সহিংস ঘটনায় মদদ ওয়াদুদ ভুঁইয়ার, ছিল পুলিশও- পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির ওপর গণশুনানি, ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষ্য

খাগড়াছড়ি ও বাঘাইছড়ির সহিংস ঘটনায় মদদ দিয়েছেন বিএনপির আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা আক্রমণকারীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করেনি।
খাগড়াছড়ি সদরের আদিবাসীদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়ার সময় আক্রমণকারীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল। অনেক আদিবাসী পরিবার এখনও ফিরতে পারেনি নিজেদের ঘরবাড়িতে । সেটেলারদের ভয়ে জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক আদিবাসী পরীৰাথর্ী এস এস সি পরীৰা দিতে পারেনি। রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির ওপর অনুষ্ঠিত 'গণশুনানি' তে ৰতিগ্রসত্ম পরিবারের সদস্যরা এ সাৰ্য দেন। তবে গণশুনানির রায় দেয়ার জন্য পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হবে বলে জানান বিচারক প্যানেলের সভাপতি বিচারপতি মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী।
আদিবাসী বিষয়ক জাতীয় কোয়ালিশনের আয়োজনে এবং সিসিডিবি ও আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের সহযোগিতায় এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে বিচারক প্যানেলের সভাপতি ছিলেন বিচারপতি মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী। প্যানেলের সদস্যরা হলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনু, এমপি, নবাব আলী আব্বাস খান, এমপি, শারমীন মুরশেদ, সিসিডিবি'র নির্বাহী পরিচালক জয়নত্ম অধিকারী প্রমুখ। ৰতিগ্রসত্মদের মধ্যে সাৰ্য দিয়েছেন নমিতা চাকমা, ললিতা চাকমা, নিহাল বিন্দু চাকমা, উক্রাই মারমা, রিপন চাকমা, জ্ঞানেন্দ্র চাকমা ও চায়না মারমা। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। পরিস্থিতির ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী দেখান একুশে টেলিভিশনের মিঠুন মোসত্মাফিজ।
গণশুনানি শেষে বিচারপতি মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে শানত্মি আনয়নে শানত্মি চুক্তি বাসত্মবায়নের বিকল্প সেখানে গড়ে তুলতে হবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। পাশাপাশি আনসার বাহিনীর আদলে আদিবাসীদের রৰায় গড়ে তুলতে হবে পৃথক বাহিনী। পার্বতাঞ্চল সফরকারী সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদন শুনে গণশুনানির চূড়ানত্ম রায় দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
গণশুনানিতে সাৰ্য দিতে গিয়ে ৰতিগ্রসত্মরা আবেগাপস্নুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাঁদের একজন হলেন রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের জ্ঞানেন্দ্র চাকমা। তিনি সাৰ্য দেন, সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিএনপির আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সেটেলাররা সহিংস ঘটনা ঘটায়। আর এ সব কিছুর জন্য দায়ী প্রশাসন। সাধারণ মানুষকে নিয়ে খেলছে প্রশাসন। রৰক হয়েও তাঁরা ভৰকের ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। পাহাড়ী ও সেটেলারদের মধ্যে সংঘাত লাগিয়ে শাসকগোষ্ঠী ফায়দা লুটে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন বাঘাইহাটের রিপন চাকমা। তিনি জানান, দাঙ্গা সৃষ্টি হলে সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সেটেলারদের সহায়তা দিয়ে থাকে। সেনা প্রত্যাহারের পাশাপাশি আদি বাঙালীদের রেখে সেটেলারদের দেশের অন্যত্র সম্মানজনক পুনর্বাসন করা হলে পার্বত্য এলাকায় শানত্মি ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন। ঘটনার অনেকদিন পরও জঙ্গল থেকে নিজ বাড়িতে এখনও ফিরে আসতে পারেননি খাগড়াছড়ি সদরের বিধবা ললিতা চাকমার পরিবার। তিনি জানান, সেটেলাররা তাঁদের বাড়িতে আগুন দিতে শুরম্ন করলে নদী পার হয়ে সনত্মানদের নিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিই। স্বামীর রেখে যাওয়া সমসত্ম সহায়-সম্পত্তি নিমিষেই আগুনে পুড়ে যায়। আমার একমাত্র অবলম্বন ছেলেও এসএসসি পরীৰা দিতে পারেনি। সেটেলারদের ভয়ে এখনও আমরা জঙ্গল থেকে বের হতে পারিনি। থাকা-খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই বলে তিনি বিচারক প্যানেলকে জানান। সাৰ্য দেয়ার এক মুহূর্তে তাঁর আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে ওঠে সিরডাপ মিলনায়তন। খাগড়াছড়ি সদরের সাত ভাইয়া পাড়ার চায়না মারমার পরিবারও সেটেলারদের ভয়ে এখনও জঙ্গল থেকে বের হতে পারেনি। তিনি জানান, আগুন দেয়ার সময় সেটেলারদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় আমাদের বাড়িঘর ও জিনিসপত্র। জঙ্গলে পালিয়ে যাই আমরা। আমার পরীৰার সার্টিফিকেটগুলোও আগুনের থাবা থেকে রৰা পায়নি। আর এসএসসি পরীৰা দিতে পারেনি আমার ছোট ভাই। দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি দাবির পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি। খাগড়াছড়ি সদরের উক্রাই মারমার পরিবারও এখনও জঙ্গলে অবস্থান করছে। আগুনে বাড়িঘরসহ জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। তিনি জানান, তিন দিন ধরে ভাত খাইনি আমরা। দু' দিন ধরে ছেলে রয়েছে নিখোঁজ। ছোট মেয়ে খেতে চায়,

No comments

Powered by Blogger.