সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র! by মোয়াজ্জেমুল হক

 সাগর প্রানত্মিক দেশের প্রথম ও একমাত্র গ্যাস ত্রে সাঙ্গুর অবস্থা যখন একেবারে নিভু নিভু তখন নতুন অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে কুতুবদিয়ায় চলমান গ্যাস ও তেলের অনুসন্ধান কার্যক্রম।
বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন সাগর তলের এ গ্যাসেেত্র গ্যাসের মজুদ ভা-ার নিয়ে। সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার মূল ভূখ- থেকে সর্বোচ্চ দশ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে এটির অবস্থান হলেও এ গ্যাস েেত্রর নামকরণ হয়েছে মগনামা গ্যাস ত্রে। চট্টগ্রামের সাঙ্গু গ্যাস ত্রে থেকে এর দূরত্ব সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রামের বহির্নোঙ্গরের নিকটবতর্ী। চট্টগ্রাম উপকূল থেকে এর দূরত্ব সর্বোচ্চ ৬৫ কিলোমিটার।
১৬ নম্বর বস্নকে এ গ্যাস েেত্রর অনুসন্ধান কাজে দায়িত্বে রয়েছে কেয়ার্ন এনার্জি। তাদেরই অর্থে এবং কারিগরি সহায়তায় মগনামা গ্যাস ত্রে নামের কুতুবদিয়া সংলগ্ন গভীর সমুদ্রব েএই তেল গ্যাসের থ্রী-ডি সিস্মিক সার্ভে কার্যক্রম পুরাদমে এগিয়ে চলছে। একদল চীনা বিশেষজ্ঞ দিনরাত এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ গ্যাস ত্রেকে ঘিরে ইতোপূর্বে ২টি জরিপসহ বর্তমানে তৃতীয় মাত্রার জরিপে সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞদের পজিটিভ ধারণাই প্রমাণ করে কুতুবদিয়ায় সাগরগর্ভে বিপুল পরিমাণে তেল গ্যাসের মজুদ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ গ্যাস েেত্রর ভূগর্ভস্থ কাঠামো সাঙ্গু গ্যাস েেত্রর চেয়ে ভিন্ন। এতে পৃথক পৃথক দু'টি ভিন্ন সত্মরে গ্যাস থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে একটি ১০ থেকে ১২ হাজার ফুট এবং অন্যটি ১৫ হাজার ফুট নিচে অবস্থিত। ফলে অনুসন্ধান কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ভারি রিগ। চূড়ানত্ম সাফল্য এলে উত্তোলিত গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাঙ্গু ফিল্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধানত্ম রয়েছে। যা পরবতর্ীতে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে অবস্থিত সাঙ্গুর প্রসেসিং পস্নান্টে নিয়ে আসা হবে। ১৬ নম্বর বস্নকে মগনামা ও হাতিয়ার অবস্থান। কেয়ার্ন এনার্জির মতে, মগনামা গ্যাস ত্রে প্রায় ৮শ' বিলিয়ন ঘনফুট এবং হাতিয়ায় ৬শ' বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। মগনামা গ্যাস েেত্রর লম্বা আকৃতির ভূগর্ভের স্ট্রাকচারে প্রায় ২শ' বর্গ কিলোমিটার অংশে চূড়ানত্ম জরিপ কাজ এগিয়ে চলেছে।
সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান জরিপ কাজ শেষ হলে এবং এতে ইতিবাচক সফলতা এলে তা হবে চূড়ানত্ম। এরপর গ্যাস উত্তোলন প্রক্রিয়া শুরম্ন করা যাবে এবং কুতুবদিয়াই হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গ্যাস ত্রে। যা দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলায় বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
উলেস্নখ্য, সাগরব েদু'দফায় জরিপ কাজ শেষে তেল গ্যাস অনুসন্ধানী সংস্থা বিজিপি গত বছরের শেষের দিকে চার শতাধিক জনবল নিয়ে কুতুবদিয়ার মিডল পয়েন্ট কৈয়ারবিলে তাদের চূড়ানত্ম ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা কুতুবদিয়ার পুরো ভূখ-, পূর্বে চ্যানেল ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে কেবল নেটওয়ার্ক ফিটিং করে সার্ভে, ড্রিলিং, ফায়ারিং ও রেকর্ডিং কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ২৫০ বর্গমিটার সার্ভে এলাকায় ৩০-৫০ মিটার মাটির নিচে মুহুর্মুহু ফায়ারিং কাজ চলছে। ফায়ারিং চলাকালে ভূগর্ভে প্রবল কম্পন অনুভূত হচ্ছে। এতে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশের তি হবে কিনা জানতে চাইলে বিজিপির কর্মকর্তা কাদের জানান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়েই তাঁদের সার্ভে কার্যক্রম শুরম্ন করা হয়েছে। এতে দ্বীপের তির কোন কারণ নেই। সার্ভে কার্যক্রমের সফলতা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, এখানে ৮৫ ভাগ গ্যাস, ১৫ ভাগ তেলের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সার্ভে কার্যক্রম কেমন চলছে জানতে চাইলে ঐ সংস্থার পাবলিক রিলেশন ম্যানেজার ফজলুল হক জানান বর্তমানে বঙ্গোপসাগর বিুব্ধ অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় তাঁদের সার্ভে জাহাজের যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। সার্ভে কার্যক্রমের শুরম্ন থেকেই কুতুবদিয়ার জনপ্রতিনিধি ও দ্বীপবাসীর অভূতপূর্ব সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন তিনি। সার্ভে এলাকায় তিগ্রসত্ম জেলে ও অন্যদের তিপূরণ পাওয়া নিয়ে এলাকায় অসনত্মোষ দেখা দিলেও বিজিপি কর্তৃপ তিপূরণ দেয়া শুরম্ন করলে বর্তমানে এলাকায় তেমন কোন অসনত্মোষ দেখা যাচ্ছে না। তবে সার্ভে এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট হতে ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কেবল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে এলাকার জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর আলম ও থানার ওসি ইউসুফ সিদ্দিকীর সার্বিক সহযোগিতায় চুরির ঘটনা আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে জাতীয় গ্যাস সম্পদ উত্তোলনের সুবিধার্থে সংশিস্নষ্ট সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার বলে সচেতন মহল জানায়।
এদিকে কুতুবদিয়ার সচেতন মহল সূত্রে জানানো হয়, দেশ স্বাধীনের পর হতে দ্বীপবাসীর ভুল সিদ্ধানত্মের কারণে বেশিরভাগ সময়ে সরকারবিরোধী প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় তারা দ্বীপের উন্নয়নে তেমন কাজ করতে পারেনি। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ দ্বীপটির নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক সুযোগ সুবিধা হতে অবহেলিত ও বঞ্চিত হয়ে আসছে। এ অবস্থায় কুতুবদিয়ার গ্যাস সম্পদ উত্তোলন করা হলে হয়ত দ্বীপটির প্রতি সরকারের সুনজর পড়তে পারে_ এটিই দ্বীপবাসীর প্রত্যাশা।
উলেস্নখ্য, '৯৫ সালে সাঙ্গু পয়েন্টে গ্যাস আবিষ্কৃত হওয়ার পর নির্বিচারে এ ত্রে থেকে গ্যাস উত্তোলনের জের হিসেবে এর ভূগর্ভের সত্মরে চাপ পড়ে তা তছনছ হয়ে যায়। কয়েক দফায় মেরামত কাজ ও নতুন করে লেয়ারে পারপুরেশন কাজ শেষেও আশাব্যঞ্জক সাফল্য আসেনি। শুরম্নতে সাঙ্গু গ্যাস ত্রে থেকে ১৭০ এমএমএসএফডি গ্যাস উত্তোলিত হলেও পরবতর্ীতে তা কমতে কমতে বর্তমানে ৩২ এমএমএসএফডিতে হ্রাস পেয়েছে। একপর্যায়ে এটি ২৮ এমএমএসএফডিতেও চলে আসে। যা কোন অবস্থাতেই আর উত্তোলন কাজ চালিয়ে যাবার জন্য সঙ্গত নয়। এ অবস্থায় কেয়ার্ন এনার্জির প থেকেও সরকারকে সাঙ্গুর ব্যাপারে রেড সিগন্যাল দিয়েছে। বর্তমান সরকার মতায় আসার পর অব্যাহত গ্যাস সঙ্কটের কারণে সাগর প্রানত্মিক গ্যাস অনুসন্ধান কাজে জোর দেয়া হয়। সরকারের জোরালো সিদ্ধানত্মের ফলে সাগরের কুতুবদিয়া পয়েন্টে মগনামা গ্যাস েেত্রর অনুসন্ধান কাজ বেগবান করা হয়েছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.