আমরা পাহাড়ি কাউকে ভয় পাই না- একান্ত সাক্ষাতকারে এসএ গেমসের স্বর্ণজয়ী কারাতেকা জউপ্রু by রুমেল খান
এসএ গেমসে বাংলাদেশ এবার যে ১৮টি স্বর্ণ
জয় করেছে, তার সর্বাধিক ৪টি স্বর্ণই অর্জিত হয় কারাতে ইভেন্টের মাধ্যমে। এই
ইভেন্টে সর্বাধিক দু'টি স্বর্ণ জেতেন কারাতেকা কন্যা জ উ প্রু।
একটি এককে, আরেকটি দলগতভাবে। বাংলাদেশের স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে
তিনিই সবচেয়ে সফল। বাংলাদেশের গর্ব এই সফল ক্রীড়াবিদ জ ই প্রু ৮ মার্চ
ঢাকায় আসেন 'বিশ্ব নারী দিবস' উপলক্ষে নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের আমন্ত্রণে এক
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে, যা অনুষ্ঠিত হয় তোপখানা রোডের চামেলী হাউজে আরবান
সিরডাপ মিলনায়তনে। এই অনুষ্ঠানে যাবার আগে জ উ প্রু সঙ্গে কথা হয়
খিলগাঁওয়ের আনসার সদর দফতরে। সাক্ষাতকারে জ উ প্রু জানিয়েছেন কারাতে নিয়ে
তাঁর ভাবনা, পরিকল্পনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা। এছাড়া ব্যক্তিগত পছন্দের
বিষয়গুলোও উঠে এসেছে তাঁর কথায়। চলুন শোনা যাক সেসব।
প্রশ্ন : এসএ গেমস শেষ হবার পর সম্প্রতি বান্দরবান ও লামায় আপনাদের যে গণসংবর্ধনা দেয়া হলো, সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা কেমন হলো ও নিজের অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তর : প্রথমে আমাদের সংবর্ধনা দেয়া হয় বান্দরবানে। আমি ধারণাই করতে পারিনি, আমাদের সংবর্ধনা দিতে এত আয়োজন হবে ও এত মানুষ আসবে। সত্যি আমি খুব অভিভূত হয়েছি। বার বার মনে হচ্ছিল, দেশের জন্য সামান্য কিছু হলেও করতে পেরেছি।
প্রশ্ন : এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ের সুবাদে ফেডারেশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে কত টাকা পুরস্কার পেয়েছেন?
উত্তর : ফেডারেশন থেকে এখনও কোন অর্থ পুরস্কার পাইনি।
প্রশ্ন : কত টাকা দেয়ার কথা ছিল?
উত্তর : যতদূর জানি, এক লাখ টাকা।
প্রশ্ন : অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা থেকে তাহলে কত টাকা পেয়েছেন?
উত্তর : দেড় লাখ টাকার মতো।
প্রশ্ন : এই টাকা কিভাবে খরচ করেছেন বা করবেন?
উত্তর : বেশকিছু টাকা ইতোমধ্যেই খরচ করে ফেলেছি।
প্রশ্ন : কোন্ কোন্ খাতে কিভাবে খরচ করলেন পাঠকদের কৌতূহল মেটাতে একটু বলুন।
উত্তর : নিজ এলাকার মন্দিরে বেশির ভাগ টাকাই দান করেছি। এছাড়া কক্সবাজারে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জেটি নির্মাণের জন্য কিছু দান করেছি। কিছু টাকা এখনও হাতে রয়ে গেছে।
প্রশ্ন : এবারের এসএ গেমসে বাংলাদেশের স্বর্ণজয়ীদের বেশিরভাগই মহিলা। এ বিষয়টিকে আপনি কোন্ দৃষ্টিতে দেখছেন?
উত্তর : পুরুষদের পাশাপাশি এখন মেয়েরাও সমানতালে উঠে আসছে ক্রীড়াক্ষেত্রে। ঘরবাড়ি, সংসার সামলে দেশের জন্য তাঁরা অনেক পরিশ্রম করছেন। তাই একজন নারী হিসেবে বিষয়টি আমার জন্য অবশ্যই আনন্দের।
প্রশ্ন : আপনার নিজের ও পরিবারের সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : আমার জন্ম বান্দরবান সদরে, ১৩ মার্চ, ১৯৮৪ সালে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বাবা উ লা অং। পেশায় ব্যবসায়ী। মা অবাচিং, গৃহিণী। আমার কোন ভাইবোন নেই। পড়াশোনা করেছি এসএসসি পর্যন্ত পারিবারিক আর্থিক অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল। চাকরি করছি বাংলাদেশ আনসারে ২০০৩ সাল থেকে খেলোয়াড়ি কোটায়। আমার নামের আংশিক অর্থ জানি_ 'উ' অর্থ ফর্সা আর 'প্রু' অর্থ বরফ; এই তো...
প্রশ্ন : শৈশবে কেমন স্বভাবের ছিলেন? খুব ডানপিটে না শান্ত?
উত্তর : এখন আমাকে যেমন শান্ত স্বভাবের দেখছেন, ছোটবেলা থেকেই আমি এমন।
প্রশ্ন : পরিবারের আর কেউ কি খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন?
উত্তর : আমার স্বামী আছেন। তাঁর নাম সিং মং। তিনি বান্দরবান, লামায় অবস্থিত 'ইউনাইটেড ক্লাবের কারাতে প্রশিক্ষক।
প্রশ্ন : আপনাদের বিয়ে হয়ে কবে? নিজেদের না পরিবারের পছন্দে?
উত্তর : পরিবারের পছন্দেই ২০০৭ সালে আমাদের বিয়ে হয়।
প্রশ্ন : সন্তান কয়টি?
উত্তর : একটি ছেলে। নাম সিং ক্যউ।
প্রশ্ন : কারাতে খেলার প্রতি আগ্রহ জন্মাল কেন ও কিভাবে?
উত্তর : বাবা ও মায়ের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণাতেই কারাতের প্রতি আকৃষ্ট হই। বাড়ির পাশেই 'ইউনাইটেড ক্লাবে' ভর্তি হয়ে এই খেলায় হাতেখড়ি হয় আমার। তখন আমার বয়স ৭।
প্রশ্ন : কারাতেকা না হলে কি হতেন?
উত্তর : কিছু হতাম না, কারাতেকাই হতাম।
প্রশ্ন : জাতীয় পর্যায়ে এই খেলায় কবে সম্পৃক্ত হন? রেজাল্ট কি ছিল?
উত্তর : ১৯৯৭ সালে 'জাতীয় শিশু-কিশোর কারাতে প্রতিযোগিতায়' অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করি। সেই থেকে আরম্ভ।
প্রশ্ন : প্রথমে বাবা-মায়ের সমর্থন পেয়েছিলেন, এখন স্বামীর সমর্থন ও সাহায্য কতটা পাচ্ছেন?
উত্তর : হঁ্যা, আমার স্বামী নিজে এই খেলার সঙ্গে থাকায় তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ, পরামর্শ ও সহযোগিতা করেন। এজন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন : আপনার প্রথমে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সম্পর্কে বলুন।
উত্তর : ২০০৬ সালে এসএ গেমসে অংশ নেয়াটাই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ওই আসরে আমার পারফরমেন্স ছিল দু'টি ব্রোঞ্জপদক।
প্রশ্ন : দেশে-বিদেশে আপনার আদর্শ কারাতেকা কে কে?
উত্তর : তেমন কেউ নেই। তবে সাবেক কারাতেকা ও আমাদের কোচ জসীম উদ্দিন ভাইয়ার খেলার স্টাইল আমার কাছে অনুসরণীয়।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে এই খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার ইচ্ছে আছে?
উত্তর : হ্যাঁ, আছে।
প্রশ্ন : কারাতে নিয়ে আপনার ভবিষ্যত লক্ষ্য কি?
উত্তর : আমার অনেকদিনের ইচ্ছে, নিজের এলাকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই খেলাটির সম্প্রসারণ করার, তারা যেন প্রত্যেকেই ভাল কারাতেকা হতে পারে এজন্য কিছু করতে চাই।
প্রশ্ন : আজ থেকে দশ বছর পর কারাতেতে নিজেকে কোন্ অবস্থানে দেখতে চান?
উত্তর : এখনও এতদূর পর্যন্ত ভাবিনি।
প্রশ্ন : কারাতে নিয়ে কোন মজার, স্মরণীয় বা তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে কি? থাকলে বলুন।
উত্তর : আসলে ক্যাম্পে আমাদের থাকতে হয় কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে। মজার কিছু ঘটার অবকাশ নেই বললেই চলে। তবে মজার ঘটনা যে একেবারেই ঘটে না, তা নয়। তবে এগুলো এতই খুঁটিনাটি যে, উল্লেখ করার মতো নয়। তিক্ত অভিজ্ঞতা এখন পর্যন্ত হয়নি। আর স্মরণীয় অভিজ্ঞতা বলতে এবার এসএ গেমসে দুটো স্বর্ণ জয়।
প্রশ্ন : কারাতে থেকে অবসর নেয়ার পর কি কোচ হবার অভিলাষ আছে?
উত্তর : এটা নিয়ে এখনও কোন চিন্তাভাবনা করিনি। আমি খেলা নিয়েই ভাবছি।
প্রশ্ন : এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের পেছনে আপনার কোচের অবদান কতটুকু?
উত্তর : একটু আগেই আমার কোচ জসীম উদ্দিনের কথা বলেছি। তিনি আমার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। অনুশীলনের সময় কোথায় ভ্রলত্রুটি হচ্ছে_ তা ধরিয়ে দিতেন এবং তা থেকে নৈপুণ্যের উত্তরণ কিভাবে ঘটানো যায় সে সম্পর্কে যথাযথ কোচিং করিয়েছেন। আমার সাফল্যের পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে কারাতের ভবিষ্যত কেমন?
উত্তর : কারাতেতে যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে আমরাই প্রথম সফল হয়েছি, তাই বলতে পারি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এ খেলায় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমি দারুণ আশাবাদী।
প্রশ্ন : কারাতেতে সফল হতে গেলে কি কি গুণ বা যোগ্যতা থাকা উচিত?
উত্তর : প্রথমেই দৃঢ় মানসিকতা। ছোটবেলা থেকেই এর চর্চা শুরু করতে হবে। আর শারীরিক সক্ষমতা তো লাগবেই।
প্রশ্ন : কারাতে কতটুকু শারীরিক আর কতটুকু মানসিক খেলা?
উত্তর : দুটোই। কারাতে যতটা শারীরিক খেলা, ততটাই মানসিক খেলা। একজন শক্তিশালী কারাতেকা অনায়াসেই হেরে যেতে পারে যদি তার মনের জোর ও সাহস না থাকে।
প্রশ্ন : এ খেলায় রাগী হয়ে খেলে কি জেতা সম্ভব?
উত্তর : মোটেও না। এটা সম্পূর্ণ কৌশলী খেলা। এই খেলায় ক্রুদ্ধ মনোভাব নিয়ে খেললে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এক্ষেত্রে এই প্রবাদটা মনে রাখা বাঞ্ছনীয়_'রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।'
প্রশ্ন : বর্তমানের সাফল্য আগামী ২০১২ সালের এসএ গেমসেও কি ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করেন?
উত্তর : হ্যাঁ, ঠিকমতো ট্রেনিং পেলে আমি আশাবাদী যে বর্তমানের সাফল্য আগামীতেও ধরে রাখতে পারব।
প্রশ্ন : এবারের এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের ব্যাপারে আপনার ওপর প্রত্যাশার চাপ কতটা ছিল?
উত্তর : অনেকেই হয়ত প্রত্যাশার চাপে ভেঙ্গে পড়েন, কিন্তু আমার জন্য এটা ইতিবাচক দিক। ফেডারেশন, মিডিয়া বা অন্য কারোর কাছ থেকে কোন চাপ ছিল না। তবে আমার কোচ আমার ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করেছেন। এটাই আমাকে ভাল পারফর্ম করতে অনুপ্রাণিত করেছে। স্বর্ণ জয়ের জন্য আমার প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি ছিল না।
প্রশ্ন : প্রতিপর্ব সম্পর্কে কি কোন আগাম ধারণা ছিল?
উত্তর : হ্যাঁ ছিল। কেননা, ২০০৬ সালের গেমসে যে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম, এবার তাঁদের অনেকেই এসেছিলেন।
প্রশ্ন : স্বর্ণ জয়ের পর কেমন লেগেছিল?
উত্তর : যখন জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠল, তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল, মনে হচ্ছিল দেশের জন্য যে পরিশ্রম করেছি, তা আজ সার্থক হলো।
প্রশ্ন : কারাতে খেলাকে এদেশে জনপ্রিয় করতে চাইলে কি করা প্রয়োজন?
উত্তর : এটা ঠিক, অন্য খেলার তুলনায় এদেশে কারাতে খেলা তেমন জনপ্রিয় নয়। যদি স্কুল পর্যায় থেকে এ খেলাটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে এ খেলার প্রচার, প্রসার ও জনপ্রিয়তা বাড়বেই। এক্ষেত্রে মিডিয়ারও ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে।
প্রশ্ন : কারাতে খেলার বাইরে কি কখনও কাউকে শায়েস্তা করেছেন?
উত্তর : না (হেসে)।
প্রশ্ন : যদি রাস্তাঘাটে কোন দুর্বৃত্তের পাল্লা পড়েন, তখন কি করবেন?
উত্তর : তখন তো স্বাভাবিকভাবেই আত্মরক্ষার জন্য কারাতে বিদ্যা প্রয়োগ করতে হবে।
প্রশ্ন : অন্য প্রিয় খেলা কি? প্রিয় খেলোয়াড় কে কে?
উত্তর : কারাতে ছাড়া আমার অন্য কোন প্রিয় খেলা নেই। দেশে শামীম ওসমান ভাইয়ের খেলা ভাল লাগে।
প্রশ্ন : আপনার শখ কি?
উত্তর : একটাই_ কারাতে খেলা।
প্রশ্ন : অবসর কাটান কি করে?
উত্তর : নিজের এলাকার 'মহামুণি শিশু সদনে'র অনাথ শিশুদের দেখাশোনা করি। ওদের খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা এগুলোর দেখভাল করি। এই আশ্রমের পরিচালক আমার স্বামী।
প্রশ্ন : আপনার প্রিয় বিষয়গুলো নিয়ে কিছু বলুন।
উত্তর : ভাললাগে সাবিনা ইয়াসমীনের গান শুনতে আর শামসুর রাহমানের কবিতা পড়তে। ভাত-মাছ খেতে ভালবাসি। আকাশি রং, শাপলা ফুল, ইলিশ মাছ, পেঁপে ফল, থামি পোশাক_ এগুলো আমার প্রিয়। যেকোন সুগন্ধিই ব্যবহার করতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন : মজার প্রশ্ন, রান্না না কান্না_ কোন্টিতে বেশি দৰ আপনি?
উত্তর : (হেসে) আমার কান্নাকাটির অভ্যাস নেই। বরং রান্না করতে পারি। দেশী সব খাবারই রাঁধতে পারি।
প্রশ্ন : কোন্ ৩টি জিনিস ছাড়া আপনি অচল?
উত্তর : মোবাইল, কলম আর আমার ছেলে।
প্রশ্ন : প্রিয় বন্ধু কে কে?
উত্তর : আমার বান্ধবী
প্রশ্ন : এসএ গেমস শেষ হবার পর সম্প্রতি বান্দরবান ও লামায় আপনাদের যে গণসংবর্ধনা দেয়া হলো, সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা কেমন হলো ও নিজের অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তর : প্রথমে আমাদের সংবর্ধনা দেয়া হয় বান্দরবানে। আমি ধারণাই করতে পারিনি, আমাদের সংবর্ধনা দিতে এত আয়োজন হবে ও এত মানুষ আসবে। সত্যি আমি খুব অভিভূত হয়েছি। বার বার মনে হচ্ছিল, দেশের জন্য সামান্য কিছু হলেও করতে পেরেছি।
প্রশ্ন : এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ের সুবাদে ফেডারেশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে কত টাকা পুরস্কার পেয়েছেন?
উত্তর : ফেডারেশন থেকে এখনও কোন অর্থ পুরস্কার পাইনি।
প্রশ্ন : কত টাকা দেয়ার কথা ছিল?
উত্তর : যতদূর জানি, এক লাখ টাকা।
প্রশ্ন : অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা থেকে তাহলে কত টাকা পেয়েছেন?
উত্তর : দেড় লাখ টাকার মতো।
প্রশ্ন : এই টাকা কিভাবে খরচ করেছেন বা করবেন?
উত্তর : বেশকিছু টাকা ইতোমধ্যেই খরচ করে ফেলেছি।
প্রশ্ন : কোন্ কোন্ খাতে কিভাবে খরচ করলেন পাঠকদের কৌতূহল মেটাতে একটু বলুন।
উত্তর : নিজ এলাকার মন্দিরে বেশির ভাগ টাকাই দান করেছি। এছাড়া কক্সবাজারে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জেটি নির্মাণের জন্য কিছু দান করেছি। কিছু টাকা এখনও হাতে রয়ে গেছে।
প্রশ্ন : এবারের এসএ গেমসে বাংলাদেশের স্বর্ণজয়ীদের বেশিরভাগই মহিলা। এ বিষয়টিকে আপনি কোন্ দৃষ্টিতে দেখছেন?
উত্তর : পুরুষদের পাশাপাশি এখন মেয়েরাও সমানতালে উঠে আসছে ক্রীড়াক্ষেত্রে। ঘরবাড়ি, সংসার সামলে দেশের জন্য তাঁরা অনেক পরিশ্রম করছেন। তাই একজন নারী হিসেবে বিষয়টি আমার জন্য অবশ্যই আনন্দের।
প্রশ্ন : আপনার নিজের ও পরিবারের সম্পর্কে কিছু বলুন।
উত্তর : আমার জন্ম বান্দরবান সদরে, ১৩ মার্চ, ১৯৮৪ সালে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বাবা উ লা অং। পেশায় ব্যবসায়ী। মা অবাচিং, গৃহিণী। আমার কোন ভাইবোন নেই। পড়াশোনা করেছি এসএসসি পর্যন্ত পারিবারিক আর্থিক অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল। চাকরি করছি বাংলাদেশ আনসারে ২০০৩ সাল থেকে খেলোয়াড়ি কোটায়। আমার নামের আংশিক অর্থ জানি_ 'উ' অর্থ ফর্সা আর 'প্রু' অর্থ বরফ; এই তো...
প্রশ্ন : শৈশবে কেমন স্বভাবের ছিলেন? খুব ডানপিটে না শান্ত?
উত্তর : এখন আমাকে যেমন শান্ত স্বভাবের দেখছেন, ছোটবেলা থেকেই আমি এমন।
প্রশ্ন : পরিবারের আর কেউ কি খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন?
উত্তর : আমার স্বামী আছেন। তাঁর নাম সিং মং। তিনি বান্দরবান, লামায় অবস্থিত 'ইউনাইটেড ক্লাবের কারাতে প্রশিক্ষক।
প্রশ্ন : আপনাদের বিয়ে হয়ে কবে? নিজেদের না পরিবারের পছন্দে?
উত্তর : পরিবারের পছন্দেই ২০০৭ সালে আমাদের বিয়ে হয়।
প্রশ্ন : সন্তান কয়টি?
উত্তর : একটি ছেলে। নাম সিং ক্যউ।
প্রশ্ন : কারাতে খেলার প্রতি আগ্রহ জন্মাল কেন ও কিভাবে?
উত্তর : বাবা ও মায়ের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণাতেই কারাতের প্রতি আকৃষ্ট হই। বাড়ির পাশেই 'ইউনাইটেড ক্লাবে' ভর্তি হয়ে এই খেলায় হাতেখড়ি হয় আমার। তখন আমার বয়স ৭।
প্রশ্ন : কারাতেকা না হলে কি হতেন?
উত্তর : কিছু হতাম না, কারাতেকাই হতাম।
প্রশ্ন : জাতীয় পর্যায়ে এই খেলায় কবে সম্পৃক্ত হন? রেজাল্ট কি ছিল?
উত্তর : ১৯৯৭ সালে 'জাতীয় শিশু-কিশোর কারাতে প্রতিযোগিতায়' অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করি। সেই থেকে আরম্ভ।
প্রশ্ন : প্রথমে বাবা-মায়ের সমর্থন পেয়েছিলেন, এখন স্বামীর সমর্থন ও সাহায্য কতটা পাচ্ছেন?
উত্তর : হঁ্যা, আমার স্বামী নিজে এই খেলার সঙ্গে থাকায় তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ, পরামর্শ ও সহযোগিতা করেন। এজন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন : আপনার প্রথমে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট সম্পর্কে বলুন।
উত্তর : ২০০৬ সালে এসএ গেমসে অংশ নেয়াটাই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ওই আসরে আমার পারফরমেন্স ছিল দু'টি ব্রোঞ্জপদক।
প্রশ্ন : দেশে-বিদেশে আপনার আদর্শ কারাতেকা কে কে?
উত্তর : তেমন কেউ নেই। তবে সাবেক কারাতেকা ও আমাদের কোচ জসীম উদ্দিন ভাইয়ার খেলার স্টাইল আমার কাছে অনুসরণীয়।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে এই খেলাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার ইচ্ছে আছে?
উত্তর : হ্যাঁ, আছে।
প্রশ্ন : কারাতে নিয়ে আপনার ভবিষ্যত লক্ষ্য কি?
উত্তর : আমার অনেকদিনের ইচ্ছে, নিজের এলাকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই খেলাটির সম্প্রসারণ করার, তারা যেন প্রত্যেকেই ভাল কারাতেকা হতে পারে এজন্য কিছু করতে চাই।
প্রশ্ন : আজ থেকে দশ বছর পর কারাতেতে নিজেকে কোন্ অবস্থানে দেখতে চান?
উত্তর : এখনও এতদূর পর্যন্ত ভাবিনি।
প্রশ্ন : কারাতে নিয়ে কোন মজার, স্মরণীয় বা তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে কি? থাকলে বলুন।
উত্তর : আসলে ক্যাম্পে আমাদের থাকতে হয় কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে। মজার কিছু ঘটার অবকাশ নেই বললেই চলে। তবে মজার ঘটনা যে একেবারেই ঘটে না, তা নয়। তবে এগুলো এতই খুঁটিনাটি যে, উল্লেখ করার মতো নয়। তিক্ত অভিজ্ঞতা এখন পর্যন্ত হয়নি। আর স্মরণীয় অভিজ্ঞতা বলতে এবার এসএ গেমসে দুটো স্বর্ণ জয়।
প্রশ্ন : কারাতে থেকে অবসর নেয়ার পর কি কোচ হবার অভিলাষ আছে?
উত্তর : এটা নিয়ে এখনও কোন চিন্তাভাবনা করিনি। আমি খেলা নিয়েই ভাবছি।
প্রশ্ন : এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের পেছনে আপনার কোচের অবদান কতটুকু?
উত্তর : একটু আগেই আমার কোচ জসীম উদ্দিনের কথা বলেছি। তিনি আমার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। অনুশীলনের সময় কোথায় ভ্রলত্রুটি হচ্ছে_ তা ধরিয়ে দিতেন এবং তা থেকে নৈপুণ্যের উত্তরণ কিভাবে ঘটানো যায় সে সম্পর্কে যথাযথ কোচিং করিয়েছেন। আমার সাফল্যের পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে কারাতের ভবিষ্যত কেমন?
উত্তর : কারাতেতে যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে আমরাই প্রথম সফল হয়েছি, তাই বলতে পারি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এ খেলায় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমি দারুণ আশাবাদী।
প্রশ্ন : কারাতেতে সফল হতে গেলে কি কি গুণ বা যোগ্যতা থাকা উচিত?
উত্তর : প্রথমেই দৃঢ় মানসিকতা। ছোটবেলা থেকেই এর চর্চা শুরু করতে হবে। আর শারীরিক সক্ষমতা তো লাগবেই।
প্রশ্ন : কারাতে কতটুকু শারীরিক আর কতটুকু মানসিক খেলা?
উত্তর : দুটোই। কারাতে যতটা শারীরিক খেলা, ততটাই মানসিক খেলা। একজন শক্তিশালী কারাতেকা অনায়াসেই হেরে যেতে পারে যদি তার মনের জোর ও সাহস না থাকে।
প্রশ্ন : এ খেলায় রাগী হয়ে খেলে কি জেতা সম্ভব?
উত্তর : মোটেও না। এটা সম্পূর্ণ কৌশলী খেলা। এই খেলায় ক্রুদ্ধ মনোভাব নিয়ে খেললে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এক্ষেত্রে এই প্রবাদটা মনে রাখা বাঞ্ছনীয়_'রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।'
প্রশ্ন : বর্তমানের সাফল্য আগামী ২০১২ সালের এসএ গেমসেও কি ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করেন?
উত্তর : হ্যাঁ, ঠিকমতো ট্রেনিং পেলে আমি আশাবাদী যে বর্তমানের সাফল্য আগামীতেও ধরে রাখতে পারব।
প্রশ্ন : এবারের এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের ব্যাপারে আপনার ওপর প্রত্যাশার চাপ কতটা ছিল?
উত্তর : অনেকেই হয়ত প্রত্যাশার চাপে ভেঙ্গে পড়েন, কিন্তু আমার জন্য এটা ইতিবাচক দিক। ফেডারেশন, মিডিয়া বা অন্য কারোর কাছ থেকে কোন চাপ ছিল না। তবে আমার কোচ আমার ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করেছেন। এটাই আমাকে ভাল পারফর্ম করতে অনুপ্রাণিত করেছে। স্বর্ণ জয়ের জন্য আমার প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাসের কোন কমতি ছিল না।
প্রশ্ন : প্রতিপর্ব সম্পর্কে কি কোন আগাম ধারণা ছিল?
উত্তর : হ্যাঁ ছিল। কেননা, ২০০৬ সালের গেমসে যে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম, এবার তাঁদের অনেকেই এসেছিলেন।
প্রশ্ন : স্বর্ণ জয়ের পর কেমন লেগেছিল?
উত্তর : যখন জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠল, তখন এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল, মনে হচ্ছিল দেশের জন্য যে পরিশ্রম করেছি, তা আজ সার্থক হলো।
প্রশ্ন : কারাতে খেলাকে এদেশে জনপ্রিয় করতে চাইলে কি করা প্রয়োজন?
উত্তর : এটা ঠিক, অন্য খেলার তুলনায় এদেশে কারাতে খেলা তেমন জনপ্রিয় নয়। যদি স্কুল পর্যায় থেকে এ খেলাটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে এ খেলার প্রচার, প্রসার ও জনপ্রিয়তা বাড়বেই। এক্ষেত্রে মিডিয়ারও ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে।
প্রশ্ন : কারাতে খেলার বাইরে কি কখনও কাউকে শায়েস্তা করেছেন?
উত্তর : না (হেসে)।
প্রশ্ন : যদি রাস্তাঘাটে কোন দুর্বৃত্তের পাল্লা পড়েন, তখন কি করবেন?
উত্তর : তখন তো স্বাভাবিকভাবেই আত্মরক্ষার জন্য কারাতে বিদ্যা প্রয়োগ করতে হবে।
প্রশ্ন : অন্য প্রিয় খেলা কি? প্রিয় খেলোয়াড় কে কে?
উত্তর : কারাতে ছাড়া আমার অন্য কোন প্রিয় খেলা নেই। দেশে শামীম ওসমান ভাইয়ের খেলা ভাল লাগে।
প্রশ্ন : আপনার শখ কি?
উত্তর : একটাই_ কারাতে খেলা।
প্রশ্ন : অবসর কাটান কি করে?
উত্তর : নিজের এলাকার 'মহামুণি শিশু সদনে'র অনাথ শিশুদের দেখাশোনা করি। ওদের খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা এগুলোর দেখভাল করি। এই আশ্রমের পরিচালক আমার স্বামী।
প্রশ্ন : আপনার প্রিয় বিষয়গুলো নিয়ে কিছু বলুন।
উত্তর : ভাললাগে সাবিনা ইয়াসমীনের গান শুনতে আর শামসুর রাহমানের কবিতা পড়তে। ভাত-মাছ খেতে ভালবাসি। আকাশি রং, শাপলা ফুল, ইলিশ মাছ, পেঁপে ফল, থামি পোশাক_ এগুলো আমার প্রিয়। যেকোন সুগন্ধিই ব্যবহার করতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন : মজার প্রশ্ন, রান্না না কান্না_ কোন্টিতে বেশি দৰ আপনি?
উত্তর : (হেসে) আমার কান্নাকাটির অভ্যাস নেই। বরং রান্না করতে পারি। দেশী সব খাবারই রাঁধতে পারি।
প্রশ্ন : কোন্ ৩টি জিনিস ছাড়া আপনি অচল?
উত্তর : মোবাইল, কলম আর আমার ছেলে।
প্রশ্ন : প্রিয় বন্ধু কে কে?
উত্তর : আমার বান্ধবী
No comments