নারী উন্নয়ন নীতিমালা সময়োপযোগী করে শীঘ্রই অনুমোদন- বিশ্ব নারী দিবস উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার শীঘ্রই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতিমালা সময়োপযোগী করে অনুমোদন দেবে।
তিনি সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১০ উদ্বোধনকালে আরও বলেন, নারীর ৰমতায়ন ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার লৰ্যে আমরা শীঘ্রই নারীনীতি সময়োপযোগী করে অনুমোদন দিতে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক যেসব আইন রয়েছে তার সংশোধনী আনতে তাঁর সরকার যথাযথ পদৰেপ নেবে এবং দেশের নারী সমাজের কল্যাণে প্রয়োজন হলে তা বাতিল করা হবে। খবর বাসসর। নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী ও মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রাজিয়া বেগম বক্তৃতা করেন। নারীর সমঅধিকার ও ৰমতায়নের ওপর গুরম্নত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে ৰমতায়নের জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন বাসত্মবমুখী পদৰেপ গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ এবং সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উলেস্নখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় জীবনে নারীর অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে দেশের সংবিধানে নারীর সমঅধিকারের সুস্পষ্ট বিধান রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি আসন ১০ বছরের জন্য সংরৰণ করেছিলেন এবং পরবতর্ীতে এই আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ত্রিশে উন্নীত করা হয়। তিনি আরও বলেন, নারীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার এই আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪৫-এ উন্নীত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে নারী-পুরম্নষ সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেই কেবল ওই দেশটি তার কাঙ্ৰিত সাফল্য অর্জন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে শানত্মির ধর্ম ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী-পুরম্নষের সমঅধিকারের ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাপক জাতীয় উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার নারীদের প্রতি যে কোন ধরনের অবহেলা রোধে বিশেষ গুরম্নত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়ন কর্মকা-ে নারীদের পেছনে রেখে সামগ্রিক উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয়। নারীর প্রতি সহিংসতার কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী এৰেত্রে সকল ধরনের নির্যাতন ও অত্যাচার বন্ধে সরকারী প্রচেষ্টায় সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। নারী ও শিশু পাচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর সরকার এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অব্যাহতভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কেননা, এ ধরনের অপরাধ বন্ধে আঞ্চলিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
শেখ হাসিনা বলেন, নারীরা প্রকৃত শিৰায় শিৰিত এবং আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হলে পুরম্নষের পাশাপাশি তারাও তাদের অধিকার আদায় করতে সৰম হবে। খোদ পরিবারেই নারীর প্রতি বৈষম্য শুরম্ন হয় উলেস্নখ করে শেখ হাসিনা সকলকে বিশেষ করে মায়েদের পুত্রসনত্মানের সঙ্গে তাদের কন্যাসনত্মানের প্রতি আরও বেশি নজর দেয়ার ও যত্নবান হয়ে সমান আচরণ করার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর অগ্রগতি ও তাদের অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২১ সাল নাগাদ একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকার অগ্রসর হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তবে পর্যাপ্ত না হলেও সমাজে নারীর সমঅধিকার অর্জন বাংলাদেশের সাফল্য উলেস্নখ করার মতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীরা বিভিন্ন অফিস ও শিল্প কারখানায় তাদের কর্মৰেত্রে ও পারিবারিক জীবনসহ সমাজের নানা ৰেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।
শেখ হাসিনা সকল অফিস ও কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টারের বিধান রাখার আশ্বাস দেন; যেন কর্মরত নারীরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে এবং তাদের সনত্মানরা সুস্থ থাকে।
কর্মরত নারীরা যাতে তাদের কাজকর্ম অব্যাহত রাখতে এবং আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারে, সে লৰ্যে তিনি তাদের জন্য আবাসস্থল ও অন্যান্য স্থাপনা প্রতিষ্ঠার ৰেত্রে সামর্থ্যবান সকল ব্যক্তির প্রতি সহায়তা করার আহ্বান জানান। দেশের পোশাক খাতের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ খাতে ৮০ ভাগ শ্রমিকই নারী, বর্তমান সরকার তাদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করেছে।
মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, কূটনীতিক ও উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.