এবার রোহিঙ্গা জঙ্গীদের মাঠে নামানোর চক্রান্ত জামায়াতের!- কতিপয় চিহ্নিত নেতা কক্সবাজারে আবার সংগঠিত করছে ওদের by এইচএম এরশাদ

রামুর বৌদ্ধ জনপদে নারকীয় হামলায় সম্পৃক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গীরা কতিপয় জামায়াত নেতার সহযোগিতায় কক্সবাজার ও নাইক্ষ্যংছড়িতে আবার সংগঠিত হচ্ছে। জানা গেছে বৌদ্ধ জনপদে হামলার চক্রান্ত ও তদারকির দায়িত্ব পালনকারী জঙ্গী নেতা হাফেজ ছালামতউল্লাহর নির্দেশে ওয়ামি কার্যালয় থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের ফের সংগঠিত করতে কলকাঠি নাড়ছে।
রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধ বিহার, মন্দির ও সংখ্যালঘু লোকজনের বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বদানকারী তোফাইল-ছালামতসহ হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় পাতি রোহিঙ্গা নেতারা যত্রতত্র বেপরোয়া ঘুরছে। যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে আত্মগোপনে থাকা জামায়াত নেতা তোফাইলের সঙ্গে। বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর লক্ষ্যে বৌদ্ধ জনপদে হামলাকারী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদেরও আগামীতে হরতালসহ মিটিং-মিছিলের সময় মাঠে নামানোর ফন্দি আঁটছে জামায়াত-শিবির।
মোবাইল ফোনের সিম বদল ॥ দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য রামুর বৌদ্ধ জনপদে হামলার নীল নক্সা তৈরিকারীরা সহিংস হামলার একদিন পর থেকে তাদের মুঠোফোনের সিম পাল্টে নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওসব নম্বর না জানায় তাদের গন্তব্য চিহ্নিত কিংবা গ্রেফতার করতে পারছে না। তবে পরিকল্পনাকারীরা ঠিকই প্রতি মূহূর্তে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে রোহিঙ্গা জঙ্গী ও কতিপয় জামায়াত নেতার সঙ্গে। আত্মগোপনে থাকার পাশাপাশি রোহিঙ্গা জঙ্গীরা মামলা থেকে রেহাই পেতে মোটা অঙ্কের ফান্ডও মজুদ করছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
ফান্ড সংগ্রহ ॥ মামলা থেকে রেহাই পেতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আত্মগোপনে থাকা রোহিঙ্গা জঙ্গীরা মালয়েশিয়া-সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের এবং দেশে অবস্থানকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত একাধিক এনজিওর কাছ থেকে অঢেল টাকার ফান্ড সংগ্রহ করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের কাছ থেকে বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে ওই টাকা নিয়ে আসা হচ্ছে। সরকারী-বেসরকারী ও বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে রোহিঙ্গা জঙ্গী, কতিপয় এনজিও সংস্থা ও মৌলবাদী গ্রুপের নাম উঠে আসায় কৌশলে মামলা থেকে রেহাই পেতে নতুন করে এই ফান্ড যোগাড় করে চলছে বলে জানা গেছে। জেলার চারটি থানায় রুজু হওয়া মামলার চার্জশীট থেকে টাকার বিনিময়ে বাদ যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বৌদ্ধ বিহার ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীরা। ওয়ামির সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গারা এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে ওই টাকা লেনদেন করছে।
রোহিঙ্গা অপতৎপরতা ॥ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়ে শলা-পরামর্শ ও সিদ্ধান্তসহ ট্রেনিংও চালিয়ে যাচ্ছে বলে একটি সূত্র আভাস দিয়েছে। সম্প্রতি টেকনাফে গহীন অরণ্যে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ভেঙ্গে দিয়েছে জঙ্গীদের তৈরি একটি লম্বা ট্রেনিং ক্যাম্প। পুলিশী অভিযানের খবর আগে প্রচার হয়ে পড়ায় অস্ত্রধারী জঙ্গীরা তাদের ট্রেনিং সেন্টার ত্যাগ করে পালিয়েছে ওই পাহাড় থেকে। টেকনাফ পুলিশ জঙ্গীদের আস্তানা ঘেরাও করবে এ সংবাদ মুঠোফোনে পাহাড়ে অবস্থানকারীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে রোহিঙ্গা লালনকারী মৌলবাদী চক্রটি। এ ঘটনায় সুশীল সমাজের অনেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি এনজিওর নেতাদের সন্দেহের চোখে দেখছেন। রামুর সহিংস ঘটনায় সম্পৃক্ত অথচ কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থানায় রুজু হওয়া মামলাগুলোর তালিকায় যাদের নাম উঠে আসেনি, এমন রোহিঙ্গা জঙ্গীদের গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে লোকালয়ে দেখা গেছে। শহরের তারাবনিয়াছড়ায় বসবাসকারী পুরনো রোহিঙ্গা নেতা মৌলভী আয়াছের এবং বিডিআর ক্যাম্প এলাকায় জঙ্গী নেতা হামিদ হোসেনের বাসায় অপরিচিত ওইসব লোকজনের আনাগোনায় সচেতন মহলের মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে।
দুষ্কৃতকারীদের প্রশ্রয় ॥ টেকনাফ, উখিয়া ও রামুর বৌদ্ধ জনপদে হামলায় রোহিঙ্গাসহ সম্পৃক্ত স্থানীয় বখাটেদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলছে বলে কতিপয় রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে ভুল তথ্য দিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আড়াল করে নেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ধান্ধাবাজ ওসব নেতা রোহিঙ্গাদের পক্ষে সাফাই গাইতেও দ্বিধা করছে না।
কারাগারে জঙ্গীদের সাক্ষাত ॥ রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধ বিহার-মন্দির ও সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নারকীয় হামলায় গ্রেফতার হওয়া দুষ্কৃতকারী ও রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সঙ্গে কারাগারে গিয়েও বহু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও জামায়াত নেতারা সাক্ষাত করছে বলে জানা গেছে। বৌদ্ধ জনপদে হামলা ঘটনায় এজাহারভুক্ত জামায়াত নেতাদের স্বজনরা যোগাযোগ করে চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সঙ্গে। রামুর বৌদ্ধ জনপদে ধ্বংসলীলার পরিকল্পনাকারী রোহিঙ্গা জঙ্গী নেতা আবু ছালেহ ওরফে ছালেহ আহমদের সঙ্গে তার স্ত্রীসহ অচেনা লোকজন কক্সবাজার কারাগারে গিয়ে সাক্ষাত করছে প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া কারাগারে আটক জামায়াত নেতা শহিদুল আলম বাহাদুরের সঙ্গে প্রতিদিন সাক্ষাত করছে অনেকে। জেলের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে এক শ্রেণীর কারা রক্ষীর প্রত্যক্ষ মদদে ও মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ হয়ে অচেনা ঐ ব্যক্তিদের কারাগারে সরাসরি কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বৌদ্ধ জনপদে নারকীয় হামলা সংক্রান্ত রুজুকৃত মামলার তদন্তে ব্যাঘাত সৃষ্টিসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওয়াকিফহাল মহল থেকে। জঙ্গী নেতা আবু ছালেহ তার স্ত্রীর মাধ্যমে জঙ্গীদের খবর পাঠিয়ে সাক্ষাত করতে নিয়ে আসে জেল হাজতে। এ ঘটনা অবহিত হওয়ার পর আবু ছালেহের সাক্ষাতকারীদের বিষয়ে কড়া নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার রফিকুল হায়দার।
উদ্দেশ্য নাশকতা সৃষ্টি ॥ জেলার রম্যভূমি রামু বৌদ্ধ বিহারের জন্য ছিল বিখ্যাত। মৌলবাদী গোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা জঙ্গীরা ওসব বিহারে রক্ষিত হাজার বছরের পুরনো স্মৃতিগুলো গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মাত্র চার ঘণ্টায় ভস্মীভূত করে দিয়েছে। সূক্ষ্ম পরিকল্পনা নিয়ে মৌলবাদীরা রামুতে নারকীয় এ হামলা চালিয়েছে। উত্তম বড়ুয়া বলতে গেলে ঘটনা চক্রের পুতুল মাত্র। পরিকল্পনাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল–শুধুমাত্র একজন বড়ুয়ার ফেসবুকে পবিত্র কোরান অবমাননার ছবি ট্যাগ করে দেয়া। তা-না হলে যাকে নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত, সেই উত্তম বড়ুয়ার বাড়িতে ওই সময় (২৯ সেপ্টেম্বর) একটি ঢিলও ছোড়া হয়নি কেন? তার আশপাশে আগুন দেয়া হলো, কিন্তু তার বাড়িটি অক্ষত রইল কি ভাবে?
দুষ্প্রাপ্য বুদ্ধমূর্তি ॥ বৌদ্ধদের মধু পূর্ণিমার দিনে ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ১২টার পরে দুষ্কৃতকারীরা এক এক করে ১৯টি বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করে দিল। হাজার বছরের বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ১৯টি উপাসনালয়, পাঁচ শতাধিব বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস ও লুটপাট করা হয়েছে নির্বিচারে। গান পাউডার দিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল ফাটিয়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে ধ্বংস করে দেয়া হয় হাজার বছরের বিশ্বসভ্যতার স্মারক, দু®প্রাপ্য বুদ্ধমূর্তি, বুদ্ধধাতু, হাজার বছরের পুরনো তালপাতায় লেখা পুঁথি, খ্রিস্টপর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের স্মারকসহ বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন। এ সময় লুট করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণের, শ্বেতপাথরের দুষ্প্রাপ্য বুদ্ধমূর্তি। ৬শ’ থেকে ১১শ’ শতকের নির্মিত প্রায় ৪ শতাধিক কাঠের ও পাথরের তৈরি বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। পুড়ে গেছে প্রায় ২ হাজার তাল পাতায় হাতের লেখা পুঁথি। এতে হারিয়ে গেছে ওই জনপদের ইতিহাস।

No comments

Powered by Blogger.