দুই বাংলার কবিদের কবিতাবাসর ঢাবির মজুমদার মিলনায়তনে- সংস্কৃতি সংবাদ

 এ আকাশ আমার পিতা/মাটি আমার মা এটি টোকন ঠাকুরের ভূগোল মাস্টার কবিতার দুটি লাইন। রবিবার কবি এ কবিতাটি পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে।
শীতের বিকেলে এখানে বসেছিল দুই বাংলার ৩৯ কবিকে নিয়ে অনন্য এক আয়োজন। সে আয়োজনে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কবিরা পাঠ করেন স্বরচিত কবিতা। দুই বঙ্গের কবিদের কবিতা পাঠের এ আসরের শিরোনাম ছিল ভারত-বাংলাদেশ কবিতাবাসর। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও জাতীয় কবিতা পরিষদ।
সদ্যসমাপ্ত জাতীয় কবিতা উৎসব উপলক্ষে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন পশ্চিমবঙ্গের অনেক কবি। গত ক’দিন ধরেই বাংলার কবিদের সঙ্গে চলছে তাদের ভাব বিনিময়। কবিতাবাসর নামের আয়োজনটি যেন বাড়িয়ে দিল দুই দেশের কবিদের সম্পর্কের বন্ধন। সবমিলিয়ে দুই দেশের কবিদের মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল কবিতা পাঠের এ আসরটি। তাঁদের কবিতায় উঠে এসেছিল নানা বিষয়। শব্দের শিল্পিত উচ্চারণে মুখরিত হয়েছিল মিলনায়তন। আর শ্রোতারা হয়েছিল বিমোহিত। কবিতা পাঠের এ আসরের উদ্বোধন করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, সুন্দর সময় ও সুন্দর পরিবেশে আজ আমরা দুই দেশের কবিরা মিলিত হয়েছি। এ আয়োজনে শুধুই আমরা কবিদের উচ্চারণ শুনব। সব সময় গায়ক-বাদকদের নিয়ে নানা আয়োজন হলেও কবিদের নিয়ে তেমনটা হয় না। ভাষা যে কতটা শক্তিশালী তা প্রমাণিত হচ্ছে এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে । শুধুমাত্র একই ভাষার কারণে সীমান্তের এপার-ওপার থেকে আজ আমরা এক হয়েছি। ভারতীয় হাইকমিশনের সংস্কৃতি সচিব অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের স্বাগত বক্তব্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশেষ এক সময়ে দুই বাংলার কবিদের এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একদিকে আছে ভাষা দিবস অন্যদিকে যোগ হয়েছে কবিগুরুর নোবেলপ্রাপ্তির শতবর্ষ পূতি। তবে এ আনন্দ ও গর্বের সঙ্গে আছে বেদনাও। সম্প্রতি হারিয়েছি আমরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও হুমায়ূন আহমেদের মতো কিংবদন্তি দুই লেখককে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি থেকে আবৃত্তির মাধ্যমে কবিতা পাঠের আসরের সূচনা হয়। বাংলা ও ইংরেজীতে আবৃত্তি করেন দুই বাকশিল্পী শাহাদাত হোসেন নীপু ও ডালিয়া আহমেদ। এরপর শুরু হয় দুই দেশের প্রথিতযশা কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের পর্ব। ধারাবাহিকভাবে উচ্চারিত হয় দুই দেশের কবিদের বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর সব কবিতা। কবিতা পাঠের এ আসরে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন একুশ কবি। তারা হলেন সৈয়দ শামসুল হক, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, মুহম্মদ নূরুল হুদা, অসীম সাহা, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মুস্তাফা মজিদ, মাকিদ হায়দার, কাজী রোজী, শিহাব সরকার, দিলারা হাফিজ, মুহম্মদ সামাদ, মোহাম্মদ সাদিক, হারিসুল হক, তারিক সুজাত, টোকন ঠাকুর, শাহনাজ মুন্নী, আসলাম সানী ও আয়াত আলী। আর ভারতের পক্ষে কবিতা পাঠের আসরে অংশ নেয়া আঠার কবি হলেনÑ আশিস স্যানাল, উত্তম দাস, বীথি চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রকান্ত মোরাসিং, পীযূষ রাউত, কৃষ্ণা বসু, মৃণাল বসু চৌধুরী, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, স্বপন সেনগুপ্ত, পঙ্কজ সাহা, শ্যামলকান্তি দাশ, সুবোধ সরকার, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, পিনাকী ঠাকুর, শিবাশিস মুখোপাধ্যায়, প্রবালকুমার বসু, অংশুমান কর ও সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
মানবতাবিরোধীদের বিচারের দাবিতে উত্তরবংশের মঞ্চায়ন ॥ দেশে এখন মানবতাবিরোধী তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। আর পুরো দেশবাসীর মতোই এ দাবিতে সমভাবে সোচ্চার সংস্কৃতি অঙ্গনের কর্মীরা। সে প্রেক্ষাপটে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি নিয়ে নির্মিত হয়েছে কণ্ঠশীলনের কাব্যনাটক উত্তরবংশ। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের রচনা থেকে কাব্যনাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম সারোয়ার। রবিবার সন্ধ্যায় মঞ্চায়িত শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির পঞ্চম প্রদর্শনী হয়।
স্বাধীনতার উত্তর প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার বর্ণনা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে উপজীব্য করে এগিয়েছে নাটকের কাহিনী। মূলত তিনটি চরিত্রকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে কাহিনী। এক নাট্যকারের মাধ্যমে কাহিনীর সূত্রপাত। নাট্যকার মুক্তিযুদ্ধে তার স্ত্রীর আর্মি ক্যাম্পে আটকে থাকা নিয়ে নাটক রচনা করতে গিয়ে বার বার আটকে যাচ্ছেন। ঘুরেফিরে আসছে তাঁর স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাটি। এদিকে নাট্যকারের মেয়ে জানে না, কেন তার মা আত্মহত্যা করেছিল। অন্যদিকে এক রাজনীতিবিদ নাট্যকারকে অনবরত তাগাদা দিতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের গণজাগরণমূলক নাটক লেখার জন্য।
নাটকের মূল তিনটি চরিত্রে রূপদান করেছেন ওমর ফারুক ঈমন, জে এম মারুফ সিদ্দিকী ও রাখী ঘোষ। এছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রইস উল ইসলাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, আব্দুর রাজ্জাক, শফিক সিদ্দিকী, সালাম খোকন, আল আসাদ সমু, উম্মে তাসনুভা তানিল, রাজিয়া সুলতানা মুক্তা, তামান্না আক্তার, মাহমুদুল হাসান ও এম জেড রবিন।

No comments

Powered by Blogger.