সারির নেতারাও সাহসী হননি। এর পেছনে দু’টো কারণ থাকতে পারে। হয় তারা ভবিষ্যতে অন্য সম্ভাবনা দেখছেন। না-হয় তারা মনে করেন ঝুঁকি নিয়ে কি লাভ? ভয়ভীতি যে তাদের কাঁবু করে ফেলেছে - এটা তো কিছুটা বোঝাই যায়। ১৩৮ জন সিনিয়র ও মধ্যম সারির নেতাকে একত্রে আটক করার পেছনে ভেতরকার ষড়যন্ত্র ছিল এটা বিএনপি অফিসেই প্রকাশ্যে আলোচনা হয় এখন। বিএনপি নেতা এখানে বড় অসহায়। ওয়ান ইলেভেন তার যতটা না সর্বনাশ করেছিল এখন ভেতরকার ষড়যন্ত্র তাকে বেশি বিপদগ্রস্ত করেছে। তিনিও যে ভুল করেননি তা না। তিন বছর আগে থেকে আন্দোলন অব্যাহত রাখা যে সম্ভব নয় তা তিনি বুঝতে পারেননি। দল ঠিক থাকলে হয়তো পারতেন। এখন তিনি যখন হিসাব মেলাতে চেষ্টা করছেন তখন দেখছেন- বাইরের নয় ভেতরের ষড়যন্ত্রই বেশি কার্যকর। হাসিনার সরকার খালেদাকে কোন সুযোগ দেবে না। প্রয়োজনে তাকে জেলে নেবে। অন্য যে কোন শক্তি ক্ষমতায় এলেও তাদের কোন আপত্তি নেই। কৌশলটা সেভাবেই সাজানো হচ্ছে। জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে যে সরকারের দেনদরবার একদম বন্ধ হয়ে গেছে তা কিন্তু বলা যায় না। পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছে। জেলখানার ভেতরেও আলোচনার কথা শোনা যায়। এ সবই বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কৌশল। প্রধানমন্ত্রী নাকি তার দলের নেতাদের প্রায়ই বলে থাকেন, আপনারা অল্পতে ভয় পেয়ে যান। অপেক্ষা করুন, দেখবেন সামনে চমক আছে। হেফাজতের পেছনে এরশাদের নিঃশর্ত সমর্থন কোন বার্তা কি দেয় না? এরশাদ মহাজোটে থেকে কিভাবে এটা করছেন? যদিও জাতীয় পার্টি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছে সরকারকে সমর্থন দেয়ার প্রশ্নে। প্রেসিডিয়ামের বেশির ভাগ সদস্য এখনই মহাজোট ছাড়ার পক্ষে।
কিন্তু এরশাদ বলছেন সময় হয়নি। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি মহাজোটে থেকে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একজন পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য এরশাদ মরিয়া। সেই রাষ্ট্রদূত নানা অজুহাতে সময় দিচ্ছেন না। গুজবের কারখানা আপাতত বন্ধ। অনেকটা নাটকীয়ভাবে গুজব থেমে গেছে। এটা ভাল লক্ষণ না কি অশুভ তা কি করে বলা যায়? অপেক্ষার পালা। রাজনীতি সুস্থ ধারায় চলুক সেটা সবাই চাইছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা হয়তো আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি সক্রিয় এবং সোচ্চার হবেন। একটি শক্তি তৎপর না হলে যে কিছুই হবে না এটা-ও বলছেন কেউ কেউ ।

No comments

Powered by Blogger.