ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যা সমাধানে জাতীয় ঐক্যের তাগিদ- ইস্যু বানিয়ে আন্দোলন না করার জন্য বিরোধী দলকে মেননের আহ্বান

তিস্তা ও ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারতের আগ্রাসী ভূমিকায় বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সাহারা মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্যের।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে ভারত সরকারকে টিপাইমুখ বাঁধ, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পসহ যে কোন প্রকার ক্ষতিকারক প্রকল্প থেকে বিরত রাখতে হবে।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি আয়োজিত ‘পানি অধিকার : প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। তাদের বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, বাংলাদেশের পানি সমস্যা এখন আন্তঃসমস্যা নয়, বরং তা এখন আন্তঃদেশীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, সমস্যা উত্তরণে প্রয়োজন সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যুক্তিতর্ক শেষে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কোন কথা বলেনি। অথচ বিরোধী দলে এসে এটাকে ইস্যু বানিয়ে আন্দোলন করছে। তাদের এ অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেমন ভারতের সঙ্গে পানি নিয়ে দেন-দরবার করছে তেমনি ভারতও চীনের সঙ্গে দেন-দরবার করছে। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ওপর আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক এটা আমাদের দাবি।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ফারাক্কা বাঁধ যাতে বাংলাদেশের মানুষ ও পরিবেশের জীবন-জীবিকা আর ধ্বংস করতে না পারে সে জন্য অবিলম্বে ফারাক্কা বাঁধ অকার্যকর করে গঙ্গার প্রবাহকে পূর্বের প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশের পানির দাবি উত্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহ্বান জানান।
সংগঠনের চেয়ারম্যান আতিকুর আর কে ইউসুফজাইয়ের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আর আই খান।
মূল প্রবন্ধে তিনি জানান, ভারত ৫৪টি নদীর মধ্যে ৪৬টি নদীতে বাঁধ দিয়েছে। এ কারণে গঙ্গায় পানি নেই। মানুষ হেঁটে নদী পার হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীতে বর্ষায় পানি বেশি থাকে। আর শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। বাংলাদেশের ৬০ ভাগ এলাকায় মেরুকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ ক্ষতি ছাড়া কোন উপকারে আসেনি। তিস্তা নদীতে ভারত এ পর্যন্ত ৬টি বাঁধ ও উপ নদীগুলোতে ২০টি বাঁধ দিয়েছে। এ সব বাঁধের কারণে সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা পানি ভারত সরিয়ে নিচ্ছে। তিস্তা নদীসহ অন্যান্য নদীর পানি বন্টন চুক্তি ভারত নানা অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই এটা গঙ্গা পানি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ সাহারা মরুভূমির পথে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.