জিয়া-এরশাদ আমলের ১৬৮ অধ্যাদেশ বৈধতা দিয়ে আইন হচ্ছে- আজ উপস্থাপন মন্ত্রিসভায় ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচারে বঙ্গবন্ধুর করা দালাল আইনটি ফের আইনে রূপান্তর হবে by তপন বিশ্বাস

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে জারি করা ১৭২টি অবৈধ অধ্যাদেশের ১৬৮টিই বৈধতা দিয়ে আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে।
এ লক্ষ্যে আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদনের জন্য এটি উপস্থাপন করা হচ্ছে। এগুলো আইনে পরিণত হলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর জারি করা দালাল আইনটি নতুন করে আইনে রূপান্তর হবে। প্রশাসনিক সঙ্কট এড়াতে জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরুর মাত্র ৫ দিন আগে তড়িঘড়ি করে দু’টি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। দুই বছর ধরে সামরিক শাসনামলে জারি করা এই অধ্যাদেশগুলো অবৈধ হয়ে থাকলেও এর বৈধতা দিতে আইন মন্ত্রণালয় কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয় প্রায় দেড় মাস কাজ করে এটি চূড়ান্ত করে।
মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য পঞ্চম সংশোধনী সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের মার্চ মাসে সুপ্রীমকোর্টের রায়ে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে সামরিক শাসনামলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত অধ্যাদেশসমূহ বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে সরকারের রিভিউ পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত অধ্যাদেশসমূহ সাময়িকভাবে মার্জনা করে প্রথম দফায় ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় দফায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীমকোর্টের রায় আংশিকভাবে পালিত হয়েছে। কিন্ত সামরিক শাসনামলে জারিকৃত ৯১টি অধ্যাদেশ সংসদের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মার্জনাকৃত সময়ের মধ্যে আইনে পরিণত না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বাতিল হয়ে যাবে। এতে করে বিশাল আইনী শূন্যতার সৃষ্টি হবে।
সূত্র জানায়, পৃথক দুটি সারসংক্ষেপে প্রস্তাবিত দুটি আইনের নাম দেয়া হয়েছে ‘১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট হতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরণ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১৩’ এবং ‘১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হতে ১৯৮৬ সালের ১০ নবেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরণ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১৩। দুটি আইনের সিডিউলে অধ্যাদেশগুলো জুড়ে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে পঞ্চম সংশোধনীর সময় ৯১টি ও সপ্তম সংশোধনীর সময় জারি করা আরও ৮১টি অধ্যাদেশ রয়েছে।
এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাদেশগুলোর কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আপাতত আইনের আওতায় এগুলো রাখা হলেও নিকট ভবিষ্যতে প্রতিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে পৃথকভাবে আইন করা হবে। অধ্যাদেশগুলো ইংরেজীতে হওয়ার কারণে স্বল্পতম সময়ে এখন বাংলায় রূপান্তর করে যথাযথভাবে আইন তৈরি সম্ভব হবে না বলে সাময়িকভাবে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী মামলার রায়ের পর আইনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কৌশল অবলম্বন করল সরকার। এতে একদিকে আদালতের রায়ও বহাল থাকল আবার আইনের ধারাবাহিকতাও রক্ষা করা হলো। এই কৌশল অবলম্বন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদের সামরিক শাসনামলে জারি করা ১৭২টি অবৈধ অধ্যাদেশের ১৬৮টিকে বৈধতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করে তা আবার আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে।
বিগত ২১ জানুয়ারি সোমবার গভীর রাতে এ সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এতে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে জারি করা ৯১টি অধ্যাদেশের তিনটি এবং এইচএম এরশাদের সামরিক শাসনামলের ৫টি অধ্যাদেশের বৈধতা দেয়া হয় না। বাকি ১৬৮টি অধ্যাদেশের বৈধতা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ পুনর্বহাল করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের অধীনে ইতোপূর্বে দেশের অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাই এগুলোর বৈধতা দেয়া জরুরী হয়ে পড়ে। এ ছাড়া বৈধতা না দেয়া ৮টি অধ্যাদেশের মধ্যে কোন কোনটি অন্য নামে ইতোপূর্বে আইনে রূপান্তর হওয়ায় তার বৈধতা দেয়ার প্রয়োজন হয়নি।
সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ঘোষিত মুন সিনেমা হল মামলার রায়ে অবৈধ ক্ষমতা দখলে সামরিক আইন জারি, সামরিক ফরমান, আদেশ, রেজুলেশন ইত্যাদি জারি করে সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থার বাইরে কাজকর্ম ইত্যাদি বাতিল বলে ঘোষিত হয়েছে। তবে ওই সময়ে নির্বাহী প্রকৃতির (এক্সিকিউটিভ এ্যাকশন) কাজ, সরকারের দৈনন্দিন কাজ গৃহীত ব্যবস্থা নিষ্পন্নাধীন কার্যধারা ইত্যাদি অতীতে ঘটে যাওয়া কার্যাবলী (পাস্ট এ্যান্ড ক্লোজড) গণ্যে ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে বিবেচনায় মার্জনা করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.