গণতন্ত্র ও সংবিধান বিরোধী কর্মকা- প্রতিহত করুন- জেনারেলদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান ও গণতন্ত্রবিরোধী যে কোন কর্মকাণ্ড সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের বিনিময়ে দেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আমি আশা করি, আপনারা সংবিধান ও গণতন্ত্রবিরোধী যে কোন কর্মকাণ্ড সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবেন।’ খবর বাসসর।
তিনি রবিবার সকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদর দফতরের অফিসার্স মেসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সভায় ভাষণকালে সেনাবাহিনীর পিঠে সওয়ার হয়ে কোন স্বার্থান্বেষী মহল যাতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ দৃষ্টি দেয়ারও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণকে নৈতিকতা, সততা এবং কর্তব্যপরায়ণতার উদাহরণ হিসেবে নিজেদের অধঃস্তনদের সামনে উপস্থাপন করে তাদের শ্রদ্ধা ও আনুগত্য অর্জনের পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তিনি অধঃস্তনদের প্রয়োজনীয়তা, আশা-আকাক্সক্ষা ও চিন্তা-ভাবনার দিকেও নজর দেয়ার পরামর্শ দেন।
অনেক সময় কুচক্রী মহল হীন স্বার্থে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেÑ এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অধঃস্তনরা যাতে এ ধরনের বিরূপ প্রপাগাণ্ডার শিকার না হন সেদিকে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’ অধঃস্তনরা যাতে কোন মহলের ‘বিরূপ প্রচারণায়’ বিভ্রান্ত না হন সে বিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কুচক্রী মহল হীনস্বার্থে ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে। তিনি বলেন, পেশাদারিত্বের জন্যই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছে ও দেশের মানুষের অবিচল আস্থা অর্জন করেছে এবং তাঁর সরকার সব কিছুর উর্ধে সেনাবাহিনীর এই পেশাদারিত্ব সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনীয় খসড়া জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ও সেনাবাহিনী ফোর্সেস গোল-২০৩০ নির্ধারণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ঋণচুক্তির আওতায় রাশিয়া হতে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমরাস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে। যা ভবিষ্যতে সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হতে এই স্বল্প সময়ে সেনাবাহিনীর উন্নয়নে যথাসম্ভব সকল বাস্তবমুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যা সামগ্রিকভাবে এদেশের গর্বিত সেনাবাহিনীর সমর শক্তি ও চলাচল ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়নের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন ফরমেশন ট্রেনিং সিস্টেম, আর্মি ট্রেনিং ডকট্রিন প্রণয়ন, নতুন শারীরিক যোগ্যতা পদ্ধতি এবং অনলাইন ও ই-লার্নিং কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মসূচী চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকারের বর্তমান মেয়াদে দেশে-বিদেশে সেনাবাহিনীর যৌথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশিক্ষণ এলাকার সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে চর কেরিং-এর ৯ হাজার একর জমি সেনাবাহিনীকে দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে ফোর্সেস গোল ২০৩০-এর আলোকে রিয়াল এস্টেট মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সিলেটের সালুটিকর ও কক্সবাজারের রামুতে একটি করে পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স্থাপনের জন্য যথাক্রমে ৯২০.৭৮ একর এবং ৬৫৭.১৭ একর জমি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যদের আবাসিক সমস্যা সমাধানে চলতি অর্থবছরেই ৩৬৩ কোটি টাকা পুনঃউপযোজনের মাধ্যমে মোট ৯৭টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০১৫ সালের পরে সেনানিবাসগুলোতে বাসস্থানের ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শত বাধা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে এবং যা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। যদিও বিচারে বাধাদান ও বিচার বন্ধে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টাসহ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে। এজন্য তিনি সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে থানছি ও রুমা ব্রিজ নির্মাণ, বনানী ওভারপাস প্রকল্প এবং বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের জন্য সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ও স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনকে ধন্যবাদ জানান।
এ সকল প্রকল্পের কাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশবাসীর আস্থা ও প্রশংসা কুড়িয়েছে- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট জংশনে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজও স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনকে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞে শহীদ ৫৭ জন প্রতিশ্রুতিশীল সেনা কর্মকর্তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রচলিত আইনে হওয়ায় সেনাবাহিনীর প্রতি ন্যায়পরায়ণতার প্রশ্নে জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সেদিন কোনরকম হঠকারিতার পথে না গিয়ে বিরল ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়েছিল। এতে নিয়মানুবর্তী বাহিনী হিসেবে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশ্নাতীত নির্ভরযোগ্যতা প্রতিপন্ন হয়েছে। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানও সুসংহত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ মোঃ ওয়াহিদ উজ জামান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান, প্রতিরক্ষা সচিব খন্দকার মোঃ আসাদুজ্জামান ও প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.