ব্র্যান্ডধারী ব্যবসায়ীরাও নানা কৌশলে ভোক্তাকে ঠকাচ্ছে!

শুধু সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। রীতিমতো ওজনে কম দিয়েও কোটি কোটি টাকার মুনাফ লুটে নিচ্ছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। উভয় ৰেত্রে প্রতারণার শিকার হচ্ছে ভোক্তারা। এসব ব্যবসায়ে জড়িত রয়েছে দেশের ব্র্যান্ডধারী ব্যবসায়ীরা। আবার ওজনে কম দেয়ার পাশাপাশি বোতলের গায়ে লেখা খুচরা মূল্যের ওপর আলাদা লেবেল লাগিয়ে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানো হচ্ছে। পণ্যের দাম বাড়ানোর ৰেত্রে আইনের কঠোর বিধিমালা থাকলেও এ ৰেত্রে তা মানা হচ্ছে না। এ ধরনের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার বিএসটিআইয়ের ভেজালবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ও মেঘনা গ্রম্নপের তানভীর অয়েল লিমিটেডের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়েরসহ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দু'টি তাদের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ওজনে কম দিয়ে আসছিল। এ ছাড়া মেঘনা গ্রম্নপের ফ্রেশ দুধ, ফ্রেশ চা এবং ফ্রেশ সরিষার তেলসহ মোড়কজাত পণ্যের গায়ে খুচরা মূল্য না লেখার কারণে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব পণ্যের মান পরীৰার জন্য স্যাম্পলও সিজ করা হয়।
সকালে র্যাব, পুলিশ ও বিএসটিআইয়ের সমন্বিত একটি টিম তেজগাঁওয়ের এডিবল অয়েল লিমিটেডের রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের গুদামে অভিযান চালায়। অভিযানকালে বিএসটিআইয়ের নিজস্ব মাপনী দিয়ে পরীৰা করে দেখা যায়, রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের প্রতি ৫ লিটার বোতলে ৮০ মিলিলিটার তেল কম দিয়ে বোতলজাত করা। বোতলের গায়ে খুচরা মূল্য লেখা ছিল ৪শ' ৪০ টাকা। গত বছর ডিসেম্বরের ৫ তারিখে এ খুচরা মূল্য লেখা হয়। অথচ দেড় মাসের ব্যবধানে খুচরা মূল্যের গায়ের ওপর আলাদা লেবেল সেঁটে দাম লেখা হয়েছে ৪শ' ৬৪ টাকা। এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত সরিষার তেলের গায়েও কোন খুচরা মূল্য লেখা ছিল না; যা বিএসটিআইয়ের আইনের পরিপন্থী।
একই ধরনের অভিযোগ মিলল ফ্রেশ সয়াবিনের ৰেত্রে। বিএসটিআইয়ের মাপনী দিয়ে পরীৰা করে দেখা যায়, মেঘনা গ্রম্নপের তানভীর অয়েল লিমিটেডের বোতলজাত করা ৫ লিটার সয়াবিন তেলে ৫০ মিলিলিটার কম দেয়া হয়েছে। আর এভাবে কম দেয়ার ফলে প্রতিবছর এ প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার ৪শ' টাকার তেল কম দিচ্ছে বলে বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা আবু সাঈদ জানান। এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত চা, সরিষার তেল ও গুঁড়া দুধে খুচরা মূল্য লেখা নেই। ফলে ইচ্ছামতো তারা তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
ওজনে কম দেয়া, পণ্যের গায়ে খুচরা মূল্য না লেখা ও আলাদা লেবেল তৈরি করে পণ্যের গায়ে লাগানোর অভিযোগে আদালত উভয় প্রতিষ্ঠানের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের ও তিন লাখ টাকা করে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করে। তাৎৰণিকভাবে টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ফ্রেশ সয়াবিনের গুদাম ইনচার্জকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় আদালত। পরে বেলা সাড়ে ৪টার দিকে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রাশিদুল আহসান আদালতের কাছে টাকা পরিশোধ করে গ্রেফতারকৃতকে ছাড়িয়ে নেয়। পাশাপাশি দ্বিতীয়বার এ ধরনের অপরাধ না করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আল আমিন প্রতিষ্ঠান দুটিকে সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে সমসত্ম পণ্য সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করে দেয়া হবে। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করে দেয়ার হুমকি দেন তিনি। তিনি বলেন, নিয়ম থাকলেও পণ্যের গায়ে খুচরা মূল্য না লিখে এসব ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো দাম বৃদ্ধির সুযোগ করে রাখে। বাজার বুঝে এরা দাম বাড়িয়ে দেয়; যা ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থী। আইনে ইচ্ছামতো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নেই। কোন মোড়কজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে হলে দু'মাস আগে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে। বিএসটিআইয়ের পরিচালককেও এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে। বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা একেএম হানিফ জানান, মোড়কজাত পণ্যের গায়ে খুচরা মূল্য লেখার পাশাপাশি আলাদা লেবেলের মাধ্যমে এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ৫০ টাকা মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ফ্রেশ সয়াবিন তেলের সেলস ম্যানেজার রাশিদুল আহসান বলেন, কৌশলগত কারণে পণ্যের গায়ে খুচরা মূল্য লেখা হয় না। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে এটা করতে হয়। শুধু আমরা তো এ কাজ করছি না, দেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান এ আইন মেনে চলছে না। তিনি বলেন, তেলের ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি প্রডাকশন প্রসেসে ভুল হতে পারে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে কম দেয়া হয় না।

No comments

Powered by Blogger.